দেহঘড়ি পর্ব-২১
‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে রয়েছে স্বাস্থ্যখাতের একটি সুখবর, স্বাস্থ্য বুলেটিন, স্বাস্থ্য বিষয়ক ভুল ধারণা নিয়ে আয়োজন ‘ভুলের ভুবনে বাস’, সাক্ষাৎকারভিত্তিক আয়োজন ‘আপনার ডাক্তার’, এবং প্রাকৃতিকভাবে রোগ প্রতিরোধ ও রোগ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আলোচনা ‘ভালো থাকার আছে উপায়’।
## স্বাস্থ্য প্রতিবেদন
করোনার ভারতীয় ধরন নিয়ে বাংলাদেশিদের আশঙ্কা
ছবি: রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
বাংলাদেশে সংক্রমিত হওয়া রোগীদের ৮০ শতাংশ নমুনায় ভারতীয় ধরন পাওয়ার খবর দিয়েছে দেশটির রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত একটি উপাত্ত প্রকাশ করে। এদিকে দেশের উত্তর পশ্চিমের সীমান্তবর্তী মহানগরী রাজশাহীতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই ১০ থেকে ১২ জন রোগী মৃত্যুবরণ করছেন। বিস্তারিত হাবিবুর রহমান অভির প্রতিবেদনে।
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী নগরী রাজশাহীর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনা রোগী সামাল দিতে ঠিক এই মুহুর্তে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। হাসপাতালটির করোনা ইউনিটটি করা হয়েছে ২৭০ জন রোগীর জন্য কিন্তু সবশেষ তথ্য অনুযায়ী এখানে ভর্তি আছেন ৩০০ জনেরও বেশি রোগী।
মূলত ঈদের পর থেকেই বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী উত্তর-পশ্চিমের জেলাগুলোতে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ব্যাপকভাবে বাড়তে থাকে। রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, গেল মাসের ২৪ তারিখ থেকে এ পর্যন্ত হাসপাতালটির করোনা ইউনিউটে গড়ে প্রতিদিন মৃত্যু হচ্ছে ১২ থেকে ১৪ জনের । এর মধ্যে গেল ২৪ ঘন্টায় এই ইউনিটে মারা গেছেন ১৫ জন রোগী। রাজশাহী মেডিকেল কলেজের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী মনে করেন, সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আসা রোগীদেরই বেশি মৃত্যু হচ্ছে।
ছবি: ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী, রাজশাহী মেডিকেল কলেজের পরিচালক
এর মধ্যেই বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের ৮০ শতাংশ নমুনায় ভারতীয় ধরন বা ডেলটা ভেরিয়েন্ট পাওয়া যাচ্ছে জানিয়েছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআর। প্রতিষ্ঠানটি মোট ৫০টি করোনা পজিটিভি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স করে। যার মধ্যে ৪০টি ভারতীয় ভেরিয়েন্ট, ৮টি আফ্রিকান ভেরিয়েন্ট ও একটি অজানা ভেরিয়েন্ট পায়। এর মধ্যে চাপাইনবাবগঞ্জে ১৬টির মধ্যে ১৫টি, গোপালগঞ্জে ১১টার মধ্যে ৭টা এবং খুলনা, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, ঝিনাইদহ থেকে আসা প্রতিটি নমুনায় ভারতীয় ভেরিয়েন্ট পাওয়া যাচ্ছে। আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীর চীন আন্তর্জাতিক বেতারকে বলেন, এমন অবস্থায় কঠোরভাবে সীমান্ত বন্ধ আর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই।
আইইডিসিআর বলছে, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমিত রোগীদের মধ্যে ১৪ জনের বিদেশে যাওয়া বা আগত রোগীর সংষ্পর্শে আসার কোনো তথ্যও পাওয়া যায়নি। এখান থেকে ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশেও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সামাজিক সংক্রমণ বিদ্যমান।
##হেল্থ বুলেটিন
চীনের সিনোভ্যাক টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিলো বাংলাদেশ
চীনের টিকা সিনোভ্যাকের জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশের ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। গত রোববার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান অনুমোদনে স্বাক্ষর করেন। গণমাধ্যমে পাঠানো ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের এ সংক্রান্ত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সিনোভ্যাকের টিকার দুই ডোজ নিতে হবে। দুই থেকে চার সপ্তাহ ব্যবধানে এই দুই ডোজ টিকা নেওয়া যাবে। টিকা সংরক্ষণ করতে হবে ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়। এর আগে জরুরি ব্যবহারের জন্য চীনের আরেক টিকা সিনোফার্মা ছাড়াও অ্যাস্ট্রাজেনেকা, স্পুতনিক, ও ফাইজারের টিকা অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ।
