আকাশ ছুঁতে চাই ২৩:নারী উন্নয়নে বাংলাদেশের অর্জন কম নয়
2021-05-27 20:13:59

কী থাকছে এবারে আমাদের অনুষ্ঠানে

১. সাক্ষাৎকার: ফওজিয়া খোন্দকার ইভা

২. চীনা নারী

৩. চীন রিপোর্ট

৪. বাঙালি নারিী

৫. গান

চীন আন্তর্জাতিক বেতারের ঢাকা স্টেশন থেকে প্রচারিত আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। কেমন আছেন আপনারা? আশাকরি সবাই সুস্থ আছেন, ভালো আছেন।আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি সেইসব নারীর সঙ্গে যারা সাফল্যের আকাশ স্পর্শ করেছেন অথবা স্পর্শ করতে চান। আমাদের আজকের অতিথি জেন্ডার স্পেশালিস্ট, নারী অধিকার অ্যাকটিভিস্ট  নারী বিষয়ক বইয়ের লেখক  এবং বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার কনসালটেন্ট ফওজিয়া খোন্দকার ইভা।

ভার্চুয়ালি তিনি যুক্ত হয়েছেন আমাদের সঙ্গে। আমাদের অনুষ্ঠানে আপনাকে স্বাগত জানাই।

বাংলাদেশে নারীর অগ্রযাত্রাকে ছোট করে দেখার অবকাশ নেই-ফওজিয়া খোন্দকার ইভা

আকাশ ছুঁতে চাই ২৩:নারী উন্নয়নে বাংলাদেশের অর্জন কম নয়_fororder_0527-1

আকাশ ছুঁতে চাই ২৩:নারী উন্নয়নে বাংলাদেশের অর্জন কম নয়_fororder_0527-2

 

একজন জেন্ডার স্পেশালিস্ট হিসেবে ফওজিয়া খোন্দকার ইভা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের নারী উন্নয়নে কাজ করছেন। তিনি একেবারে তৃণমূল পর্যায়েও কাজ করেছেন। তিনি মনে করেন বাংলাদেশের নারী উন্নয়নে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। তিনি ইউএনডিপিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে জেন্ডার প্রশিক্ষক ও কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে নারীর অগ্রযাত্রাকে ছোট করে দেখার অবকাশ নেই।’ বিভিন্ন পেশায় আজ নারীর সফল অংশগ্রহণ চোখে পড়ে। নারীরা অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখছেন। তারা নিজেদের প্রতিভা বিকাশ করছেন। তবে বাংলাদেশের নারীর চলার পথকে সুগম করতে হলে এবং নারীর ক্ষমতায়নকে বাড়াতে হলে নিরাপত্তা নিশ্চিত  করতে হবে।  ইভা মনে করেন, নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে নারীর প্রতি সকল প্রকায় সহিংসতায় রাষ্ট্রকে জিরো টলারেন্স নীতিতে থাকতে হবে।

জেন্ডার স্পেশালিস্ট হিসেবে কাজ করতে গিয়ে তিনি কমলা ভাসিনের বই অনুবাদ করেছেন। ইভা মনে করেন, আজকাল অ্যাকটিভিজম অনেকটা কমে গেছে। হয়তো চাকরি রক্ষার জন্য অনেকে কাজ করছেন। কিন্তু সত্যিকারের আগ্রহ, আদর্শগত দৃঢ়তা থেকে অনেকটা সরে গেছেন অনেকে। এটা ঠিক নয় বলে তার মনে হয়। তিনি মনে করেন নারীর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য অবশ্যই অ্যাকটিভিস্টদের প্রয়োজন।

তিনি ব্যক্তি জীবনের চ্যালেঞ্জগুলোর কথা বলেন। পরিবারের সহযোগিতা পেয়েছিলেন বলে তার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা সহজ হয়েছে। তিনি নারীকে দৃঢ় মনোবল নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

 

 

