সুপ্রিয় শ্রোতা, আপনারা শুনছেন চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান। এখন আপনাদের জন্য রয়েছে সাপ্তাহিক আয়োজন-'হপ্তানামা'। আপনাদের সঙ্গে আছি আমি ওয়াং তান হোং রুবি এবং আমি মোঃ এনামুল হাসান।
প্রথমে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের গত এক সপ্তাহের কর্ম তত্পরতা তুলে ধরছি...
গত ২৪ মে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট নুয়েন সুয়ান ফুচের সঙ্গে এক ফোনালাপ করেছেন।
ফোনালাপে প্রেসিডেন্ট সি নুয়েনের মাধ্যমে দেশটির রাজনৈতিক দলের সাধারণ সম্পাদক নুয়েন ফু ত্রংকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান। সি বলেন, দু’দেশের ঐতিহ্যিক মৈত্রী হলো দু’দেশ ও দু’দেশের পার্টির অভিন্ন মূল্যবান সম্পদ। দু’দেশের কৌশলগত উচ্চতা ও সুদূরপ্রসারী দিক থেকে দু’দেশ ও দু’দেশের পার্টির সম্পর্ক বিবেচনা করা উচিত্ বলে মন্তব্য করেন সি চিন পিং। চীন সরকার ও সিপিসি ভিয়েতনামের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ নীতি অনুসরণ করছে। চীনের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নকে কূটনৈতিক অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য নেতৃবৃন্দের প্রশংসা করেন সি। চীন ভিয়েতনামের সঙ্গে অব্যাহতভাবে দু’দেশের সার্বিক ও কৌশলগত সহযোগিতা এগিয়ে নিতে, চীন ও ভিয়েতনামের অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি গঠন করতে এবং দু’দেশ ও দু’পার্টির সম্পর্ক উন্নয়নে নতুন শক্তি যোগাতে চায়।
একই দিন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এবং ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি এক ফোনালাপ করেছেন। সি চিন পিং বলেন, চীন দু’দেশের সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয় এবং ইরানের সঙ্গে দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করে চীন-ইরান সার্বিক কৌশলগত অংশীদারি সম্পর্ক গভীর করতে চায়। চীন দৃঢ়ভাবে ইরানের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষায় সমর্থন দিয়ে যাবে এবং অব্যাহতভাবে ইরানের মহামারী প্রতিরোধে যথাসাধ্য সাহায্য দেবে। চীন ইরানের সঙ্গে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে যোগাযোগ ও সহযোগিতা জোরদার করে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে চায়।
গত ২১ মে সন্ধ্যায় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এক ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে গ্লোবাল হেলথ সামিটে যোগ দেন এবং ‘হাতে হাত রেখে মানব জাতির অভিন্ন স্বাস্থ্যের কমিউনিটি গড়ে তোলা’ শিরোনামে এক গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন।
ভাষণে তিনি বলেন, মানুষের জন্যই করোনাভাইরাসের মহামারি প্রতিরোধ করতে হবে এবং এজন্য মানুষের ওপরই নির্ভর করতে হবে। তিনি বিশ্বের মহামারি প্রতিরোধে চীনের নতুন ব্যবস্থার কথা ঘোষণা করেন।
চীন আগামী তিন বছরে আরো তিন বিলিয়ন ডলার আন্তর্জাতিক সহায়তা দেবে। যাতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মহামারি প্রতিরোধ এবং অর্থনীতি ও সমাজের উন্নয়নে সহায়তা করা যায়।
চীন বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে আরও বেশি কোভিড-১৯ টিকা দেবে।
চীন নিজ দেশের টিকা প্রতিষ্ঠানকে উন্নয়নশীল দেশে প্রযুক্তি হস্তান্তরে উত্সাহ দেবে বলেও জানান প্রেসিডেন্ট সি।
গত ২০ মে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং পূর্ব তিমুর প্রতিষ্ঠার ১৯তম বার্ষিকী উপলক্ষে দেশটির প্রেসিডেন্টকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
