দেহঘড়ি পর্ব-১৯
2021-06-04 23:04:28

 

‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে রয়েছে স্বাস্থ্যখাতের একটি সুখবর, স্বাস্থ্য বুলেটিন, স্বাস্থ্য বিষয়ক ভুল ধারণা নিয়ে আয়োজন ‘ভুলের ভুবনে বাস’, সাক্ষাৎকারভিত্তিক আয়োজন ‘আপনার ডাক্তার’, খাদ্যের গুণাগুণ নিয়ে আলোচনা ‘কি খাব কি খাব না’।

 

## প্রতিবেদন

মাতৃমৃত্যু রোধে চীন সরকারের সহায়তা পেল বাংলাদেশ

দেহঘড়ি পর্ব-১৯_fororder_j1

মাতৃমৃত্যু রোধে চীনের কাছ থেকে অনুদান হিসাবে ওষুধ ও প্রসবোত্তর সরঞ্জাম পেয়েছে বাংলাদেশ। আন্তঃসরকার প্রতিষ্ঠান পার্টনারস ইন পপ্যুলেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (পিপিডি)’র মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের হাতে পৌঁছেছে এসব ওষুধ ও সরঞ্জাম। গত সোমবার ঢাকায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পিডিডি’র প্রোগ্রাম ডিরেক্টর ডা. মো. নজরুল ইসলাম এগুলো তুলে দেন পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ডা. মো. শরিফের হাতে।

দেহঘড়ি পর্ব-১৯_fororder_j2

প্রসবোত্তর রক্তক্ষরণজনিত কারণে যে মাতৃমৃত্যু ঘটে তা রোধে গৃহীত একটি প্রকল্পে ব্যবহার করা হবে এসব সরঞ্জাম। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও পিপিডি মানিকগঞ্জ ও গাজীপুর জেলার ছয়টি উপজেলায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। 

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকায় অবস্থিত চীনা দূতাবাসের ইকোনমিকস অ্যান্ড কমার্শিয়াল কাউন্সিলর লি চেন হুয়া বলেন, বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যুরোধসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে চীন সরকারের সহায়তা অব্যাহত থাকবে।

সরঞ্জাম হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু। চীন সরকারের এই সহায়তা প্রকল্প এলাকায় মাতৃমৃত্যু কমিয়ে আনতে বড় ভূমিকা পালন করবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেন তিনি। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে চীন বাংলাদেশের প্রতি বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

করোনার প্রথম ঢেউয়ে যখন বাংলাদেশ বিপর্যস্ত তখন সামনে এগিয়ে আসে চীন। পাঠায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল। এরপর দ্বিতীয় ঢেউয়ে যখন টিকা সংকট তখন উপহার হিসাবে মোট ১১ লাখ টিকা বাংলাদেশকে দেওয়ার কথা জানায় চীন যার মধ্যে ৫ লাখ টিকা ইতোমধ্যে বাংলাদেশে পৌছেছে। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে বিপদে আপদে পাশে থেকে লড়েছে এই দুই দেশ। এবার মাতৃমৃত্য রোধে চীনের এই সহায়তা বন্ধুত্বকে আরও গভীর করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। - তানজিদ/রহমান

 

##হেল্‌থ বুলেটিন

রাজশাহীতে ভারতীয় ধরনে শঙ্কা, সাতক্ষীরায় ৭ দিনের লকডাউন

দেহঘড়ি পর্ব-১৯_fororder_j3

রাজশাহী বিভাগে করোনার ভারতীয় ধরন নিয়ে শঙ্কা বিরাজ করছে। গত এক সপ্তাহে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৭০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়, যাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ ই করোনা আক্রান্ত কিংবা করোনার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।  এদিকে সীমান্তবর্তী জেলা সাতক্ষীরায় করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ৫ জুন থেকে এক সপ্তাহের কঠোর লকডাউন ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে করোনা প্রতিরোধ কমিটির জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সভায় জানানো হয়, এ জেলায় করোনা সংক্রমণের হার মোট পরীক্ষার ৫৪ শতাংশে পৌঁছেছে। সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দেওয়ায় আগামী শনিবার ভোর ৬টা থেকে এক সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করে স্থানীয় প্রশাসন। লকডাউন চলাকালীন সব ধরনের গণপরিবহন, শপিং মল ও মার্কেট বন্ধ থাকবে। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে লকডাউন আরও বাড়তে পারে বলেও জানানো হয়।