রোববার নাগাদ বাংলাদেশকে উপহারের আরও ৬ লাখ টিকা দিচ্ছে চীন
আগামী ১৩ জুনের মধ্যে উপহার হিসেবে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় দফায় আরও ছয় লাখ টিকা দেওয়ার আগ্রহ জানিয়েছে চীন। বাংলাদেশে নিযুক্ত চীন দূতাবাসের উপ-রাষ্ট্রদূত হুয়ালং ইয়ান এ কথা জানান। এর আগে গত ২০ মে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে ফোনালাপের সময় উপহার হিসেবে আরও ছয় লাখ টিকা দেওয়ার কথা জানান। গত মাসে ৫ লাখ টিকা উপহার হিসেবে বাংলাদেশকে দিয়েছে চীন।
এবার শিশুদেরও করোনা টিকা দিচ্ছে চীন
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় শিশুদেরও জরুরি টিকা কার্যক্রমের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চীন। তিন থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদেরও করোনা ভাইরাসের টিকা দেওয়া হবে এ কার্যক্রমের আওতায়। এর আগে টিকা গ্রহণের সর্বনিম্ন বয়সসীমা ১৮ রেখেছিল চীন সরকার। রোববার জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের উপমন্ত্রী চেং ইশিন চায়না গ্লোবাল টেলিভিশন নেটওয়ার্ককে একথা জানান। গেল বছরের জুলাই মাসে চীনের হ্যন্যান প্রদেশে সিনোফার্মার তৈরি টিকার প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু হয়। এটি শেষ হওয়ার পরপরই আরব আমিরাতে ১৮ থেকে ৫৯ বছর বয়সীদের ওপর শুরু হয় তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল বা পরীক্ষামূলক ব্যবহার।
বিশ্বে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ১৭ কোটি ছাড়িয়েছে
বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা সাড়ে ১৭ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। এই মহামারিতে এখন পর্যন্ত পৌনে ৩৮ লাখ মানুষ মারা গেছে। করোনা থেকে সুস্থ হয়েছে প্রায় ১৬ কোটি। আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটার্সে এই তথ্য পাওয়া গেছে। প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর ২০২০ সালের ১১ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনাকে মহামারি ঘোষণা করে। এর আগে গত বছরের ২০ জানুয়ারি জরুরি পরিস্থিতি ঘোষণা করে ডব্লিউএইচও। সবচেয়ে বেশি করোনা শনাক্তের তালিকায় এক নম্বরে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তালিকায় দুই ও তিন নম্বরে অবস্থান করছে যথাক্রমে ভারত ও ব্রাজিল। এই তালিকায় একধাপ এগিয়ে বর্তমানে ৩২ নম্বরে অবস্থান করছে বাংলাদেশ।
৪০টি দেশে করোনা টিকা রফতানি করেছে চীন
করোনাভাইরাস মোকাবেলার এখন পর্যন্ত বিশ্বের ৪০টি দেশে টিকা রফতানি করেছে চীন। এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থা এখন পর্যন্ত চীনের দু'টি টিকার ব্যবহারের অনুমোদন দিলেও বর্তমানে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে আছে আরও ২১টি টিকা। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বিভাগের কর্মকর্তা চিয়ান ছুন ইং জানান, রফতানি ছাড়াও করোনা মোকাবিলায় সহায়তা হিসেবে বিশ্বের ৮৮টি দেশ ও চারটি আন্তর্জাতিক সংস্থাকে করোনা টিকা সহায়তা দিয়েছে চীন। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনার টিকাসহ প্রায় ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের ওষুধ রফতানি করেছে চীন। - তানজিদ/রহমান
## ভুলের ভুবনে বাস
বুকের দুধ খাওয়ানো নিয়ে এসব ভুল ধারণা অতি প্রাচীন
সন্তানদের বুকের দুধ খাওয়ানো নিয়ে অনেক কুসংস্কার ও ভুল ধারণা রয়েছে, যেগুলো যুগ যুগ ধরে মানুষ বিশ্বাস করে আসছে। তাই এটা আশ্চর্যের বিষয় নয় যে, অনেক নতুন মা এখনও সেসব ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে থাকবেন। আজ আমরা বুকের দুধ খাওয়ানো সম্পর্কে প্রচলিত কিছু সাধারণ ভুল ধারণা খণ্ডন করবো।
ভুল ধারণা: বুকের দুধ খাওয়ালে ব্যাথা হয়!
