চীনের টিকাই এখন পর্যন্ত ভরসা বাংলাদেশের
2021-05-30 19:55:49

করোনা টিকা সংকটে বন্ধুরাষ্ট্র চীনই এখনো একমাত্র ভরসা বাংলাদেশের। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট চুক্তি অনুযায়ী অক্সফোর্ডের টিকা সরবরাহ করতে ব্যর্থ হওয়ার পর সরকার টিকা সংগ্রহে দৌঁড়ঝাপ শুরু করে। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশের কাছে জরুরি ভিত্তিতে টিকা চায় বাংলাদেশ। কিন্তু কোন দেশ থেকেই সুনির্দিষ্ট কোনো প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়নি। সবশেষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে গ্যাভির ব্যবস্থাপনায় কোভ্যাক্স কর্মসূচির মাধ্যমে ফাইজারের এক লাখের কিছু বেশি টিকা আসবার কথা ছিল ৩০ মে। কিন্তু এ নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে টিকা আজ আসছে না, সময় লাগবে আরও ১০-১২ দিন।
এর মধ্যে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ভুলচুকের পরও আলোচনায় যা খানিকটা অগ্রগতি হয়েছে চীনের সঙ্গে। রাশিয়ার সঙ্গে টিকা কেনা ও উৎপাদনে আলোচনায় অগ্রগতির কথা বলা হলেও দৃশ্যমান শুধু চীনের বিষয়টি। চীনের কাছ থেকে উপহার হিসেবে বাংলাদেশ ৫ লাখ ডোজ টিকা পেয়েছে। অচিরেই পাবে আরও ৬ লাখ। 
এরই মধ্যে প্রথম দফায় চীনের কাছ থেকে পাওয়া ৫ লাখ ডোজ টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়েছে গত ২৫ মে থেকে। ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ চারটি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি পর্যায়ক্রমে এ টিকা দেওয়া হবে চিকিৎসক, নার্স, মেডিকেল টেকনোলজিস্টসহ সম্মুখসারির যোদ্ধাদের। ঢাকা মেডিকেলে ২৯ ও ৩০ মে ৪৫৬ জন চীনা নাগরিককে পরীক্ষামূলকভাবে এ টিকা দেওয়া হয়। 
ঢাকা মেডিকেলে চীনের টিকা প্রয়োগ কার্যক্রমের উদ্বোধন করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, চীন থেকে টিকা আনার চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে। এরই মধ্যে চীন থেকে দেড় কোট টিকা কেনার অনুমোদন দিয়েছে সরকার। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ২৭ মে এক বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়। 
চীনের সিনোফার্মের এ টিকার দাম পড়বে প্রতিডোজ ১০ ডলার। এ হিসেবে দেড় কোটি ডোজ টিকার দাম পড়বে ২৬৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। প্রতিমাসে ৫০ লাখ করে তিন মাসে এ টিকা সরবরাহ করবে সিনোফার্ম। দেশিয় কোনো প্রতিষ্ঠান এ কেনাকাটার সঙ্গে যুক্ত নেই বলেও সরকারের তরফে আশ্বস্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ, দেখা যাচ্ছে পরীক্ষিত বন্ধুরাষ্ট্র চীনের কাছ থেকেই এ পর্যন্ত সরকার টিকাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে সক্ষম হলো- সে উপহার হিসেবে হোক কিংবা কেনার মাধ্যমে।
এদিকে, দেশে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু কিছুটা কমলেও সার্বিক পরিস্থিতি এখনো নাজুক বলা চলে। সংক্রমণ হার এখনো ১০ শতাংশের এদিক-ওদিকে ওঠানামা করছে। এরই মধ্যে দেশে আরও ১৩ জনের মধ্যে ভারতীয় ধরন শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ৭ জনই সীমান্তবর্তী জেলা চাপাইনবাবগঞ্জের। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে করোনার ভারতীয় ধরনের সামাজিক সংক্রমণ শুরু হয়েছে। কারণ ভারত সফর করেননি এমন কয়েক জনের মধ্যেও এ ধরন পাওয়া গেছে। 
সংক্রমণ ঠেকাতে ২৫ মে থেকে চাপাইনবাবগঞ্জ জেলায় বিশেষ লকডাউন চলছে। মঙ্গলায়ও দেওয়া হয়েছে কঠোর লকডাউন। পাশাপাশি নওগাঁ, নাটোর, সাতক্ষীরা, যশোর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া ও খুলনায় জেলায় কঠোর লকডাউন দিতে সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞ কমিটি। এরই মধ্যে ৩০ মে সারাদেশে চলমান লকডাউন ৭ দিন বাড়িয়ে ৬ জুন পর্যন্ত করেছে সরকার। 
এমন পরিস্থিতি আরেক আশঙ্কা নিয়ে এসেছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা কালো ছত্রাক। ভারতের দিল্লিতে মহামারি আকারে ছড়ানো ব্ল্যাক ফাঙ্গাস রোগী পাওয় গেছে দেশে। রাজধানীর বারডেমে একজন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এক জন হাসপাতাল ছেড়ে গেছেন। আর একজন মারা গেছেন। তবে চিকিৎসকরা বলছে, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস করোনার মতো ছোয়াছে নয়।
এ অবস্থায় ১৩ জুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সরকার। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জানিয়েছেন, করোনা সংক্রমণ হার ৫ শতাংশের নিচে নামলেই কেবল খোলা হবে স্কুল-কলেজ। করোনা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি না হলে এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের টিকার ব্যবস্থা না করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা সঙ্গত নয় বলেই মনে করেন শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা। 
মাহমুদ হাশিম
ঢাকা স্টেশন, চীন আন্তর্জাতিক বেতার।