শিগগিরই ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা প্রয়োগ শুরু

দেশে শিগগিরই ফাইজার-বায়োএনটেকের করোনা টিকার প্রয়োগ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত মঙ্গলবার এক অনলাইন বুলেটিনে অধিদপ্তর জানায়, আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে টিকাদান শুরু হতে পারে। তবে টিকা প্রয়োগের দিনক্ষণ ও স্থান এখনো ঠিক হয়নি। গত সোমবার রাতে কোভ্যাক্সের আওতায় ফাইজারের ১ লাখ ৬২০ ডোজ টিকা বাংলাদেশে পৌঁছায়। এদিকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজ যারা পাননি তাদের ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক নাজমুল ইসলাম জানিয়েছেন, সরকার টিকা আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।

চীনের করোনা টিকা কোভ্যাক্সর বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু

চীন উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের টিকা কোভ্যাক্স’র প্রথম ব্যাচের উৎপাদন আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে কারখানার প্রোডাকশন লাইন থেকে উৎপাদিত টিকা ছেড়েও দেয়া হয়েছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েন বিন এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন। সারা বিশ্বে করোনার টিকা সরবরাহের চীনা প্রতিশ্রুতি পূরণে এই পদক্ষেপ আরেক দফা অগ্রগতি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ওয়াং বলেন, টিকা উৎপাদনের কাজে কোভ্যাক্সকে সব ধরনের সহযোগিতা দেবে চীন। পাশাপাশি কোভ্যাক্সের মাধ্যমে সারা বিশ্বে অন্তত ১ কোটি টিকা সরবরাহ করা হবে। কোভ্যাক্সের পাশাপাশি অন্যান্য কোম্পানিগুলোও টিকা উৎপাদনের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। - তানজিদ/রহমান

 

## ভুলের ভুবনে বাস

জেনে নিন হাঁপানি সম্পর্কে প্রচলিত ভুল ধারণা সম্পর্কে

দেহঘড়ি পর্ব-১৯_fororder_j4

সারাবিশ্বে ২০ কোটি মানুষ অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগে আক্রান্ত, যাদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু। বাংলাদেশেও এ রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা কম নয়। দেশ ৭০ লাখের বেশি মানুষ হাঁপানিতে ভুগছে, যাদের ৬০ শতাংশের বয়স ১৫ বছরের নিচে। অতি সংবেদনশীলতার কারণে শ্বাসনালির যে সংকোচন ঘটে এবং শ্বাস-প্রশ্বাসে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়, সেটাই। হাঁপানির সঠিক কারণ এখনও অজানা। তবে বংশগত ও পরিবেশগত কিছু কারণকে দায়ী করা হয় এ রোগের জন্য। হাঁপানি রোগ নিয়ে মানুষের মধ্যে রয়েছে নানা রকমের ভুল ধারণা। চলুন জেনে নেই হাঁপানি সম্পর্কে প্রচলিত ভুল ধারণা সম্পর্কে:

ভুল ধারণা: হাঁপানি রোগের ওষুধ আসক্তি সৃষ্টিকারী, বিপজ্জনক এবং দীর্ঘদিন ব্যবহারে এগুলোর কার্যকারিতা হ্রাস পায়।