সমাজকে স্বাস্থ্য সেবা দিচ্ছেন চিকিৎসক প্যান চিপিং

আকাশ ছুঁতে চাই ২৩:নারী উন্নয়নে বাংলাদেশের অর্জন কম নয়_fororder_0527-3

আকাশ ছুঁতে চাই ২৩:নারী উন্নয়নে বাংলাদেশের অর্জন কম নয়_fororder_0527-4

প্যান চিপিং নামে একজন নারী ডাক্তার ৩০ বছর ধরে কুয়াংসি চুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের একটি গ্রামে নিঃস্বার্থভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।  গ্রামের বাসিন্দাদের যেকোনো সহযোগিতায় পাশে থাকা এবং স্বাস্থ্য রক্ষায় কাজ করে  যাওয়াই প্যানের উদ্দেশ্য।

ইয়াও জাতিগোষ্ঠীর অন্যতম শাখা হংয়াও এবং তারা লাল রঙের পোশাক বেশি পরিধান করে থাকেন।   প্যান চিপিং এ জাতিগোষ্ঠীরই একজন। তিন দশক ধরেই এ গ্রামের বাসিন্দাদের চিকিৎসক হিসেবে কাজ করছেন তিনি।  তার প্রধান দায়িত্ব হলো প্রায় দেড় হাজার গ্রামবাসীর স্বাস্থ্য সেবা দান করা। 

দক্ষিণ চীনের কুয়াংসি চুয়াং এর সিয়াওচাই গ্রাম এবং লংচি শহরটি ফুপিংবাও মাউন্টেনের পাদদেশে অবস্থিত, যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১,৯০০ মিটারেরও বেশি উপরে।  

১৯৮৮ সালে চিপিং গ্রামের অনুন্নত চিকিৎসা পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য কাউন্টি হেলথ স্কুলে মেডিসিন পড়তে গিয়েছিলেন। কারণ গ্রামবাসীদের চিকিৎসা সেবা পাওয়া অত্যন্ত কঠিন ছিল । চিকিৎসার অভাবে ছোটখাটো অসুস্থতা প্রায়শই দেরি হয়ে গুরুতর অবস্থায় পরিণত হতো।

১৯৯০ সালে, পড়াশোনা শেষ করার পরে, প্যান একজন গ্রাম্য চিকিৎসক হিসাবে কাজ করার জন্য সিয়াওচাই গ্রামে ফিরে আসেন এবং তিনি এতো বছর ধরেই মানুষের সেবায় কাজ করে যাচ্ছেন। 

তিনিই এ গ্রামের প্রথম চিকিৎসক যিনি আনুষ্ঠানিকভাবে সব প্রশিক্ষণ পেয়েছেন।  যে কোনো প্রয়োজনে বাসিন্দাদের সাহায্যে তিনি এগিয়ে আসেন। এমনকি ঝড় বৃষ্টির দিনেও খবর পাওয়া মাত্রই মানুষের দরজায় গিয়ে উপস্থিত হন। প্রতিদিন গ্রামের প্রবীন সদস্যদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নেন। তাদের পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি দীর্ঘস্থায়ী কোনো রোগের ক্ষেত্রে পরামর্শও দেন তিনি।

নিজেকে সেবা দানে এমনভাবে উৎসর্গ করে তিনি শুধু প্রশংসাই কুড়াননি বরং অর্জন করে নিয়েছেন মানুষের আস্থা এবং পরম ভালোবাসা।  

বর্তমানে এ অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের সাথে সাথে জেলায় জেলায় চিকিৎসা কেন্দ্র বেড়েছে। পাশাপাশি ডাক্তারও বেড়েছে।  তবু প্যান আগের মতোই চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। 

সুপ্রিয় শ্রোতা এখন শুনবেন শিল্পী চেন চিয়ে ইর  কন্ঠে একটি গান। গানটির শিরোনাম হলো নিখুঁত প্রেম সুপ্রিয় শ্রোতা আপনারা শুনছেন, চীন আন্তর্জাতিক বেতার থেকে প্রচারিত অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই।  এখন শুনবেন চীনের বিখ্যাত নারী লিন হুইয়িনের কথা।

