চীনা কমিউনিস্ট পার্টি কেন পারে? (৩)
2021-06-03 16:19:12

জুন ৩: চীনের কুয়াং তুং প্রদেশের তুং কুয়ান শহরের ‘সুন শান হু’ নামক রোবট শিল্পকেন্দ্র হচ্ছে সাজ-সরঞ্জাম উত্পাদনের একটি শিল্প-এলাকা। ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই কেন্দ্র অসংখ্য নব্যতাপ্রবর্তনসংশ্লিষ্ট বৈজ্ঞানিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে  সেবা দিয়েছে। এ কেন্দ্রের প্রতি অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের দৃষ্টিও আকৃষ্ট হয়েছে। কুয়াং তুং প্রদেশের কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুসারে, কুয়াংতুং নবত্যাপ্রবর্তনের দিক দিয়ে ২০২০ সালে বিশ্ব মানে পৌঁছে যায়। এর জন্য উদ্ভাবনের ওপর চীনা কমিউনিস্ট পার্টির বরাবরের গুরুত্ব আরোপের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

একটি শত বছরের পুরানো দল হিসাবে, চীনা কমিউনিস্টি পার্টি (সিপিসি)-র মূল শক্তি হচ্ছে নতুনের সাথে তাল মিলিয়ে চলার দৃষ্টিভঙ্গি। রাশিয়ান বার্তা সংস্থা তাস মনে করে, চীনা কমিউনিস্ট পার্টি ক্রমশ বিকশিত হয়েছে ও চীনকে উন্নয়নের মহাসড়কে পরিচালিত করতে পেরেছে মূলত মার্কসবাদ মেনে চলার কারণে। শুধু তাই নয়, সিপিসি সময়ে সময়ে মার্কসবাদের তাত্ত্বিক ভিত্তিও হালনাগাদ করেছে। এমন তাত্ত্বিক ভিত্তি চীনের আধুনিক উন্নয়নের চাহিদার সাথে বেশি খাপ খায়। রাশিয়ান একাডেমি অফ সায়েন্সেসের ফার ইস্ট ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ এলিওনোরা পিভোভারোভা মন্তব্য করেছেন, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির তাত্ত্বিক উদ্ভাবন হচ্ছে চীনে অর্জিত অভূতপূর্ব সাফল্যের রহস্য।

চীন ১৪১ কোটি জনসংখ্যার সমৃদ্ধ একটি বড় দেশ। এতো বড় দেশের উন্নয়নের জন্য আসলে পৃথিবীতে কোনো উল্লেখযোগ্য মডেল ছিল না। রাশিয়ান কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান জিউগানভ বলেছেন, অনেক অবস্থায় চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সামনে কোনো কোনো প্রশ্নের কোনো উত্তর ছিল না। তারপরও পার্টিকে অব্যাহতভাবে সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালাতে হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় চীনের বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এক নতুন পথ খুঁজে বের করতে হয়েছে সিপিসি-কে।

রাশিয়ান একাডেমি অফ সায়েন্সেসের ফার ইস্ট ইনস্টিটিউটের রাশিয়া-চীন সম্পর্ক গবেষণা ও পূর্বাভাস কেন্দ্রের সিনিয়র গবেষক আলেকজান্ডার মোকলেস্কে বলেন, সিপিসি’র অষ্টাদশ জাতীয় কংগ্রেসের পর চীন আন্তর্জাতিক মঞ্চে আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় অধিক আত্মবিশ্বাস নিয়ে অবস্থান করছে। চীনের উত্থাপিত ‘এক অঞ্চল, এক পথ’, নতুন আকারের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, মানবজাতির অভিন্ন স্বার্থের কমিউনিটি গড়ে তোলা, এবং নতুন ধরনের নিরাপত্তার ধারণাসহ বৈশ্বিক ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত নতুন ধারণা ও নতুন প্রস্তাব বিশ্বের সামনে ধারাবাহিকভাবে এসেছে ও গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।

নতুন দফার বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত বিপ্লব থেকে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জের প্রেক্ষাপটে চীনের ক্ষমতাসীন দল—সিপিসি উপলব্ধি করেছে যে, নব্যতাপ্রবর্তন অব্যাহত রাখলেই কেবল বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা সম্ভব। চীন বৈশ্বিক নব্যতাপ্রবর্তন খাতের ‘শিক্ষার্থী’ থেকে দ্রুতই ‘নেতা’-য় পরিণত হতে পেরেছে মূলত এ কারণেই।

বিশ্ব মেধাস্বত্ব সংস্থার ২০২০ সালের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে চীন থেকে পেটেন্ট আবেদন করা হয়েছে ১৪ লাখ। এক্ষেত্রে চীন বিশ্বের শীর্ষে অবস্থান করছে। ‘গ্লোবাল ইনোভেশন সূচক’ অনুসারে চীন ২০১৫ সালের ২৯তম অবস্থান থেকে ২০২০ সালে উঠে আসে ১৪তম অবস্থানে। চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বলেছে, ২০২০ সালে গোটা চীনে গবেষণা খাতে ব্যয় হয়েছে ২.৪ ট্রিলিয়ন ইউয়ান। স্পেনের একটি বিখ্যাত থিঙ্ক ট্যাঙ্ক রয়্যাল এলকানো ইনস্টিটিউটের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, অন্যান্য দেশের তুলনায় নবত্যাপ্রবর্তন খাতে চীনের উন্নয়ন অভূতপূর্ব।

আর্জেন্টিনার বুয়েনস আয়ারস-এর আর্জেন্টিনা-চীন গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ইগনাসিও ভিলাগ্রান মনে করেন, ব্যাপকভাবে উচ্চাপ্রযুক্তির শিল্পের উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে চীন। এই প্রক্রিয়ায় নব্যতাপ্রবর্তন হচ্ছে দেশটির মূল চালিকাশক্তি। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)