আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্যে ‘দ্রুত টাকা উপার্জনের’ পথ ছেড়ে সর্বাধুনিক কৌশল প্রয়োগ জরুরি
2021-06-07 14:42:11

মহামারী আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার সঙ্গে সঙ্গে পুরো খাতটি বড় ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে চলছে। একদিকে, অনলাইন পণ্যভোগ চাহিদা অধিকহারে বাড়ছে। ফলে বিপুলভাবে আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য রপ্তানী পরিষেবার স্বাভাবিকীকরণ ত্বরান্বিত হচ্ছে। অন্যদিকে, বেশ কয়েকটি দেশের যাতায়াত, লজিস্টিক ও শুল্ক তদারকি আরো কঠোর হয়েছে। তাই চীনের আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্যের তহবিল প্রবাহে অর্থাত্ পণ্য থাকলেও বিক্রিতে ভাটা পড়েছে। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সর্বাধুনিক কৌশল কার্যকর করা এবং ব্র্যান্ডের পথে চলা হচ্ছে চীনের আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্যের জন্য সঠিক  পথ।

 

বর্তমানে রফতানিমুখী আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্যে হুহু করে বাড়ছে। চীনের সাধারণ শুল্ক প্রশাসনের পরিসংখ্যান এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থার অনুমান অনুযায়ী, ২০২১ সালে চীনের রফতানিরত আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্যের বিনিময় পরিমাণ ৭.৭৩ ট্রিলিয়ন ইউয়ান হবে। ২০২৩ সাল পর্যন্ত পুরো বাজারটা বর্তমান বৃদ্ধির প্রবণতা বজায় রেখে খুব সম্ভবত্য ৯ ট্রিলিয়ন ইউয়ান অতিক্রম করবে। কিন্তু আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্যের উন্নয়ন হলেও, শিল্পে দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ব্যবস্থাপকের যথেষ্ট অভাব রয়েছে।

 

সম্প্রতি মুছেন আন্তর্জাতিক কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হুয়া কুয়াং ইয়ু বলেন, উত্সাহব্যঞ্জকভাবে প্রসারমান রফতানি আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য বাজারের ঢেউ কিছু উত্পাদকের পণ্যের নিম্ন মানের সমস্যা গোপন করে। বর্তমানে পুরো খাতে নিম্ন মান ও নিম্ন দাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং ‘দ্রুত টাকা উপার্জন’ ধারণা খুব জনপ্রিয়। যদিও বিদেশি বাজারে পণ্যের অভাবে কিছু নিম্ন মানের উত্পাদক কিছু বাজারে প্রবেশ করেছে, এবং তাদের পণ্যের বিক্রয় বৃদ্ধি খুব দ্রুত হচ্ছে। তবে, যখন সরবরাহ ও চাহিদা পরিবর্তন হবে, তখন নিম্ন মানের পণ্য খুব দ্রুত বর্জিত হবে।

 

বর্তমানে বিদেশি বাজার বিভিন্ন ধরণের নীতিগত সমন্বয়ের মাধ্যমে ই-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ জোরদার এবং ব্যবস্থাপনা উন্নীত করছে। যেমন, চলতি বছরের জুলাই মাস থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ভ্যাট সংস্কার করবে। ফলে ই-বাণিজ্য প্ল্যাটফর্ম বিক্রেতাদের কর প্রদান করতে হবে। এছাড়া, ২২ ইউরোর নিচে ভ্যাট মুক্ত নীতি বাতিল করা হবে। সুতরাং ‘দ্রুত টাকা উপার্জন’ পদ্ধতি আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্যে বেশি দিন স্থায়ী হবে না। কর না দিয়ে কেউ ব্যবসা করতে পারবে না বলে মনে করেন হুয়া কুয়াং ইয়ু।

 

তিনি বলেন, আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, মহামারীর প্রভাবে অনেক বিদেশী কারখানা বন্ধ ছিল, এটা নিঃসন্দেহে শক্তিশালী শিল্প-চেইন এবং পূর্ণাঙ্গ অবকাঠামোর অধিকারী চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো বেশি বাজার সুযোগ সরবরাহ করেছে। কিন্তু মহামারী যখন শেষ হবে, তখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উত্পাদন পুনরুদ্ধার সুষ্ঠু হবে। ফলে চীনা পণ্যের প্রতি চাহিদা কমবে।

 

হুয়া কুয়াং ইয়ু আরো বলেন, মহামারী শেষ হবার পর, আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্যিক কাঠামো পরিবর্তন হবে। তখন এক-তৃতীয়াংশ চীনা আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান হয়তো বাজারে টিকতে পারবে না।

 

সুযোগ ও চ্যালেঞ্জের মুখে চীনা আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানগুলো

 