প্রমাণিত সত্য: হাঁপানির ওষুধগুলো হাঁপানি ব্যবস্থাপনার জন্য নিরাপদ ও দরকারী। এগুলো রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখে, রোগীদের একটি সক্রিয় জীবনযাপনের সুযোগ দেয়। দুরারোগ্য প্রকৃতির হাঁপানির ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী ওষুধ ব্যবহারের একটি নির্দিষ্ট রুটিনের প্রয়োজন হয়। এটার অর্থ এই নয় যে, এই ওষুধগুলো আসক্তি সৃষ্টিকারী। হাঁপানির সমস্যা আকস্মিকভাবে বেড়ে যাওয়ার সময় ব্রোঙ্কোডিলেটর ওষুধ ভাল কাজ করে। অন্যান্য ওষুধ যেমন ইনহেলড্  বা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণকৃত কর্টিকোস্টেরয়েডস (corticosteroids) প্রতিদিন প্রয়োজন হতে পারে। হাঁপানি রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে একাধিক ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে, তবে হাঁপানির কোনও ওষুধই আসক্তি সৃষ্টিকারী নয়। ইনহেলড কর্টিকোস্টেরয়েডস স্থুলতার সাথে সম্পর্কিত অ্যানাবলিক-টাইপ স্টেরয়েড নয়। কোনও কোনও মা-বাবা হাঁপানির নির্দিষ্ট ওষুধের সাথে সম্পর্কিত বর্ধিত সমস্যাগুলোর ব্যাপারে উদ্বিগ্ন থাকেন, যেমন শারীরিক বিকাশ। তবে বিশদ বিশ্লেষণে দেখা যায়, যে সব শিশু ইনহেলড কর্টিকোস্টেরয়েডস গ্রহণ করে তারা স্বাভাবিক উচ্চতায় পৌঁছায়। হাঁপানির রোগের চিকিৎসা না করা হলে তা স্থায়ী ফুসফুস রোগের দিকে ধাবিত হতে পারে এবং বেড়ে উঠাকে প্রভাবিত করতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহারের পরও রোগীদের উপর কোনও হাঁপানির ওষুধের কার্যকারিতা কমতে দেখা যায়নি।

ভুল ধারণা: হাঁপানি রোগে আক্রান্ত মানুষদের ব্যায়াম, খেলাধূলা করা অথবা জিমে অংশগ্রহণ করা উচিত নয়।

 প্রমাণিত সত্য: হাঁপানি রোগে আক্রান্ত মানুষদেরকে খেলাধুলা ও জিম করাসহ একটি সক্রিয় জীবনযাপন করতে উত্সাহিত করা হয়। একটি সম্পূর্ণ সক্রিয় জীবন ফুসফুসকে সুস্থ রাখে। এটা ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে, যা হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে খুব দরকারী। ব্যায়াম কিছু রোগীর জন্য হাঁপানির ভারসাম্যবিধায়ক হিসেবে কাজ করে। ডাক্তার ব্যায়ামের আগে একটি আলবুটারল ইনহেলার ব্যবহার এবং ব্যায়ামের সময় হাতের নাগালের মধ্যে রাখার পরামর্শ দিতে পারে। শারীরিক ক্রিয়াকলাপের আগে উষ্ণ হওয়ার জন্য এবং পরে শীতল হওয়ার জন্য সময়ও নেওয়া উচিত।

ভুল ধারণা: হাঁপানি একটি শৈশবকালের রোগ এবং সাধারণত বয়স বাড়ার সাথে সাথে ভাল হয়ে যায়।

প্রমাণিত সত্য: সাধারণত শৈশবকালের রোগ হিসেবে হাঁপানির বিকাশ ঘটে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এটা খুব কমই ভাল হয়। হাঁপানি সাধারণত পরিণত বয়সে স্থির থাকে। কোনও কোনও প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে এটা প্রথমবারের জন্য দেখা দিতে পারে। ফুসফুস বড় হওয়ার সাথে সাথে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সময়ের সাথে অভিযোজিত হওয়ায় হাঁপানির সমস্যার বিকাশ হতে পারে।

ভুল ধারণা: হাঁপানি রোগ কোনও বড় সমস্যা নয় এবং এটা সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

প্রমাণিত সত্য: প্রতিদিন বহু লোক মারা যায় দুরারোগ্য ব্যাধি হাঁপানির কারণে। আরো লাখ লাখ রোগী ও তাদের পরিবার এ রোগ দ্বারা প্রভাবিত হয়। পরিসংখ্যানগুলো হতবাক করার মতো -- আড়াই কোটির বেশি আমেরিকান হাঁপানিতে ভুগছে, যাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ব্যয় ৫৬ বিলিয়ন ডলারের মতো। এই সংখ্যা প্রতি বছরই বাড়ছে।