অভিনন্দন বার্তায় সি চিন পিং বলেন, চীন ও পূর্ব তিমুর বন্ধুত্বপূর্ণ সুপ্রতিবেশী। দু’দেশ একে অপরকে সম্মান করে, বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতা করে, এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে চলছে। চীন পূর্ব তিমুরের মহামারী প্রতিরোধে অনেক গুরুত্বারোপ করে। তাই এ ব্যাপারে পূর্ব তিমুরকে যথাসাধ্য সাহায্য দিতে ইচ্ছুক চীন।
সি চিন পিং চীন-পূর্ব তিমুর সম্পর্ক উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে দেশটির প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মিলে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ নির্মাণের পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাস্তব সহযোগিতা গভীরতর করার আগ্রহ ব্যক্ত করেন। এসবের মাধ্যমে দু’দেশ ও জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করতে চান তিনি।
গত ১৯ মে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বেইজিং থেকে এক ভিডিও সংযোগের মাধ্যমে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে একযোগে দু’দেশের পারমাণবিক শক্তি সহযোগিতামূলক প্রকল্প নির্মাণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
চীনে নির্মিতব্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে থিয়ান ওয়ান পারমাণবিক স্টেশন ও সু তা ফু পারমাণবিক স্টেশন।
২. ইউয়ান লং ফিংয়ের চেতনা ধারণ করার নির্দেশনা দিলেন সি চি পিং
গত ২২ মে চীনের প্রকৌশল একাডেমির শিক্ষাবিদ ও ‘প্রজাতন্ত্র পদক’ লাভকারী ইউয়ান লং ফিং ৯১ বছর বয়সে মারা যান।
গত ২৪ মে তাঁর শেষকৃত্যানুষ্ঠান ছাং শা শহরে আয়োজিত হয়েছে। এতে অংশ নিয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং তাঁর চেতনা ধারণ করতে সকলের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছেন। সি চিন পিং বলেন, ইউয়ান লং ফিং চীনের খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি প্রযুক্তির সৃজনশীলতা এবং বিশ্ব খাদ্য উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। সিপিসির সকল সদস্য, সরকারের সকল কর্মকর্তা এবং বিজ্ঞান-প্রযুক্তি অনুরাগীদের উচিত ইউয়ান লং ফিংয়ের কাছ থেকে তাঁর সিপিসি-প্রেম, দেশপ্রেম ও জন-প্রেমের চেতনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা এবং তাঁর সারা জীবন সৃজনশীলতার সঙ্গে জমিতে চাষাবাদ করার মহান চরিত্র থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা।
জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, বিভিন্ন দেশের সরকার এবং গোটা বিশ্বের গণমাধ্যম ও অনলাইন ব্যবহারকারীরা চীনের ‘হাইব্রিড ধানের জনক’ নামে খ্যাত ইউয়ান লং ফিংকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছেন।
আন্তর্জাতিক সমাজে হাইব্রিড ধান ‘চীনের পঞ্চম আবিষ্কার’ নামে পরিচিত। পরিসংখ্যা অনুসারে, গত দশ বছরে ইউয়ান লং ফিং ৮০টিরও বেশি উন্নয়নশীল দেশের ১৪ সহস্রাধিক কৃষিবিদকে হাইব্রিড ধানের প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।
বর্তমানে ইউয়ানের গবেষণালব্ধ হাইব্রিড ধান ভারত, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, ফিলিপিন্স, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল ও আফ্রিকার দেশগুলোয় ব্যাপকভাবে চাষ হচ্ছে। এমনকি মাদাগাস্কারের মুদ্রায় ইউয়ানের গবেষণালব্ধ হাইব্রিড ধানের ছবি আছে।
ইউয়ান লং ফিং ও তাঁর গবেষণাদল বিশ্বের খাদ্য-নিরাপত্তা উন্নয়ন, ক্ষুধা ও দারিদ্র্য হ্রাস এবং বিশ্বের শান্তি সুরক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
আসলে বিশ্বব্যাপী খাদ্য-ঘাটতি ও দারিদ্র্য সমস্যার সমাধানে ইউয়ানের সাফল্য হলো চীনা অবদানের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
হাইব্রিড ধান উন্নয়নের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর কল্যাণ করা ছিল ইউয়ান লং ফিংয়ের সারাজীবনের সাধনা। তাঁর সাধনায় এ কথা আবারও প্রমাণিত হয়েছে যে, চীন বিশ্বের জন্য এক অবারিত সুযোগ, সমস্যা নয়।
রুবি/এনাম