প্রকৃত সত্য: বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করার প্রথম কয়েক দিন মাঝে মাঝে কষ্টদায়ক ও অস্বস্তিকর অনুভূতি হতে পারে। তবে এটা কখনও যন্ত্রণাপূর্ণ হবে না এবং অস্বস্তিকর অবস্থা বেশি সময়ের জন্য স্থায়ী হবে না। যদি কোনও মা ব্যথার কারণে বুকের দুধ খাওয়াতে ভয় পান, তবে সেক্ষেত্রে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। যদি বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় নিয়মিত ব্যথা অনুভূত হয়, তাহলে শিশু হয়তো খুব খারাপভাবে স্তন গ্রহণ করছে বা মা কোনও সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন।
ভুল ধারণা: বুকের দুধ খাওয়ানোর কালে শুধু নরম খাবার গ্রহণ করা উচিৎ!
প্রকৃত সত্য: এই ভুল ধারণাটি এরকম চিন্তা থেকে উদ্ভূত হয়েছে যে, বুকের দুধের মাধ্যমে মশলাদার ও শক্তিশালী স্বাদযুক্ত খাবারগুলো স্তনগ্রহণকারী শিশুদের মধ্যে ছড়িয়ে যায় এবং শিশুর দৈহিক বিপর্যয় ঘটাতে পারে। কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, বুকের দুধ খাওয়ানোর সময়কালে মা যা খেতে চান, সেটা খেতে পারবেন এবং সেটা খাওয়া উচিতও। তবে কয়েকটি গবেষণার তথ্য বলছে, যে সব শিশু গর্ভে থাকা অবস্থায় বা নার্সিংয়ের সময় বিভিন্ন স্বাদের সংস্পর্শে এসেছে, তাদের দুধ ছাড়ানোর সময় সেই স্বাদটি বেশি পছন্দ করার সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং পরবর্তীতে নতুন খাবারের প্রতি অনিচ্ছা এড়াতে মায়েদের খাবারে মশলা যুক্ত করা উচিৎ।
ভুল ধারণা: দুধ খাওয়ানোর আগে মায়ের স্তনবৃন্ত শক্ত করার দরকার!
প্রকৃত সত্য: এমন ধারণার বশবর্তী হয়ে থাকলে এখনই তা বন্ধ করুন! বুকের দুধ খাওয়ানোর আগে স্তনবৃন্ত কোনওভাবেই শক্ত করার দরকার নেই। আপনি যা করতে পারেন তা হলো অন্য কোন উপায়ে দুধ খাওয়ানোর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে পারেন। কিছু মা দেখতে পান যে, স্তনবৃন্ত অঞ্চল সাবান দিয়ে ধুলে স্থানটি খসখসে হতে পারে। কেবল গরম জল দিয়ে ধোয়ার মাধ্যমে সংবেদনশীল ত্বককে ফাটল থেকে রক্ষা করা যায়। যে মায়েদের স্তনবৃন্ত চেপ্টা বা অভ্যন্তরস্থ, উপযুক্ত উপায়ে শিশুকের দুধ খাওয়ানোর কৌশল জানার জন্য তাদের উচিৎ ল্যাকটেশন কনসালটেন্টদের পরামর্শ নেওয়া।
ভুল ধারণা: মায়ের অসুস্থ্ অবস্থায় বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করে দেওয়া উচিত!
