অভিন্ন সবুজ গ্রহ গড়ে তুলতে চীনা তত্পরতা
2021-06-07 11:57:58

জুন ৭: গত শনিবার সারা বিশ্বে পালিত হয়েছে বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এবারে দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল ‘মানুষ ও প্রকৃতির সম্প্রীতিময় সহাবস্থান’।  বহু বছর ধরে চীন দূষণ রোধ, প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের বিন্যাস সাধনে মানুষ ও প্রকৃতির সম্প্রীতিময় সহাবস্থানের জন্য চেষ্টা চালিয়ে আসছে। আজকের সংবাদ পর্যালোচনায় শুনুন এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন।

 

সম্প্রতি বেইজিংয়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ ব্যুরো এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বর্তমানে বেইজিংয়ে নানা প্রজাতির পাখির পরিমাণ ৫০৮৬টি। এখানে  নতুন করে আরো ৭০টি প্রজাতি আবিষ্কৃত হয়েছে।

ফলে বেইজিং জীববৈচিত্র্যের দিক দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধ নগরগুলোর অন্যতম এবং বিশ্বের বৃহত্তম পাখির সমাবেশস্থল। ব্যাপক প্রাণচাঞ্চল্য ও অধিক জনসংখ্যার মহানগর হওয়া সত্ত্বেও বেইজিংয়ে মানুষ ও প্রকৃতির সম্প্রীতিময় সহাবস্থান নিশ্চিত হয়েছে।

 

এ প্রসঙ্গে বেইজিংয়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ ব্যুরোর পরিচালক ছাও চি পিং বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেইজিং প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণস্থল নির্মাণকাজ জোরদার, আবাসস্থল রক্ষা ও জল পরিবেশ পুনরুদ্ধারসহ নানা ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণ নিশ্চিত করেছে।

তিনি বলেন,‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমরা কেন্দ্রীয় অঞ্চলে উত্তর-পূর্ব হেজহগ, ও মুসতেলা সিবিরিকাসহ নানা প্রজাতির পশুপাখি দেখতে পাচ্ছি। তাতে প্রতিফলিত হয়েছে যে, কেন্দ্রীয় অঞ্চলে নানা পদ্ধতিতে নগরের সবুজায়ন বাড়িয়ে সেসব পশুপাখির জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ সরবরাহ করা গেছে।’

 

সরকার পার্ক নির্মাণ ও জলাভূমি পুনরুদ্ধারসহ নানা পদ্ধতিতে সবুজ অঞ্চল বাড়িয়েছে। এ প্রসঙ্গে একজন নাগরিক বলেন,‘আমাদের অ্যাপার্টমেন্টের নিচেই সুবজ বাগান আছে, সর্বত্র সবুজ চোখে পড়ে।’

 

কেবল বেইজিং নয়। মানুষ ও প্রকৃতির সম্প্রীতিময় সহাবস্থান নিশ্চিত করতে চীন জাতীয় পর্যায়ে পরিবেশ সংরক্ষণ অঞ্চলের পরিমাণ বাড়িয়ে ৪৭৪টিতে উন্নীত করেছে, যার মোট আয়তন নয় লাখ ৮৩ হাজার ৪শ বর্গকিলোমিটার।

 

একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গেলে একদিকে কঠোর নীতিতে  পরিবেশ সংরক্ষণ করতে হয়, অন্যদিকে, পরিবেশ সরংক্ষণ অঞ্চলে আদিবাসীদের নিজস্ব জীবন-যাত্রা নিশ্চিত করতে হয়।

 

চীনের ছিং হাই প্রদেশে সান চিয়াং ইউয়ান জাতীয় উদ্যানে মোট ১২০টিরও বেশি পশুপাখি বাস করে। তাছাড়া, এখানে মালভূমির বৈচিত্র্যময় উদ্ভিতও রয়েছে। এ জাতীয় উদ্যানের আদিবাসীদের নিজস্ব জীবন-যাত্রা নিশ্চিত করতে ‘এক পরিবার, এক কর্ম’ নীতি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। উদ্যানটি আগেকার পশুপালক জাতীয় উদ্যান থেকে বর্তমানে  নির্মাণ শক্তিতে পরিণত হয়েছে। গ্রামবাসী ল্য গা জাতীয় উদ্যানের পরিবেশ সংরক্ষকদের অন্যতম।

 তিনি বলেন,‘আগে ভাবি নি, নিজের গ্রামীন বাড়ী একদিন জাতীয় উদ্যানে পরিণত হবে। জাতীয় উদ্যানের সংরক্ষক হিসেবে নিজের বাড়ী আরও ভালোভাবে সংরক্ষণ করতে পারছি। আমাদের পরিবেশ সংরক্ষণের ভাবনাও উন্নত হয়েছে। এ প্রবণতা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য খুবই উপকারী।’

 

সম্প্রতি চীনের প্রাকৃতিক পরিবেশ মন্ত্রণালয় ‘২০২০ সালের চীনের প্রাকৃতিক পরিবেশের অবস্থা বিষয়ক ইস্তেহার প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে যে, ২০২০ সালে চীনজুড়ে ৩৩৭টি জেলা পর্যায়ের শহরে সুষ্ঠু আবহাওয়ার দিনের পরিমাণ ৮৭ শতাংশ ছাড়িয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে পাঁচ শতাংশ বেশি।

 

 

পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য বিখ্যাত হয়ে ওঠা মার্কিন ক্যামেরাম্যান  ক্যালি ওবামা এক সময় বেইজিং ও ছেং তুতে বাস করতেন। তিনি বলেন,  পরিবেশ সংরক্ষণে অর্থবরাদ্দ জোরদারের ফলে চীনের পরিবেশ দিন দিন উন্নত হচ্ছে।

 

তিনি বলেন, ‘স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে যে, বেইজিং, হ্য পেই ও ছেং তুসহ অনেক জায়গায় বাস্তব পরিবর্তন আনা হয়েছে। সরকারের কার্যক্রম ও নীতি পরিবেশ সরংক্ষণে ফলপ্রসু হয়েছে। এটি খুবই স্পষ্ট।’ (রুবি/এনাম/আকাশ)