সকল হাঁপানিই মারাত্মক এবং যে কোনও সময়ে এটা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে প্রাণনাশক হয়ে উঠছে পারে। হাঁপানি প্রতিটি ব্যক্তির জন্য পৃথক। এটি বয়স, পারিবারিক পটভূমি, জাতি, লিঙ্গ, বসবাসের স্থান, কর্মক্ষেত্র, পরিবেশগত উপাদান, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার বিকাশ এবং সাধারণ স্বাস্থ্যসহ অনেকগুলো কারণ দ্বারা প্রভাবিত হয়। সঠিক রোগ নির্ণয় এবং চিকিত্সার পরিকল্পনাই হলো হাঁপানি নিয়ন্ত্রণের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। উপযুক্ত ডাক্তার, ওষুধ, শিক্ষা এবং ব্যবস্থাপনার সরঞ্জামগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে হাঁপানি রোগ ভালভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। 

ভুল ধারণা: সাঁ সাঁ করে নিঃশ্বাস ফেললেই সেটা হাঁপানি নয়।

প্রমাণিত সত্য: সাঁ সাঁ করে নিঃশ্বাস ফেলা হাঁপানির একটি সাধারণ উপসর্গ। এটা হুইসেলিংয়ের মতো শব্দ হয়, যা সংকীর্ণ বায়ু চলাচলের পথ দিয়ে বের হওয়ার কারণে ঘটে থাকে। নিঃশ্বাসে সাঁ সাঁ তখনই হয়, যখন বায়ু চলাচলের পথে প্রদাহ এবং সংকোচনের কারণে শ্বাস নেওয়া কষ্টকর হয়ে যায়। শ্বাস-প্রশ্বাসে সাঁ সাঁ অনুপস্থিত মানেই এই নয় যে, হাঁপানি নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে। শ্বাস-প্রশ্বাসে সাঁ সাঁ অনুপস্থিত থাকতে পারে যদি প্রসারণ অত্যন্ত প্রকট হয় এবং তার জন্য ফুসফুসের কোনও অংশে বায়ু চলাচলকে বাধাগ্রস্থ হয়। - রহমান

 

## আপনার ডাক্তার

দেহঘড়ি পর্ব-১৯_fororder_j5

 মাসিক ঋতুচক্র বন্ধ হওয়া একটি স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়া। সাধারণত ৪৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সে নারীদের মাসিক ঋতুচক্র বন্ধ হয়। তবে অপারেশন করে কোনও নারী যদি তার দুটো জরায়ু ফেলে দেন তাহলেও পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যায়। মেনোপজ কেন হয়, এর লক্ষণ বা উপসর্গ কী, মেনোপজের আগে শারিরীক কী পরিবর্তন আসে, মেনোপজ পরবর্তীকালে কী কী শারিরীক জটিলতা ও মানসিক সমস্যা হতে পারে, এসব জটিলতা ও মানসিক সমস্যার ব্যবস্থাপনাই বা কী – এসব নিয়ে কথা বলতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞরা ডা. ফ্লোরিডা রহমান। রিপ্রোডাক্টিভ মেডিসিন এন্ড এন্ড্রোক্রাইনোলজিতে এফসিপিএস, ডা. ফ্লোরিডা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্মরত স্ত্রী রোগ ও প্রসূতি বিভাগের একজন সহকারী অধ্যাপক হিসাবে।

 

## কি খাব কি খাব না

চা খেলে সবুজ চা-ই খান

দেহঘড়ি পর্ব-১৯_fororder_j6

গ্রিন টি বা সবুজ চা যে মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী সে ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। গ্রিন টিতে থাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ, বি, বি৫, ডি, ই, সি, ই ও এইচ, সেলেনিয়াম, ক্রোমিয়াম,  জিংক, ম্যাঙ্গানিজ ও ক্যাফেইন। এসব উপাদান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে, ওজন কমায় এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এছাড়া গ্রিন টি মস্তিস্ককে উদ্দীপ্ত করে, ত্বকের সৌন্দর্য বজায় রাখে এবং ত্বককে উজ্জ্বল ও সতেজ করে এবং কপালের বলিরেখা প্রতিরোধ করে। আসুন জেনে নিই গ্রিন টি খাওয়ার উপকারিতা:

ওজন কমায়: হজম প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমিয়ে ফেলতে সাহায্য করে গ্রিন টি। এতে থাকা পলিফেনল শরীরের ফ্যাট জারণ প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকর করার মাধ্যমে খাবার থেকে ক্যালোরি তৈরী প্রক্রিয়াকে সহায়তা করে। গ্রিন টির ক্যাটেচিন পেটের মেদ ঝরাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, এ চায়ে থাকা যৌগ এপিগ্যালোক্যাটেচিন গ্যালেট (Epigallocatechin gallate) বা ইজিসিজি একদিনে ৭০ থেকে ১০০ ক্যালোরি পর্যন্ত ফ্যাট বার্ন করতে পারে। এর অর্থ হলো নিয়মিত গ্রিন টি পানের মাধ্যমে বছরে ৭ পাউন্ড পর্যন্ত ওজন কমানো সম্ভব।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: হৃদরোগের ঝুঁকি কমানোর ক্ষেত্রে গ্রিন টি খুবই কার্যকরী। এ চা শরীর থেকে খারাপ কোলেস্টরেল কমিয়ে হার্টকে সুস্থ রাখতে এবং স্ট্রোক থেকে হার্টকে বাঁচাতে সাহায্য করে। বিভিন্ন গবেষণায় এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, গ্রিন টি শরীরে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে, রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করে এবং শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে। এ কারণে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভবনা অনেক কমে যায়।

ত্বক সুস্থ্য রাখে: গ্রিন টিতে থাকে পলিফেনোলিক (Polyphenolic) অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা বার্ধক্য রোধ করে শরীরকে সুস্থ ও সুন্দর রাখতে এবং ত্বকের লাবণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। ত্বকের ক্যান্সার প্রতিরোধেও কার্যকরী এটি। এছাড়া গ্রিন টি ত্বকের রোদে পোড়াভাব কমাতে এবং ব্ল্যাকহেডস বা কালো আঁচিল দূর করতে সাহায্য করে। ব্রণের সমস্যা দূর করার ক্ষেত্রেও কার্যকরী সবুজ চা।

দাঁত ভালো রাখে: নিয়মিত গ্রীন টি গ্রহণ করলে দাঁত ভালো থাকে। কারণ এ চায়ে থাকা ক্যাটেকাইন (caffeine) নামক একপ্রকার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা মুখের ভিতরের বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস ধ্বংস করে। এর ফলে গলায় সংক্রমণসহ দাঁতের বিভিন্ন সমস্যা কমে। এছাড়া ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হওয়ায় ক্ষয় থেকে দাঁত রক্ষা পায় এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: গ্রিন টি ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে এবং ক্যান্সার হলেও তার বিস্তারে ধীর করে। এ চায়ে থাকা ইজিসিজি ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া গ্রিন টির অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আর খনিজ উপাদান শরীরকে সতেজ ও সুস্থ রাখে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে: রক্তে সুগার বা শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে দারুন সাহায্য করে গ্রিন টি। আহারের পর সাধারণত রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পায়। যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাদের রক্তে শর্করা বাড়ে আরও বেশি মাত্রায়। কিন্তু গ্রিন টি শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাই যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাদের উচিৎ নিয়মিত গ্রিন টি গ্রহণ করা।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: গ্রিন টি ইনফ্লুয়েঞ্জা থেকে ক্যান্সার পর্যন্ত সব রকমের রোগের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। এটি দেহকোষকে ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে। ফলে বাড়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। গবেষণায় দেখা গেছে, কোনও কোনও রোগ বিস্তারেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে গ্রিন টি।

সতর্কতা:

গ্রিন টি স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত উপকারী ঠিকই কিন্তু এটি খাওয়ার সঠিক সময় ও নিয়ম না জানলে এ থেকে উপকারের বদলে ক্ষতি হতে পারে। সেকারণে সময় ও সঠিক নিয়ম জেনে গ্রহণ করতে হবে এ চা। সকালে খালি পেটে, খাওয়ার পরপরই কিংবা গভীর রাতে গ্রিন টি পান করা উচিত নয়। গ্রিন টি বেশি পান করাও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। তাই গ্রি টি পান দিনে তিন কাপের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা উচিৎ। - রহমান

‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।