বাংলাদেশে করোনাভাইরাস ও ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণ
2021-05-28 16:59:21

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মাঝেই ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে জনমনে তৈরি হয়েছে আশঙ্কা ও উত্তেজনা। সাধারণত করোনাভাইরাসে আক্রান্তের পর সেরে ওঠা ব্যক্তিদের মধ্যেই ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ থাকলেও যথেষ্ট কঠোরতা না থাকায় করোনার ‘ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট’ ও ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের’ প্রবেশ বন্ধ করা যাচ্ছে না বলে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো। এদিকে, চীনের সিনোফার্ম থেকে কোভিড-১৯ টিকার দেড় কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকারের ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

এসব বিষয়ে বিস্তারিত শুনুন আজকের সংবাদ পর্যালোচনায়।

 

সর্বশেষ পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে মোট আক্রান্ত হয়েছে ৪৯৪,২০৯জন; সুস্থ হয়েছে ৪২৬,৭২৯ এবং মারা গেছেন ৭,১২৯জন। এরই মধ্যে নতুন আরেক উদ্বেগ- ব্ল্যাক ফাঙ্গাস হানা দিয়েছে দেশে। তবে, ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত নিয়ে কিছু বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি দুই ব্যক্তির শরীরে ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ এর উপস্থিতি পাওয়া গেছে বলে দাবি করেন বারডেম হাসপাতালের চিকিৎসক। এদের মধ্যে একজন মারাও গেছেন। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, ওই দুই রোগী ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত কিনা তা নিশ্চিত নয়। অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত কিনা তা পরীক্ষা করার যন্ত্র বারডেম হাসপাতালে নেই। তাই নিশ্চিত না হয়ে কিছু বলা ঠিক না।

ভারতের দিল্লিতে বৃস্পতিবার এক দিনে ১৫৩জন ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর পরই দিল্লিতে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসকে মহামারি রোগ হিসেবে ঘোষণ করেন দিল্লির কর্মকর্তারা। তার আগে, রাজস্থানের এক শিশুর শরীরে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস শনাক্ত হয়। এ ছাড়া গুজরাটের আহমেদাবাদে বছর পনেরোর এক কিশোরের শরীরেও মিলেছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। ভারতে ২৯টি রাজ্যে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসকে মহামারি ঘোষণা করা হয়েছে। দেশটিতে মোট ১১ হাজার ৭১৭জন মিউকরমাইকোসিস বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ভারতের কেন্দ্রীয় সার ও রসায়নমন্ত্রী ডিভি সদানন্দ গৌড়া গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ তথ্য জানান।

 

এরই মধ্যে কয়েকটি দেশে বাংলাদেশের বিমান যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। কোনো কোনো দেশের সঙ্গে ফের বাংলাদেশের যোগাযোগ শুরু হলেও আবারও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। করোনার ‘ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট’ গোটা বিশ্বকে ভাবিয়ে তুলেছে। এ ছাড়াও ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ভাইরাস দেশটিকে বিপর্যয়কর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্ত বন্ধ থাকলেও সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন মানুষ যাতায়াত করছে। আর ওই সব মানুষ করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ভাইরাস বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।

গত দুই মাসে প্রায় অর্ধশতাধিক দেশ কয়েক দফায় বাংলাদেশিদের যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এতে করে বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

 

এদিকে আশার খবর হলো, বাংলাদেশে জরুরি ব্যবহারের জন্য করোনাভাইরাসের চতুর্থ ভ্যাকসিন হিসেবে ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। এর আগে কোভিডশিল্ড, স্পুটনিক ভি, সিনোফার্মের টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছিল সরকার।

পাশাপাশি, চীনের সিনোফার্ম থেকে প্রতি ডোজ ৮৫০ টাকায় দেড় কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ১৯তম সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। প্রতি ডোজ ভ্যাকসিন ১০ ডলারে কেনা হবে। এতদিন ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড টিকা কিনেছিল বাংলাদেশ। ওই টিকার দাম পড়েছিল প্রতি ডোজ ৫ ডলার।

 

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্র জানা গেছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগী কোভ্যাক্স গ্রুপ থেকে ফাইজারের টিকা দেশে আসছে। কোভ্যাক্স থেকে প্রথম ধাপে বিনামূল্যে দেশের ১১ শতাংশ মানুষের জন্য টিকা আসার কথা রয়েছে। পরে সরকার চাইলে ওই গ্রুপ থেকে কিনে আরো টিকা আনতে পারবে। কোভ্যাক্স থেকে প্রথম চালান হিসেবে ফাইজারের এক লাখ ৬২০ ডোজ টিকা এবং এর সাথে আনুষঙ্গিক উপকরণ আগামী সপ্তাহে দেশে পৌঁছবে। তবে এই টিকা কিভাবে দেয়া হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। অক্সফোর্ডের টিকা দেয়া শুরু হয় গত ২৭ জানুয়ারি। আর গত মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে চীনের টিকা দেয়া।