প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের ছিং হাই সফর
2021-06-09 13:54:17

গত সোমবার চীনের প্রেসিডেন্ট  সি চিন পিং দেশটির ছিং হাই প্রদেশ পরিদর্শন করেছেন।  এদিন বিকেলে তিনি প্রদেশটির রাজধানী সি নিংয়েতে অবস্থিত  একটি কার্পেট কারখানায় যান। তাতে স্থানীয় কাঁচামাল দিয়ে কাপের্ট  তৈরির খোঁজ-খবর নেন। তারপর তিনি একটি কমিউনিটিতে গিয়ে স্থানীয়দের জীবনযাপন সম্পর্কে জানতে চান।

আজ আমি ছিং হাই প্রদেশ সম্পর্কে আপনাদেরকে একটু জানাব। ছিং হাই প্রদেশটি ছিংহাই-তিব্বত মালভূমির পশ্চাদ্ভূমিতে অবস্থিত। হুয়াং হ্য, ছাং চিয়াং ও লেনচাং—এই তিনটি বড় নদীর উত্সস্থল এটি।

ছিং হাই প্রদেশে প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমাণ ১৮.৩৯ ট্রিলিয়ান  ইউয়ান এবং প্রতি বছর নদীর উচ্চ অববাহিকা ৬,০০০ কোটি ঘন মিটার পরিষ্কার পানি সরবরাহ করে। প্রদেশে জলাভূমির আয়তন ৮১৪৩.৬ হাজার হেক্টর, তা চীনে বৃহত্তম। 

তিব্বতি অ্যান্টেলোপ চীনের প্রথম শ্রেণীর জাতীয় সংরক্ষিত পশু। ছিংহাইতে তাদের সংখা ২০ হাজার থেকে বেড়ে ৭০ হাজারটিতে দাঁড়িয়েছে। তুষার চিতার সংখা ১৮০০টি। ২০২০ সালের শেষ দিকে ছিংহাই প্রদেশের পরিষ্কার জ্বালানি শিল্প দ্রুত উন্নয়ন হয়। সেসময়ে প্রদেশের বিদ্যুৎ উত্পাদন ক্ষমতা ছিল চার কোটি তিন লাখ কিলোওয়াট। এর মধ্যে পরিষ্কার জ্বালানির অনুপাত ৯০ শতাংশ ছাড়িয়ে তিন কোটি ৬৩ লাখ ৭০ হাজার কিলোওয়াটে পৌঁছায়। আর

২০১৬ সাল থেকে সব  নতুন স্থাপিত বিদ্যুত কেন্দ্রে পরিষ্কার জ্বালানি ব্যবহৃত হয় ।

ছিং হাই প্রদেশে বাস করে ৫০টির বেশি জাতির মানুষ এবং সংখ্যালঘু জাতির লোকসংখ্যা ২৯ লাখ, তা মোট লোকসংখ্যার ৪৭.৪ শতাংশ। প্রদেশের ৯৮ শতাংশ হল জাতীয় স্বায়ত্তশাসিত এলাকা। তিব্বত, হুই, থু, সারা ও মঙ্গোলিয়া জাতি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এখানে বাস করে। তাই এখানে  বিশেষ সংস্কৃতি ও আচার ব্যবহার দেখা যায়।

গত সোমবার প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বিশেষভাবে একটি কাপের্ট কোম্পানি পরিদর্শন করেন। ঐতিহ্যবাহী তিব্বতি কার্পেট পশম দিয়ে তৈরি হয়। স্থানীয় বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন কারু শিল্প একে অভিজাতদের প্রিয় পণ্যে পরিণত করেছে। সুন্দর এ কার্পেট হল ছিংহাই-তিব্বত মালভূমির বিশেষ একটি কারু শিল্প। ছিংহাইকে তিব্বতি কার্পেটের হোম বলে ডাকা হয়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, আধুনিক বয়ন প্রযুক্তি ঐতিহ্যবাহী তিব্বতি কার্পেট তৈরিতে প্রয়োগ হয়। ফলে কার্পেটের দাম এখন আরও সস্তা। পাশাপাশি বড় আকারের কার্পেট তৈরি হয়। হোটেল ও বাড়িঘর কার্পেট দিয়ে সাজানো হয়। অনেকের বসার ঘরে এ কার্পেট শোভা পায়।  

হস্তনির্মিত তিব্বতি কার্পেট ২০০৬ সালে চীনের জাতীয় অবৈষয়িক ঐতিহ্য তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়।  অবৈষয়িক ঐতিহ্য সংরক্ষণে সবসময় গুরুত্ব দেন প্রেসিডেন্ট সি।

যেমন: কুয়াং চৌ সফরকালে তিনি ইউয়ু অপেরা যাদুঘর পরিদর্শন করেন এবং অপেরা অনুরাগীদের সাথে কথা বলেন। হাং চৌ শহরে তিনি লং চিং চা তৈরির প্রক্রিয়া দেখেন এবং সেখানকার কর্মীদের ঐতিহ্যবাহী কারু শিল্পকে এগিয়ে নিতে  উত্সাহ দেন।

তিনি বলেন, অবৈষয়িক ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং উত্তরাধিকারীর লালনপালন জোদার করতে হবে। সিপিসির ১৮তম কংগ্রেস থেকে প্রেসিডেন্ট সির যত্নে চীনে প্রতিষ্ঠিত হয় জাতীয়, প্রাদেশিক, শহর ও জেলা পর্যায়ের অবৈষয়িক ঐতিহ্যর তালিকা। এতে মোট এক লাখের বেশি আইটেম অন্তর্ভূক্ত হয়।  

প্রতিবারই সংখ্যালঘু জাতির অধ্যুষিত এলাকা সফরের সময় প্রেসিডেন্ট সি  স্থানীয় অবৈষয়িক ঐতিহ্যের খোঁজ-খবর নেন। ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে সি চিন পিং চীনের থুন হুয়াং শহর পরিদর্শন করেন। এটি  ২০০০ বছরের প্রচীন ইতিহাস সমৃদ্ধ একটি শহর। তিনি বলেন, অবৈষয়িক ঐতিহ্য সংরক্ষণে আরো সমর্থন দেবে এবং সংখ্যালঘু জাতির ইতিহাস ও সংস্কৃতি গবেষণা জোরদারে কাজ করবে তাঁর সরকার।মার্চের তিন তারিখ পালিত হয় জুয়াং জাতির ঐতিহ্যবাহী একটি উত্সব। এটি জাতীয় অবৈষয়িক ঐতিহ্যের অন্যতম। গেল এপ্রিলে প্রেসিডেন্ট সি কুয়াং সি জুয়াং স্বায়ত্তশাসিত এলাকা পরিদর্শন করেন । তিনি কুয়াং সি যাদুঘর  ঘুরে দেখেন। সেই উত্সবে অংশগ্রহণকারীদের সাথে কথা বলেন।তিনি বলেন, শ্রেষ্ঠ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি চীনা জাতির মানসিক জীবনধারা এবং বিশ্ব সংস্কৃতিতে নিজেদের অবস্থান তৈরির দৃঢ় ভিত্তি। (শিশির/এনাম/রুবি)