লিন হুইয়িন

আকাশ ছুঁতে চাই ২৩:নারী উন্নয়নে বাংলাদেশের অর্জন কম নয়_fororder_0527-5

আকাশ ছুঁতে চাই ২৩:নারী উন্নয়নে বাংলাদেশের অর্জন কম নয়_fororder_0527-7

আকাশ ছুঁতে চাই ২৩:নারী উন্নয়নে বাংলাদেশের অর্জন কম নয়_fororder_0527-6

লিন হুইয়িন চীনের একজন অত্যন্ত বিখ্যাত নারী, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এবং রবীন্দ্রনাথের স্নেহধন্য। তিনি চীনের প্রথম নারী আর্কিটেক্ট।  লিন হুইয়িন এবং তার স্বামী লিয়াং সিচেং দুজনকেই চীনের আধুনিক স্থাপত্যবিদ্যার জনক বলা হয়।  তাঁরা নর্থইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯২৮ সালে নতুন প্রতিষ্ঠিত আর্কিটেকচার বিভাগে এবং পরবর্তি সময়ে ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। তারা দুজনেই চীনের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের পুনর্র্জীবনের জন্য কাজ করেছেন। চীনের প্রাচীন স্থাপত্যগুলো রক্ষার কাজে তারা গৌরবময় ইতিহাসের জন্ম দিয়েছেন।

লিন হুইয়িনের জন্ম ১৯০৪ সালের ১০ জুন হাংচৌতে এক সম্ভ্রান্ত ও ধনাঢ্য পরিবারে।  সেসময় নারীদের শিক্ষার পথ খুব সুগম ছিল না। তবে পারিবারিক অবস্থা অনুকুল থাকায় তিনি ইংল্যান্ডে ও আমেরিকায় শিক্ষাগ্রহণ করেন। তরুণ বয়স থেকেই তিনি সাহিত্য রচনা শুরু করেন এবংকবিতা, গল্প, উপন্যাস লিখে খ্যাতি পান।

লিন এবং লিয়াং দুজনেই পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তারা দুজনেই আর্কিটেকচারে পড়তে চেয়েছিলেন কিন্তু নারী বলে লিন কে ভর্তি করা হয়নি। লিন তখন স্কুল অব ফাইন আর্টসে শিক্ষা গ্রহণ করেন , মঞ্চসজ্জায় দক্ষতা অর্জন করেন এবং সেসময় থেকেই মঞ্চ নাটকের প্রতি তার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি  স্বামীর সহযোগিতায় আর্কিটেকচারও পড়েন।

১৯২৪ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন চীন ভ্রমণ করেন লিন হুইয়িন এবং তার বন্ধু কবি সু চিমো কবিগুরুর দোভাষী হিসেবে কাজ করেন এবং কবির স্নেহ লাভ করেন। তিনি রবীন্দ্রনাথের চিত্রা নাটকে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করে বিপুল খ্যাতি পান।

লিন হুইয়িন প্রাচীন চীনা স্থাপত্য শিল্প বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ছিলেন।  তিনি চীনের প্রাচীন স্থাপত্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার একজন অগ্রণী ব্যক্তিত্ব।

তার সাহিত্য রচনা এবং স্থাপত্যে অবদান দুটিই চিরস্মরণীয়। তিনি দেশে ও বিদেশে অনেক সম্মাননা অর্জন করেন। ১৯৫৫ সালের পহেলা এপ্রিল বেইজিংয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তখন তার বয়স ছিল মাত্র পঞ্চাশ বছর।

 

 

বাংলার বিখ্যাত নারী

নূরজাহান বেগম

আকাশ ছুঁতে চাই ২৩:নারী উন্নয়নে বাংলাদেশের অর্জন কম নয়_fororder_0527-8

বাংলাদেশের নারীদের সাংবাদিকতা জগতের কিংবদন্তি নূরজাহান বেগম। ১৯২৫ সালের ৪ জুন চাঁদপুর জেলার চালিতাতলী গ্রামে তার জন্ম। শৈশব থেকেই তিনি পরিবারের সঙ্গে কলকাতায় প্রতিপালিত হন। তার বাবা মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন ছিলেন বিখ্যাত সওগাত পত্রিকার সম্পাদক।

