রোববারের আলাপন-প্রবীণদের ব্যায়ামাগারের গল্প
2021-05-21 17:51:29

আকাশ: সুপ্রিয় শ্রোতা, সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠানে। আপনাদের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমাদের সাপ্তাহিক আয়োজন ‘রোববারের আলাপন’। আপনাদের সঙ্গে আছি এনাম এবং আকাশ।

বন্ধুরা, চীনে অনেকেই শরীরচর্চাকে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। তাই সারা দেশে অনেক ব্যায়ামাগারও রয়েছে। আজ আমরা একটি বিশেষ ব্যায়ামাগারের গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার  করব। কেমন?

এনাম:বেইজিং শহরে একটি বিশেষ ব্যায়ামাগার রয়েছে। এতে শরীরচর্চাকারীদের গড় বয়স ৬০ বছরেরও বেশি। এটির নাম হচ্ছে ‘এর ছি জিম’। 

মোট ৪০ জনেরও বেশি লোক দীর্ঘ সময় ধরে এখানে শরীরচর্চা করেন। তাঁরা সবাই একসময় বেইজিংয়ের “এর ছি রেল ইঞ্জিন কারখানায়” চাকরি করতেন। অথবা তাঁদের পরিবারের কোনো না কোনো সদস্য এতে চাকরি করেন। তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে প্রবীন লোকটির বয়স ৮৩ বছর, আর সবচেয়ে তরুণ লোকটি এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র। এ ছাত্রের বাবা ও দাদী আগে কারখানাটিতে কাজ করতেন। তিনি বলেন, এখানে তাঁর কাকা, ও দাদারা একসাথে তাঁকে শরীরচর্চা শিখিয়েছেন।  

প্রতিদিন সকাল দশটা ও বিকেল দুটায় তাঁরা ব্যায়ামাগারটিতে এসে শরীরচর্চা শুরু করেন। ব্যায়ামাগারটি ফি অন্য যেকোনো ব্যায়ামাগারের ফি’র চেয়ে অনেক কম। সারা বছরে মাত্র ৩০০ ইউয়ান দিতে হয়। অনেক বছর ধরে এখানে ফি বাড়ছে না। 

এর প্রধান বলেন, ব্যায়ামাগারটি টাকা উপার্জনের জন্য নয়, বরং শুধু জায়গার ভাড়া আদায় করতে ফি আদায় করে থাকে। 

এর ছি ব্যায়ামাগার ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর ছি রেল ইঞ্জিন কারখানার একজন ক্রীড়ামোদী এটি প্রতিষ্ঠা করেছেন। এর নামও কারখানার নামের সাথে মিলিয়ে রাখা হয়েছে। এখানের সব প্রবীণ সদস্যরা তরুণ বয়সে এ কারখানার কারিগর ছিলেন। বারবেল, ডাম্বেলসহ অনেক যন্ত্রপাতি তাঁরা নিজের হাতে তৈরি করেছেন। কারখানার কর্মচারী হিসেবে এসব কাজ তাঁদের জন্য খুব কঠিন ছিল না। 

এর অনেক প্রবীণ সদস্য ইতোমধ্যে এখানে প্রায় ৪০ বছর ধরে শরীরচর্চা করছেন। প্রতিদিনই তাঁরা এখানে এসে শরীরচর্চা করেন। এর ছি ব্যায়ামগার অনেকের স্মৃতিময় স্থান। অনেকে আবার অবসরের পর আনন্দে সময় কাটান এখানে। 

ব্যায়ামাগারের প্রধান বলেন, তাদের জিমের তিনটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে: এটি অনেক পুরনো, সদস্যদের গড় বয়স সবচেয়ে বেশি, এবং এর শর্ত সবচেয়ে সহজ। 

তিনি বলেন, “ভবিষ্যতে কী হবে? তা কেউ বলতে পারবে না। আমি শুধু আশা করি, আমাদের এসব প্রবীণরা এখানে একসাথে শরীরচর্চা করতে পারবেন, এবং একসাথে আনন্দে সময় কাটাতে পারবেন।”

২০১৯ সালে এ ব্যায়ামাগারের তিন জন সদস্য একটি প্রবীণ শরীরচর্চা দল প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁরা ৩৭তম বেইজিং শরীরচর্চা চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। প্রতিযোগিতার জন্য তাঁরা কঠোর পরিশ্রম করেন। তিন মাস প্রশিক্ষণ নেন। অবশেষে তাঁরা চ্যাম্পিয়ন হন।
যদিও তখনকার তরুণ-তরুণীরা এখন প্রবীণ, তাঁরা শরীরচর্চার প্রতি একটুও নিরাসক্ত হননি।এককথায়, এখানে তাঁদের জন্য রয়েছে শরীরচর্চার স্বর্গ। 
আসলে পরিবেশ এতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে শরীরচর্চার প্রতি ভালবাসা, আগ্রহ, ও মনোবল। যদি সত্যিকারের ভালবাসা থাকে, তাহলে যে কোন স্থানই স্বর্গ হবে।
আকাশ: এনাম ভাই, প্রবীণদের চেতনার মধ্যে আমি একদমই তাঁদের বয়সের ছাপ দেখতে পাইনি। তাঁরা আমাকে অনেক অনুপ্রাণিত করছেন। আমি তাঁদের সম্মান জানাই।