গত ২০ মে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ওপর থেকে চীনা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না-হওয়া পর্যন্ত, চীন-ইউরোপ বাণিজ্যিক চুক্তির অনুমোদন না-দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইইউ।
এ প্রসঙ্গে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে যে, চীন-ইইউ বিনিয়োগ চুক্তি একটি ভারসাম্যপূর্ণ, পারস্পরিক কল্যাণের, এবং লাভের অংশীদারিত্বের চুক্তি। এটি ইউরোপের কাছ থেকে পাওয়া চীনের জন্য কোনো উপহার নয়। ইইউ প্রথমে চীনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। চীন কেবল তাদের জবাব দিয়েছে। ইইউ’র এমন অযৌক্তিক আচরণ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব বয়ে আনবে।
চীন-ইউরোপ সার্বিক চুক্তির (সিএআই) ওপর বিস্তারিত আলোচনা গত ডিসেম্বরে শেষ হয়েছে। সাত বছরে মোট ৩৫ দফা সংলাপের মাধ্যমে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
আসলে, চীন ও ইউরোপের মধ্যে স্বার্থের সংঘাত প্রায় নেই বললেই চলে। বরং তাদের মধ্যে সহযোগিতা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি। গত বছর চীন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে ইইউ’র বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার হয়েছে। মহামারি প্রতিরোধ ও বাণিজ্যিক সহযোগিতাসহ নানা বিষয়ে দুপক্ষ সংলাপ ও নানা রকম বিনিময় জোরদার করেছে। এমতাবস্থায়, হঠাত্ করে চীনের প্রতি ইউরোপের মনোভাব পরিবর্তন হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কোনো কোনো তথ্যমাধ্যমের বিশ্লেষণে বলা হয়, ইউরোপের আত্মমর্যাদা আহত হয়েছে। তাই তারা চীনের বিরুদ্ধে এমন আচরণ করছে।
ইউরোপ সবসময় নিজের উন্নত সভ্যতা ও সংস্কৃতির জন্য গর্বিত। তারা নিজেদের বিশ্বের আধুনিকায়নের মূল প্রবক্তা মনে করে। তাই যখনই তারা দুরবস্থার সম্মুখীণ হয়, তখনই তারা সরে দাঁড়ানোর পথ বেছে নেয়। যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপের এ দুর্বলতার অপব্যবহার করে এশিয়ার বিরুদ্ধে ইউরোপকে ক্ষেপিয়ে তুলেছে।
কোনো কোনো ইউরোপীয় কোম্পানি মনে করছে যে, ইউরোপ-চীনের সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হলে কেবল যুক্তরাষ্ট্র এ থেকে উপকৃত হবে। এর কারণে মার্কিন কোম্পানিগুলোর চীনা বাজারে বিনিয়োগ ও বিক্রির সম্ভবনা বাড়বে। কিন্তু, এর ফলে ইউরোপের অর্থনৈতিক ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই অর্জিত হবে না। চুক্তি স্থগিত হলে, টেলিযোগাযোগ, আর্থিক সেবা, ও ব্যক্তিগত চিকিত্সাসহ নানা ক্ষেত্রে ইউরোপের চীনা বাজারে প্রবেশ সীমিত হবে।
যুক্তরাষ্ট্র কখনো অন্যদের স্বার্থ বিবেচনা করবে না। যুক্তরাষ্ট্রকে অনুসরণ করলে ইউরোপের ক্ষয় দ্রুত হবে। চীনের অবস্থা আগের মতো নয়, চীন-ইউরোপ বিনিয়োগ চুক্তির সাহায্যে ইউরোপের অর্থনীতি আরো দ্রুত পুনরুদ্ধার হতে পারে। তাই ইউরোপকে নিজেদের ভাল-মন্দ বুঝতে হবে।
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের কথার বরাত দিয়ে বলা যায় যে, চীন সবসময় দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়। চীন বরাবরই এমন আন্তরিকতা পোষণ করে। শিশির/এনাম/আকাশ