মে ২৭: ২০২১ সালের ৩০ এপ্রিল বিকেলে বেইজিংয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশ সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ এবং চীনা একাডেমি অফ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষাবিদ ডঃ ওয়াং জিননান নতুন পরিস্থিতিতে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সভ্যতার নির্মাণকে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন। এতে অংশগ্রহণকারী অতিথিদের সবাই চীনা কমিউনিস্টি পার্টি (সিপিসি’র) কেন্দ্রীয় কমিটির পলিট ব্যুরোর সদস্য।
চীনা কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরোর সম্মিলিত শিক্ষাব্যবস্থা ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এ পর্যন্ত এটি বেশ কয়েকবার সমষ্টিগত শিক্ষাসভার আয়োজন করে। আর শিক্ষাসভাগুলোর আলোচ্য বিষয় ছিল অর্থ, সামাজিক সুরক্ষা, মিডিয়া, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বিগ ড্যাটা, ও পরিবেশ সুরক্ষা ইত্যাদি। মার্কিন ‘নিউইয়র্ক টাইমস’-এর প্রতিবেদক হাওয়ার্ড ফ্রান্স বিশ্বাস করেন যে, নেতা, বিশেষজ্ঞ ও পণ্ডিতদের মধ্যে নিয়মিত পরামর্শের এই অনুশীলনের মাধ্যমে ‘চীন সত্যই গুরুত্বপূর্ণ একটি জানালা খুলে দিয়েছে’। হাঙ্গেরিয়ান ‘এইচভিজি’ পত্রিকা মনে করে, ‘শিক্ষা চীনা শীর্ষ নেতাদের দিগন্ত বিস্তৃত করেছে’।
বস্তুত, বাইরের জগতের অব্যাহত পরিবর্তনের মুখে শেখার মাধ্যমে আত্মনিয়ন্ত্রণ ও সাংগঠনিক প্রাণশক্তি জোরদার করা সিসিপি’র অবিচ্ছিন্ন সাফল্যের অন্যতম মূল কারণ। প্রবীণ চীনা নেতাদের সাক্ষাত্কার গ্রহণকারী আমেরিকান লেখক ডঃ রবার্ট লরেন্স কুহন বলেছেন: ‘চীনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রবীণ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে আমি বুঝতে পারলাম যে, বিশ্বের যে-কোনো দেশের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের চেয়ে তারা বেশি জ্ঞান রাখেন।’
১৯৩৮ সালের প্রথম দিকে, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মাও সেতুং স্পষ্টভাবে ‘গোটা সিপিসি’র মধ্যে অধ্যয়নের প্রতিযোগিতা’ এবং ‘পুরো দলকে একটি বড় স্কুলে পরিণত করার’ আহ্বান জানিয়েছিলেন। অধ্যয়ন ও অনুশীলনের সংমিশ্রণের মাধ্যমে সিসিপি জাপানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভ করতে সক্ষম হয় এবং এভাবেই প্রতিষ্ঠিত হয় গণপ্রজাতন্ত্রী চীন তথা নয়াচীন।
গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে চীন সবার আগে প্রথম সমাজতান্ত্রিক দেশ সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে। এই শিক্ষা দেশের শিল্পায়নের ভিত্তি স্থাপন করে। ১৯৭৮ সালে চীনে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সে বছর, চীনা ক্ষমতাসীন দল পর্যায়ক্রমে চারটি দল পাঠায় জাপান, পশ্চিম ইউরোপ, পূর্ব ইউরোপ এবং হংকং ও ম্যাকাওয়ে। এতে দলের সদস্যরা শুধু ওসব দেশের সফলার অভিজ্ঞতা থেকে শেখেননি, বরং তাদের ব্যর্থতার অভিজ্ঞতাও শিখেছেন।
মার্কিন জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক শেন তা ওয়েই মনে করেন, চীনে একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক নকশা রয়েছে, আর সেটি হচ্ছে সকল স্তরে পার্টি স্কুল ও প্রশাসনিক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থা। এটি কেবলমাত্র সর্বস্তরের সরকারী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণই দেয় না, ‘থিঙ্ক ট্যাঙ্ক, সংস্কার ধারণা এবং লালিত নীতিমালার কাজে ভূমিকাও পালন করে’।
জার্মানির রাজনীতিবিদ বিস্কি যিনি ইউরোপীয় বাম দলের চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির দুর্দান্ত সাফল্যের অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে শেখা। যতক্ষণ পর্যন্ত চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ও নেতৃবৃন্দ শিখতে থাকবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত চীনের উন্নয়নের ইঞ্জিন চালু থাকবে। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)