নূরজাহান বেগমের শিক্ষা জীবন শুরু হয় বেগম রোকেয়া প্রতিষ্ঠিত সাখাওয়াৎ মেমোরিয়াল স্কুলে। লেডি বেব্রোন কলেজ থেকে ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। মূলত বাবার অনুপ্রেরণাতেই তাঁর সাহিত্য রচনা ও সাংবাদিকতা জীবন শুরু হয়। সওগাত পত্রিকার অফিসে সেসময় নিয়মিত সাহিত্য আসর বসতো যাতে অতিথি হিসেবে আসতেন কাজী নজরুল ইসলাম, আবুল মনসুর আহমেদ, আবুল কালাম শামসুদ্দীন ইব্রাহীম খাঁ প্রমুখ বিখ্যাত সাহিত্যিক। এদের কাছ থেকে নূরজাহান বেগম তার সাহিত্য চেতনা ঋদ্ধ করেন। ১৯৪৭ সালে নাসিরুদ্দীন আহমেদ বেগম পত্রিকার প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথম চার মাস এর সম্পাদক ছিলেন কবি সুফিয়া কামাল। শুরু থেকেই ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ছিলেন নূরজাহান বেগম।

নূরজাহান বেগমের স্বামী ছিলেন প্রখ্যাত সাংবাদিক ও সাহিত্যিক রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই। ১৯৫০ সালে সপরিবারে ঢাকায় চলে আসেন নূরজাহান নবেগম।  ঢাকায়  বেগম পত্রিকার প্রকাশনা শুরু হয় নূরজাহান বেগমের সম্পাদনায়। এই পত্রিকার উপদেষ্টা ছিলেন কবি সুফিয়া কামাল।  বেগম পত্রিকার মাধ্যমেই বাংলাদেশের নারীরা সাংবাদিকতা শুরু করেন। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে প্রায় সকল প্রতিষ্ঠিত নারী লেখক বেগমে লেখা প্রদান করেন। মূলত নূরজাহান বেগমের উৎসাহেই বাংলাদেশের নারীরা লেখালেখি ও সাংবাদিকতা জগতে এগিয়ে আসেন একথা বলা চলে।

পত্রিকা সম্পাদনার পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, বাংলাদেশ লেখিকা সংঘসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমাজসেবামূলক কাজ করেছেন।

রোকেয়া পদক, অনন্যা সাহিত্য পুরস্কারসহ দেশী  ও বিদেশ অনেক পুরস্কার ও সম্মান পেয়েছেন তিনি। ২০১৬ সালের ২৩ মে মৃত্যুবরণ করেন নূরজাহান বেগম।

তিনি বাংলাদেশের নারীর অগ্রযাত্রায় অন্যতম পথিকৃৎ।

প্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা। অনুষ্ঠানটি কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না কিন্তু। আমাদের অনুষ্ঠান আপনারা সবসময় শুনতে পাবেন, ঢাকায় এফ এম ১০২ এবং চট্টগ্রামে এফ এম ৯০ মেগাহার্টজে এবং অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজে। জেনে নিন আমাদের ইমেইল অ্যাডরেস, cmg.bangla@gmail.com আমাদের ফেসবুক পেজ facebook.com/CRIbangla এবং facebook.com/CMGbangla এবংআমাদের সাক্ষাৎকারগুলো ইউটিউবে দেখতে পাবেন। youtube.com/CMGbangla.

আজ এ পর্যন্তই। সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন। আবার কথা হবে। চাই চিয়েন।

সার্বিক  সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

প্যান চিপিং বিষয়ক প্রতিবেদন: রওজায়ে জাবিদা ঐশী

  অডিও সম্পাদনা:  হোসনে মোবারক সৌরভ