নারীর সুরক্ষায় আইনের যথাযথ প্রয়োগ চাই
কী থাকছে আমাদের অনুষ্ঠানে
১. সাক্ষাৎকার: অ্যাডভোকেট দিলরুবা সরমিন
২. গ্রামের ভাগ্য বদলে দিলেন বিচক্ষণ নারী লান নিয়ানইং
৩. গান: শিল্পী ছাই চিয়ান ইয়া, গানের শিরোনাম: যখন আমি তোমাকে মিস করি
৪. বিখ্যাত বাঙালি নারী: কবি কুসুমকুমারী দাশ
৫. চীনের বিখ্যাত বিজনেস এক্সিকিউটিভ: ওয়াং ফং ইং
চীন আন্তর্জাতিক বেতারের ঢাকা স্টেশন থেকে প্রচারিত আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। কেমন আছেন আপনারা? আশাকরি সবাই সুস্থ আছেন, ভালো আছেন।আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি সেইসব নারীর সঙ্গে যারা সাফল্যের আকাশ স্পর্শ করেছেন অথবা স্পর্শ করতে চান। আমাদের আজকের অতিথি অ্যাডভোকেট এবং মানবাধিকার কর্মী দিলরুবা সরমিন। ভার্চুয়ালি তিনি যুক্ত হয়েছেন আমাদের সঙ্গে।
সাক্ষাৎকার
নারীর সুরক্ষায় আইনের যথাযথ প্রয়োগ চাই: অ্যাডভোকেট দিলরুবা সরমিন
দিলরুবা সরমিন একজন সিনিয়র আইনজীবী। তিনি দীর্ঘদিন ধরে নারীর মানবাধিকার বিষয়ে লেখালেখি করছেন এবং কাজ করছেন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধে আমাদের কঠোর আইন রয়েছে। কিন্তু প্রয়োগ নেই। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় দরকার আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ।’ ভিকটিম যেন আইনের আশ্রয় পাওয়ার পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছুতে পারে সেটা নিশ্চিত করা দরকার বলে তিনি মনে করেন। ভিকটিম যেন পুনর্বাসিত হতে পারে সেদিকেও সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন।
একজন আইনজীবী হিসেবে তিনি সমাজের বিভিন্ন স্তরে নারীদের জন্য কাজ করেছেন বলে জানান। তিনি বিভিন্ন ব্রোথেলে অবস্থানরত নারীদের আইনগত অধিকার প্রাপ্তির জন্য কাজ করছেন দীর্ঘদিন ধরে। তিনি শুধু অর্থ উপার্জনের জন্য কাজ করেন না বরং একজন বিবেকবান মানুষ হিসেবে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করেন বলে জানান।
তিনি মনে করেন আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হতে হবে নারীবান্ধব। পুলিশ স্টেশনগুলোর পরিবেশ যেন নারী বান্ধব হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।
তার ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে তিনি পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা পেয়েছেন। তবে মাঝেমধ্যে আশপাশের মানুষ তাকে ভুল বুঝেছে। কিন্তু তিনি এগুলোকে গুরুত্ব দেননি।
দিলরুবা সরমিন একজন কলামিস্ট হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছেন। তিনি নারীর আইনগত অধিকার নিয়ে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় লেখেন।
তিনি মনে করেন, নারী ও শিশুসহ সকল নাগরিকের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ও নিরাপত্তা বিধানে রাষ্ট্রকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে।
প্রতিবেদন
গ্রামের ভাগ্য বদলে দিলেন বিচক্ষণ নারী লান নিয়ানইং
লান নিয়ানইং গত কয়েক দশক ধরে সিনইয়ুয়ে গ্রামের কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই নারীর বিচক্ষণ নেতৃত্বে বদলে গেছে পুরো গ্রামের ভাগ্য। তিনি চারা গাছ উৎপাদন ও এথনিক টুরিজমের মাধ্যমে গ্রামের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটিয়েছেন।
চিয়াংসি প্রদেশের ফুচোও শহর থেকে একটু দূরে সিনইয়ুয়ে গ্রাম। এখানে ৪২০ জন মানুষের বসবাস যারা বেশিরভাগই শি এথনিক গ্রুপের। বর্তমানে তাদের মাথাপিছু আয় ১৭ হাজার ইউয়ান যা পাঁচ বছর আগের দ্বিগুণ। এই গ্রামে পর্যটকরা আসে শি এথনিক গ্রুপের সংস্কৃতি দেখা, এখানকার বিশেষ খাদ্য গ্রহণ ও শিল্পসামগ্রীর জন্য।গ্রামের নেতা লান নিয়ানইং তার পরিবার এবং সমাজের অন্যদের সঙ্গে ষাটের দশকে এই নতুন গড়ে তোলা গ্রামে বসবাস শুরু করেন।তিনি আশির দশকে চারাগাছ উৎপন্ন করার পেশা শুরু করেন। খামারের পালিত পশু বিক্রি করে ২০০ ইউয়ান দিয়ে চারাগাছ চাষ করার প্রশিক্ষণ নেন।
১৯৮৫ সালে কমলালেবুর চারা বিক্রি করে ১০ হাজার ইউয়ান আয় করেন। বীজ সংগ্রহ করে সেখান থেকে চারাগাছ উৎপন্ন করার ব্যবসা ধীরে ধীরে প্রসারিত হয়। তিনি তার গ্রামের অনেককে নিয়ে একটি সমবায় গড়ে তোলেন। ১৯৯৯ সালে গ্রামবাসীরা তার নেতৃত্বে চারাগাছের উৎপাদন অনেক বাড়িয়ে তোলেন।
লান বলেন, ‘গ্রামের অনেকেই জানতেন না কোথায় ও কিভাবে চারাগাছ বিক্রি করবেন। আমি সেই দায়িত্ব গ্রহণ করি’। ২০১৬ সালে তার উদ্যোগে গ্রামে পর্যটন শিল্প গড়ে ওঠে।
