একাডেমিশিয়ান ইউয়ান লোং পিং ও বাংলাদেশের সম্পর্ক
2021-05-25 14:25:23

একাডেমিশিয়ান ইউয়ান লোং পিং ও বাংলাদেশের সম্পর্ক_fororder_微信图片_20210525161111

মে ২৫: ‘সঙ্কর ধানের জনক’, চাইনিজ একাডেমি অফ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একাডেমিশিয়ান এবং ‘প্রজাতন্ত্র পদক’ বিজয়ী ইউয়ান লোং পিং, ২০২১ সালের ২২শে মে ৯১ বছর বয়সে মারা গেছেন। একাডেমিশিয়ান ইউয়ান লোং পিংয়ের সঙ্কর ধান বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কা-সহ দক্ষিণ এশিয়ার নানা দেশে চাষ করা হয়। এটি স্থানীয় খাদ্য উত্পাদন বৃদ্ধিতে অসামান্য অবদান রেখেছে। আজকের সংবাদ পর্যালোচনায় শুনুন বিজ্ঞানী ইউয়ান লোং পিং এবং বাংলাদেশের সম্পর্কের ঘটনা।

 

কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশের মোট বার্ষিক শস্য উত্পাদন অনেক কম ছিল। পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০১৮ সালে বাংলাদেশের ধান উত্পাদনের পরিমাণ ছিল মাত্র ৩৬ মিলিয়ন টন। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশের মোট ধান উত্পাদনের পরিমাণ ছিল দুই কোটি টনেরও কিছু বেশি এবং দেশে গড়ে বার্ষিক ঘাটতি ছিল এক মিলিয়ন টনেরও বেশি। এ কারণে বিদেশ থেকে চাল আমদানি করতে হতো। ভৌগোলিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উপকূলে অবস্থিত এবং প্রায় দেড় হাজার বর্গকিলোমিটার ভূমির অঞ্চল। বাংলাদেশের ৫৫০ কিলোমিটার উপকূলরেখা-সহ পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা রয়েছে। অর্থাত্, বাংলাদেশ প্রচুর জলজসম্পদের অধিকারী। সুতরাং, বাংলাদেশ ধান চাষের জন্য অনেক উপযোগী দেশ। তবে প্রযুক্তিগত ঘাটতি এবং শস্য সম্পদের অভাব থাকায় ধান উত্পাদন বাড়েনি। এ অবস্থায় বাংলাদেশে ধান উত্পাদন সমস্যা সমাধানে একাডেমিশিয়ান ইউয়ান লোং পিংকে বাংলাদেশ পরিদর্শন ও গবেষণার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। আশা করা হয় যে, ধানের ফলন বাড়াতে চীনের ‘সুপার সঙ্কর ধান’ বাংলাদেশে উত্পাদন করা যেতে পারে। তথ্য অনুসারে, একাডেমিশিয়ান ইউয়ান লোং পিং ১৫ দিনের কিছু বেশি সময় বাংলাদেশে মাঠ-ঘাট পরিদর্শন করেন এবং স্থানীয় কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে গভীর গবেষণা ও আলোচনা করেন।

 

জনাব ইউয়ান লোং পিং ধারণা ছিলো “বিশ্বের মানুষের কল্যাণে সঙ্কর ধানের বিকাশ করা।” ১৯৮০-এর দশক থেকে, ইউয়ান লোং পিং এবং তার দল প্রায় ৮০টি উন্নয়নশীল দেশে ১৪ হাজারেরও বেশি সঙ্কর ধান-সংক্রান্ত প্রযুক্তিবিদদের প্রশিক্ষণ দেন। বর্তমানে ভারত, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, ফিলিপিন্স, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, মাদাগাস্কার ও অন্যান্য দেশে সঙ্কর ধান চাষ করা হয়। বার্ষিক চাষের পরিমাণ আট মিলিয়ন হেক্টরে উন্নীত হয়েছে। প্রতি হেক্টরে গড় ফলন হচ্ছে স্থানীয় উন্নত জাতের তুলনায় প্রায় দুই টন বেশি।

 

ইউয়ান লোং পিংয়ের সঙ্কর ধান বাংলাদেশের খাদ্য সংকট সমাধানে সহায়তা করেছে। এখন বাংলাদেশ ১৬০টি চাইনিজ ধানের জাত নিবন্ধ করেছে, বার্ষিক ধান চাষের জমির পরিমাণ নয় লাখ একর। চীন বাংলাদেশে সঙ্কর ধানের বীজের বৃহত্তম রফতানিকারক দেশ এবং চীন উন্নত বীজ উত্পাদন প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে। চীন প্রতিবছর বাংলাদেশে নয় হাজার একর জমিতে ধানের বীজ উত্পাদন ও চাষ করে। বাংলাদেশের প্রচলিত ধানের জাতের তুলনায় চীনের সঙ্কর ধানের উত্পাদন ২০ শতাংশেরও বেশি হয়; যা বাংলাদেশের খাদ্য সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

 

চীন প্রতিবছর নতুন ধানের জাত ও প্রযুক্তি উন্নয়নে বাংলাদেশকে সহায়তা দেয়। চীন বাংলাদেশের কৃষি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন, বাংলাদেশের ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং বিভিন্ন কোম্পানির জন্য সঙ্কর ধানের প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ কোর্সের আয়োজন করে।

 

বর্তমানে, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন কমিটি তাদের নিজস্ব কয়েকটি সঙ্কর ধানের বীজ চাষ করছে। যেমন বিআরআরআই সঙ্কর-১, বিআরআরআই সঙ্কর-২, বিআরআরআই সঙ্কর-৫ এবং ব্র্যাকের শক্তি।

 

বিজ্ঞানী ইউয়ান লোং পিংয়ের মৃত্যুর পর বাংলাদেশের গণমাধ্যম দ্রুত এই শোক সংবাদ প্রকাশ করেছিল।

(জিনিয়া/তৌহিদ/শুয়েই)