আগে চীনের আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য প্রায়ই নিম্ন দাম নীতির মাধ্যমে বিদেশী বাজার দখল করেছে। কিন্তু হুয়া কুয়াং ইয়ু মনে করেন, চীনা পণ্য বিদেশে গিয়ে নিম্ন দামের অন্বেষণ করার দরকার নেই। কিন্তু কিছু কিছু কারখানা বিদেশী বাজার দখল করার জন্য ১০০ ইউয়ানের পণ্য ৯৯ ইউয়ান এমনকি আরো নিম্ন দামে বিক্রি করে, এতে এক্সপ্রেস ফিও কাভার করা হয়। এ ধরণের আচরণ শুরু হলে, দাম আরো কমবে এবং পণ্যের গুণগতমানও হ্রাস পাবে। ফলে চীনা পণ্যের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে।

 

হুয়াং কুয়াং ইয়ু বলেন, দেশি-বিদেশি সংস্কৃতির মধ্যে পার্থক্য আছে। পণ্যের মডেলিং, নান্দনিকতা এবং ব্যবহারের পরিবেশও ভিন্ন, সেসঙ্গে চাহিদাও অনেক ভিন্ন।

 

তাহলে চীনা পণ্যের উত্পাদকরা কীভাবে বিদেশি ব্যবহারকারীদের চাহিদা এবং চীনা পণ্যের সুষ্ঠু গুণগতমান রক্ষা করবে? মু ছেন কোম্পানির বিগ ডাটা অনুযায়ী, অভ্যন্তরীণ পণ্যের উত্পাদকদের জন্য যে ব্যবস্থা রয়েছে, তা এর সমাধান করতে পারে। তার মানে, নির্দিষ্ট বাজার অনুযায়ী, পণ্যের আকার, ও দাম ঠিক করা। অর্থাত্ নির্দিষ্ট ভোক্তাদের পণ্যভোগের রেওয়াজ অনুযায়ী ডিজাইন উন্নত করা।

 

উল্লেখ্য, বর্তমানে বাজারের পরিপক্ব পণ্যের ভিত্তিতে নতুন পণ্য উত্পাদন ও ডিজাইন করা হয়। আগের বাজারের চাহিদার পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে ব্যবহারকারীর মানসিক মডেল নির্মাণ করে উন্নত প্রযুক্তি প্রয়োগ করা হয়। এসব পণ্য আরো যথাযথভাবে ব্যবহারকারীদের চাহিদা পূরণ করে। এছাড়া, চ্যানেল অপারেশনে কৌশলগত সমন্বয় করতে হবে, যাতে পুরো চ্যানেলের উন্নয়ন হয়।

 

হুয়া কুয়াং ইয়ু বলেন, চীনের রফতানিমুখী কোম্পানিগুলির মধ্যে শুধু কয়েকটির বিদেশে শক্তিশালী অফলাইন বিক্রয় দক্ষতা আছে। অধিকাংশের পরিষেবা অনলাইনে সীমাবদ্ধ। আর কোন কোন প্রতিষ্ঠান কেবল আমাজনের ওপর নির্ভরশীল।

 

তিনি বলেন, যদিও বিদেশি বাজারের অনলাইন পণ্যভোগ উন্নয়ন দ্রুত হচ্ছে, তবে, ৮০ শতাংশ পণ্যভোগ ও বিনিময় অফলাইনে হচ্ছে। সুতরাং অফলাইন বাণিজ্যিক চ্যানেলে বাজারে প্রবেশ করা এখনো চীনা পণ্যের ইউরোপ ও মার্কিন বাজারে প্রবেশ করার পদ্ধতিগুলোর অন্যতম। যদিও বৃহদাকার ই-বাণিজ্য প্ল্যাটফর্ম জনপ্রিয় হয়েছে, তবে, পরিচালনা ব্যয় আরো বেড়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বতা আরো তুমুল হয়েছে। ফলে মাঝারি ও ছোট আকারের প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা ব্যয় বাড়ছে।

 

আসলে চীনের রফতানি আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্য বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে, অনেক পণ্য উত্পাদক শুধুমাত্র ই-বাণিজ্যের চ্যানেল বাজারের ওপর নির্ভর করে বাজারের চাহিদা পূরণ করা যায় না বলে অনূভব করছেন। সরবরাহ ও চাহিদার মধ্যে দ্বন্দ্বও দিন দিন স্পষ্ট হয়ে ওঠছে।

 

সুতরাং মু ছেন আন্তর্জাতিক সবসময় বিদেশি বৃহদাকারের বণিক, ছোট আকারের টার্মিনাল ট্রেডিং শপ এবং আমাজন বা ইবেইসহ বিভিন্ন বিদেশি প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে মিল রেখে নিজেদের উন্নয়নের কৌশল কার্যকর করছে।

 

হুয়া কুয়াং ইয়ু মনে করেন, আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্যের মূলকাজ ব্যবহারকারীদের ব্যবস্থাপনা। ভালো পণ্য ব্যবহারকারীদের মনোভাব পরিবর্তন করতে পারে। সুতরাং চীনের অভ্যন্তরীণ পণ্য বিদেশে যাবার পূর্বশর্ত হলো ব্যবহাকারীদের চাহিদা বুঝার পর বিগ ডাটাসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি সংযুক্ত করে পণ্যকে ঢেলে সাজানো। যাতে তা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, বিভিন্ন জাতি ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে ব্যবহারকারীদের চাহিদার সঙ্গে যুক্তিযুক্ত হতে পারে। (প্রেমা/এনাম)