চীনের অন্যতম প্রধান উৎসব ড্রাগনবোট ফেস্টিভাল। এই উৎসবের একটি মিথ হলো কবি ছু ইউয়ানের প্রতি জনগণের ভালোবাসা। খ্রিস্টপূর্ব ৩৪০ সালে কবি ছুইউয়ানের জন্ম এবং মৃত্যু ২৭৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে।
সে সময় চীনের সাতটি রাজ্য ছিল- ছি, চু, ইয়ান, হান, চাও, ওয়েই এবং ছিন। রাজ্যগুলোর মধ্যে যুদ্ধবিগ্রহ লেগেই থাকতো। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল ছিন রাজ্য।
ছবি: কবি ছু ইউয়ান
ছু ইউয়ান ছিলেন চু রাজ্যের রাজকর্মচারী। রাজা ও জন্মভূমির প্রতি তার বিশ্বস্ততা ছিল প্রবল। ছু রাজাকে পরামর্শ দেন ছি রাজ্যের সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন করে জোটবদ্ধ হয়ে ছিন রাজ্যের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার। কিন্তু ছু ইউয়ানের এই পরামর্শ রাজা অগ্রাহ্য করেন। এর পিছনে ছিল চিরকালের প্রাসাদ ষড়যন্ত্র।
রাজ দরবারে ছু ইউয়ানের প্রতিপত্তিতে ঈর্ষান্বিত অন্য মন্ত্রী ও পারিষদরা তার বিরুদ্ধে রাজার কান ভারি করে। রাজা ছু ইউয়ানের বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে রাজদ্রোহের অভিযোগে অভিযুক্ত করে নির্বাসনে পাঠান। নির্বাসনে থাকার সময় ছু দেশপ্রেমমূলক অনেক কবিতা লেখেন যার অনেকগুলো এখনও চীনে বেশ জনপ্রিয়।
গ্রামবাসী এই কবিকে ভালোবাসতেন। তারা তার কবিতা শুনতেন এবং কবিকে সমাদর করতেন।
এদিকে ২৭৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ছিন রাজ্য চু রাজ্যের উপর হামলা চালিয়ে রাজধানী দখল করে নেয়। নিজের প্রিয় মাতৃভূমির পরাজয়ের সংবাদ যখন কবির কানে পৌঁছালো তিনি সে দুঃখ সইতে পারলেন না। মিলোও নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করলেন ছু। পঞ্চম চান্দ্র মাসের পঞ্চম দিনে এই বিয়োগান্তক ঘটনাটি ঘটে।
স্থানীয় লোকেরা যখন তাদের প্রিয় কবির আত্মবিসর্জনের কথা জানতে পারে তখন তারা নদীতে নৌকা নিয়ে তার মৃতদেহের সন্ধান করতে থাকে।
অশুভ-আত্মা তাড়াতে তারা নৌকার বৈঠা দিয়ে নদীর পানিতে বাড়ি মারে এবং ঢাক পিটিয়ে জোরে জোরে শব্দ করতে থাকে। মাছ যেন কবির মৃতদেহ না খায় এ জন্য তারা ভাতের ছোট ছোট পুঁটুলি নদীতে ছুঁড়ে ফেলে।
একজন বৃদ্ধ চিকিৎসক নদীতে কিছুটা মদিরা ঢালেন যেন অশুভ দানবরা তা পান করে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয় এবং ছু ইউয়ান দানবদের গ্রাস থেকে রক্ষা পান।
এই ঘটনার স্মরণে এখনও ড্রাগন বোট উৎসব পালন করা হয় চীনে।
শান্তা/হাশিম