লানের বয়স এখন ৬২ বছর। তিনি ঐতিহ্যবাহী ফুলকাটা পোশাক পরেন এবং শি এথনিক গ্রুপের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন করে কিভাবে পর্যটন শিল্পকে আরও বিকশিত করা যায় তার পরিকল্পনা করেন। তাদের গ্রামে গত বছর দুই লাখ পর্যটক এসেছে। এভাবে বুদ্ধিমতী ও পরিশ্রমী লান নিয়ানইংয়ের নেতৃত্বে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে গ্রামটি।
সুপ্রিয় শ্রোতা এখন শুনবেন শিল্পী ছাই চিয়ান ইয়ার কন্ঠে একটি গান। গানটির শিরোনাম হলো যখন আমি তোমাকে মিস করি।
বিখ্যাত বাঙালি নারী: কুসুমকুমারী দাশ
‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে’
‘আদর্শ ছেলে’ নামে এই কবিতার লেখক কুসুমকুমারী দাশ। তিনি শুধু একজন বাঙালি নারী কবিই নন তিনি বিংশ শতাব্দীর প্রধান আধুনিক বাঙালি কবি জীবনানন্দ দাশেরও মা। কুসুমকুমারী দাশ ১৮৭৫ সালে বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ৪র্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েন। এরপর কলকাতার বেথুন স্কুলে প্রবেশিকা শ্রেণিতে পড়ার সময়েই ১৮৯৪ সালে তার বিয়ে হয় বরিশালের ব্রজমোহন ইন্সটিটিউশনের প্রধান শিক্ষক সত্যানন্দ দাশের সঙ্গে। তারই অনুপ্রেরণায় কুসুমকুমারী সাহিত্য চর্চা চালিয়ে যান।
ছোটবেলা থেকেই কবিতা ও প্রবন্ধ লিখতেন কুসুমকুমারী। ‘কাব্য মুকুল’ তার কাব্যগ্রন্থ। ‘পৌরাণিক আখ্যায়িকা’ গদ্যগ্রন্থ। তাঁর অল্প কিছু কবিতা প্রকাশিত হয়েছে প্রবাসী ও মুকুল পত্রিকায়। তাঁর কবিতায় বার বার উঠে এসেছে ধর্ম, নীতিবোধ, দেশাত্মবোধ। সে সময়ে নারীত্বের আদর্শ নামের একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে তিনি স্বর্ণপদকে ভূষিত হন। কুসুমকুমারী দাশ ১৯৪৮ সালে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।
চীনের বিখ্যাত বিজনেস এক্সিকিউটিভ: ওয়াং ফং ইং
ওয়াং ফং ইং চীনের বিখ্যাত ব্যবসায়ী। চীনের বৃহত্তম স্পোর্টসকার ও পিকআপ ট্রাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান গ্রেটওয়াল মোটরের তিনি সিইওি এবং ডেপুটি চেয়ারম্যান। ওয়াং ফং ইংয়ের জন্ম উত্তর চীনের হ্যপেই প্রদেশের পাওতিং শহরে ১৯৭০ সালে। ১৯৯১ সালে তিনি থিয়ানচিন ইন্সটিটিউট অব ফিনান্স থেকে ব্যাচেলর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯৯ সালে একই প্রতিষ্ঠান থেকে ফিনান্সে মেজর নিয়ে তিনি মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৯১ সালে চীনের বিখ্যাত মোটরগাড়ি প্রস্ততকারী প্রতিষ্ঠান গ্রেটওয়াল মোটরে যোগ দেন ওয়াং। তখন তার বয়স মাত্র একুশ বছর। ২০০৩ সালে তিনি প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহীর পদ লাভ করেন। ফোর্বস ম্যাগাজিন ২০১৭ সালে ওয়াং ফং ইংকে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারীর তালিকায় একশ জনের মধ্যে ৬২ নম্বরে স্থান দেয়। তিনি ২০১৯ এবং ২০২০ সালেও ফোর্বস ম্যাগাজিনে বিশ্বের ১০০ ক্ষমতাধর নারীর তালিকায় রয়েছেন। ২০১৮ সালে চীনের ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসে বক্তব্য রাখার সময় গ্রেট ওয়াল মোটর প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য বিষয়ে ওয়াং বলেন যে, ২০২৫ সালের মধ্যে গাড়ি বিক্রির সংখ্যা বর্তমানের দ্বিগুণ করা হবে এবং ইলেকট্রিক এবং হাইব্রড প্লাগইন গাড়ির সংখ্যা বাড়ানো হবে। ওয়াং ফং ইং তার কর্মদক্ষতা ও বিচক্ষণতায় চীনের বিজনেস এক্সিকিউটিভ নারীদের অন্যতম আইকনে পরিণত হয়েছেন।
প্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা। অনুষ্ঠানটি কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না কিন্তু। আমাদের অনুষ্ঠান আপনারা সবসময় শুনতে পাবেন, ঢাকায় এফ এম ১০২ এবং চট্টগ্রামে এফ এম ৯০ মেগাহার্টজে এবং অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজে। জেনে নিন আমাদের ইমেইল অ্যাডরেস, cmg.bangla@gmail.com আমাদের ফেসবুক পেজ facebook.com/CRIbangla এবং facebook.com/CMGbangla এবংআমাদের সাক্ষাৎকারগুলো ইউটিউবে দেখতে পাবেন। youtube.com/CMGbangla.
সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী
লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া
কুসুমকুমারী দাশ বিষয়ে প্রতিবেদন: রওজায়ে জাবিদা ঐশী
অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