প্রকৃত সত্য: যদি মায়ের ঠাণ্ডা, জ্বর বা অন্য কোনও ছোট ভাইরাসজনিত সমস্যা হয়ে থাকে তবে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো অব্যাহত রাখা উচিৎ। বুকের দুধ সন্তানকে অসুস্থতার বিরুদ্ধে সবচেয়ে ভাল সুরক্ষা প্রদান করে। এতে যে প্রতিরক্ষামূলক অ্যান্টিবডিগুলো থাকে সেগুলো শিশুর রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বিকাশে, সংক্রমণের সাথে লড়াইয়ে এবং অসুস্থতা থেকে মুক্ত করতে সহায়তা করে। তবে মায়ের যদি কোনও সংক্রামক ব্যাধি থাকে এবং উপসর্গগুলো প্রকাশিত আগে শিশু সেটার সংস্পর্শে এসে যায়, তবে তাতে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই নিয়মিত হাত ধোয়া, শিশুর কাছে কাশি ও হাঁচি দেওয়া এড়ানো এবং চুমু খাওয়া কয়েক দিনের জন্য বন্ধ করে রাখা উচিৎ।
ভুল ধারণা: বুকের দুধ খাওয়ানো জন্ম নিয়ন্ত্রণের কার্যকর পদ্ধতি!
প্রকৃত সত্য: যদি সন্তান জন্মদানের পর কোনও মা শারীরিক সম্পর্ক অব্যাহত থাকেন, তবে গর্ভবতী হওয়ার পুরোপুরি সম্ভব থাকে সেক্ষেত্রে তিনি শিশুকে দুধ পান করান আর না করান সেটা বিষয় নয়। তবে, মা যদি বুকের দুধ খাওয়ানোর প্রথম ছয় মাসের মধ্যে থাকেন তবে গর্ভধারণের সম্ভাবনা অনেক কম থাকে। কারণ তখনও মাসিক ঋতুচক্র ফিরে আসেনি। তবে যদি না া আরেকটি শিশুর জন্য প্রস্তুত থাকেন, তাহলে তার প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে জন্মনিয়ন্ত্রণের অন্যান্য বিকল্পগুলো নিয়ে আলোচনা করা উচিত।
ভুল ধারণা: শিশুকে বুকের দুধ না খাওয়ালে আপনি ভাল মা নন!
প্রকৃত সত্য: যদিও বুকের দুধ খাওয়ানোর মাধ্যমে মা ও শিশু উভয়ের জন্যই বিস্ময়কর উপকার হয়, তবে কিছু মা বিভিন্ন কারণে বুকের দুধ পান করাতে অক্ষম। তাই শিশুকে বুকের দুধ না খাওয়ালে বা পুরোপুরিভাবে ফর্মুলার উপর নির্ভরশীল করলেই কাউকে খারাপ মা মনে করা উচিৎ নয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আপনার শিশুকে এমন পুষ্টিকর খাবার প্রদান করা, যা তাকে বড় ও শক্তিশালী হতে সহায়তা করবে এবং আপনার পক্ষে তাকে যতটুকু ভালবাসা দেওয়া সম্ভব তা দিয়ে তার সঙ্গে যুক্ত থাকুন। - রহমান
## আপনার ডাক্তার
খাৎনা মুসলমান, ইহুদি ও আরও কয়েকটি ধর্মাবলম্বী পুরুষদের মধ্যে প্রচলিত একটি ধর্মীয় প্রথা। পৃথিবীর প্রায় ৩০ শতাংশ পুরুষের খাৎনা করা হয়, যাদের শতকরা ৬৮ ভাগই মুসলমান। খাৎনার রয়েছে নানা শারীরিক উপকারিতা, যা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে। অস্ট্রেলীয় মেডিক্যাল সায়েন্সের অধ্যাপক ডক্টর ব্রায়ান মরিসের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব বালকের খাৎনা করা হয় না, তাদের কিডনি, মূত্রথলি ও মূত্রনালির সংক্রমণ অন্যদের তুলনায় চার থেকে ১০ গুণ বেশি হয়। ইউরোলজি জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খাৎনা মরণব্যাধি এইডস ও যৌনরোগ প্রতিরোধে সহায়ক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বলছে, পুরুষের খাৎনা এইচআইভি ও এইডস প্রতিরোধে একটি কার্যকর ভূমিকা রাখে। আফ্রিকার যেসব দেশে খাৎনার হার বেশি, সেসব দেশে এইডসের হার তুলনামূলকভাবে কম। খাৎনায় এখন প্রচলিত হয়েছে আধুনিক পদ্ধতি। তবে বাংলাদেশে বেশিরভাগ মানুষ এখনও খাৎনা করায় অস্বাস্থ্যকর ও ঝুঁকিপূর্ণ সনাতন পদ্ধতিতে। এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হন বিশিষ্ট শল্যচিকিৎসক ডাক্তার মো. আরিফ হোসেন। শল্যচিকিৎসায় এফসিপিএস, জনাব আরিফ কর্মরত কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের সার্জারি বিভাগের একজন সহকারী অধ্যাপক হিসাবে।
## ভালো থাকার আছে উপায়
হাঁপানি নিয়ন্ত্রণ করুন ইনহেলার ছাড়াই
সারাবিশ্বে ২০ কোটি মানুষ অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগে আক্রান্ত। শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১ কোটি ৮০ লাখেরও বেশি মানুষ হাঁপানি সমস্যা নিয়ে বসবাস করছে আর বাংলাদেশে এ সংখ্যা ৭০ লাখের বেশি। হাঁপানি ফুসফুসের এক সমস্যা, যেটা হলে ফুসফুসে বায়ুগমনের পথ সংকুচিত হয়ে পড়ে, যার ফলে শ্বাস-প্রঃশাসের সময় সাঁ সাঁ শব্দ হয়, শ্বাসযন্ত্র দুর্বলভাবে কাজ করা এবং কখনও কখনও মৃত্যুও ঘটায়।
সামান্য কাশি, কিছুটা অস্বস্তি হিসেবে এটা শুরু হতে পারে এবং এটা বুঝে ওঠার আগেই আপনি শ্বাস নেওয়ার জন্য হাঁসফাঁস করতে থাকবেন, প্রতিটি শ্বাসে সাঁ সাঁ শব্দ শুনতে থাকবেন এবং আতঙ্কিত হতে শুরু করবেন।
প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা রীতি অনুযায়ী ফুসফুসের বায়ুগমনের পথে প্রদাহ বা তীব্র আক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করার জন্য রোগীদেরকে শ্বাস ও মুখে ওষুধ সেবনের মাধ্যমে চিকিত্সা দেওয়া হয়। ঘন ঘন আক্রমণ এবং হাসপাতালে যাওয়া এড়াতে অনেক সময় এগুলোর প্রয়োজন হয়। তবে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এটাও বলে যে, জীবনযাত্রার পরিবর্তন, প্রাকৃতিক খাবার গ্রহণ এবং সমন্বিত চিকিত্সা শুধুমাত্র হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে না; বরং মারাত্মক আক্রমণ হ্রাস করতেও সহায়তা করতে পারে। আসুন জেনে নিই এমন কিছু পদ্ধতি:
আদা: বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত যে, সাধারণভাবে ব্যবহৃত হাঁপানির ওষুধ যখন গ্রহণ করা হয়, তখন তার সঙ্গে আদা গ্রহণ করলে শ্বাসনালি আরও ভালোভাবে প্রসারিত। এছাড়া ফুসফুসে বায়ুগমনের পথের মসৃণ পেশীগুলোর চিকিত্সায় আদার যৌগ ব্যবহার করলে, সেগুলো বায়ুগমনের পথের চারপাশের পেশীগুলোর সংকোচন হ্রাস করে। এর ফলে হাঁপানি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড: এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব ব্যক্তি আহারে উচ্চমাত্রার ওমেগা-থ্রি গ্রহণ করেন, তারা রোগ নিরাময়কারী ওষুধের উপর অল্প নির্ভর করেই উন্নত জীবনযাপন করতে পারেন। আপনার খাদ্যে ওমেগা-থ্রি যুক্ত করার সহজ উপায়গুলোর অন্যতম হলো দ্রুত নাস্তার জন্য কারব চিপস ও কিসমিসের সাথে মিশ্রিত করে আখরোট গ্রহণ করা। এছাড়া স্যামন ও কুমড়োর বীজে ভালো ওমেগা-থ্রি পাওয়া যায়।
যোগব্যায়াম: যোগব্যায়াম থেকে আপনি অন্যান্য সুফল না পেয়েও থাকতে পারেন, তবে হাঁপানির ক্ষেত্রে সেটা অব্যর্থভাবেই পাবেন। গবেষণায় এটা প্রমাণিত হয়েছে, যোগ ব্যায়ামে যে রকমভাবে করা হয়, সেরকমভাবে গভীর শ্বাসপ্রশাস গ্রহণ ও নির্গমণ করলে খুব দ্রুত ঘন ঘন শ্বাস নেওয়া কমে। এর ফলে হাঁপানি রোগী সুফল পায় এবং হাঁপানির উপসর্গ কমে। এছাড়া নিয়মিত যোগব্যায়াম গভীর ও দীর্ঘায়িত শ্বাস-প্রঃশ্বাসে মনোনিবেশ করতে সহায়তা করে, যা হাঁপানি আক্রমণের সময় শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী হয়।
ভিটামিন-সি: যদি আপনি হাঁপানি রোগী হন, তাহলে গবেষণাগুলো ভিটামিন-সিসমৃদ্ধ অর্থাৎ সাইট্রাস ফলগুলোর সদ্ব্যবহারের জন্য আরেকটি সরস কারণ খুঁজে পেয়েছে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, উচ্চ ভিটামিন-সিযুক্ত খাদ্য শিশুদের মধ্যে সাঁ সাঁ শব্দ করে শ্বাসগ্রহণ হ্রাস করে। যদিও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য এখনো আরও অনেক তথ্য-উপাত্তের প্রয়োজন রয়েছে, তবে অতিরিক্ত কিছু কমলা, আঙ্গুর লেবু বা কিউই ফলের টুকরো আপনার আহারে যুক্ত করলে তা ভালো উপকার করবে আপনার।
ভিটামিন বি-সিক্স: হাঁপানির রোগী, বিশেষ করে স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধের ওপর যারা নির্ভরশীল, তাদের জন্য পাইরিডক্সিন নামে পরিচিত ভিটামিন বি-সিক্স বিশেষভাবে উপকারী। বি-সিক্স গ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে সকালে শ্বাসগ্রহণ ভাল অবস্থায় থাকে। যে সব ব্যক্তির মধ্যে বি-সিক্সের উপস্থিতি কম, সম্পূরক ওষুধ তাদের শ্বাসপ্রশাসে কষ্ট কমায়। কোনও কোনও রোগীর ক্ষেত্রে অবশ্য তাত্পর্যপূর্ণ পার্থক্য দেখা যায়নি গবেষণায়। সুতরাং শুরু করার আগে নিজের চিকিত্সকের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করা উচিত।
কল্টফুটস (বাটারবার): এই ঔষধি গাছটি এশিয়া ও ইউরোপে বহু বছর ধরে হাঁপানির চিকিত্সার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটা একদিকে শরীরে প্রদাহের বিরুদ্ধে কাজ করে এবং অন্যদিকে শ্বাসনালির পেশীগুলোর সংকোচন কমায়। ফলে সাঁ সাঁ শব্দ করে শ্বাসগ্রহণ এবং তীব্র আক্রমণ থেকে বাঁচা যায়। - রহমান