ফুকুশিমা পারমাণবিক দূষিত পানি নিয়ে জাপানের সিদ্ধান্তে ফের বিতর্ক
2021-05-21 17:24:37

সম্প্রতি জাপান সরকার দেশটির ফুকুশিমা দাইচি পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের দূষিত পানি প্রশান্ত মহাসাগরে অপসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একতরফাভাবে নেওয়া এ সিদ্ধান্তে ভীষণ আপত্তি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সমাজ। বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশগুলো। জাপানের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে তা প্রশান্ত মহাসাগরের তীরবর্তী দেশগুলোর জন্য বিপদ ডেকে আনবে।

জাপানের ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে দুর্ঘটনার পর ১০ বছর পার হয়েছে। কিন্তু তার ক্ষতি থেকে রক্ষা পায়নি বিশ্ব। বছরের পর বছর সমুদ্রের পানি দূষিত করার জন্য জাপানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে টোকিওর প্রতিবেশীরা। সবার অভিযোগ, জাপান সরকার নিজের দেশের মানুষকে হুমকির মুখে ফেলার পাশাপাশি, প্রতিবেশী দেশের মানুষের জীবনও বিপন্ন করছে।

২০১১ সালে দুর্ঘটনার পর জাপানের শিল্প মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, ফুকুশিমা পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে তেজস্ক্রিয়তাদুষ্ট পানি দুই বছর ধরে প্রশান্ত মহাসাগরে গিয়ে মিশছে। ফুকুশিমা থেকে প্রতিদিন আনুমানিক ৩০০ টন দূষিত পানি সাগরে মিশেছে।

সম্প্রতি এ বিষয়ে আবারও গণমাধ্যম ও সচেতন বিশ্বে হৈ চৈ তৈরি হয়েছে। তার কারণ, টোকিও’র একটি সিদ্ধান্ত। এক মাস আগে টোকিও ফের সিদ্ধান্ত নেয় যে, ফুকুশিমার অবশিষ্ট দূষিত পানি প্রশান্ত মহাসাগরে ছেড়ে দেওয়া হবে। বলাই বাহুল্য, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে প্রতিবেশী কোনো দেশের সঙ্গে পরামর্শ করেনি জাপান।

গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, জাপানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী তারো আসো এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, তিনি শুনেছেন যে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রে চুল্লি শীতলীকরণে ব্যবহৃত পানি শোধন করে নেওয়ার পর তা পানের উপযোগী হয়ে ওঠে এবং স্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি তা করে না। আসোর এই বক্তব্যের পর চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র চাও লি-চিয়ান বলেন, ‘জাপানের কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন যে সেই পানি পান করতে কোনো সমস্যা নেই। আমি তাই তাকে অনুরোধ করব, তিনি যেন কথা না বলে বরং পানি পান করেন।’ চাও আরও উল্লেখ করেন যে, জাপানের সিদ্ধান্তের মধ্যে পরিবেশ সংরক্ষণ নিয়ে দেশটির অজ্ঞতাই কেবল প্রকাশ পায়নি, একই সঙ্গে এক হঠকারী সিদ্ধান্ত, যা কিনা কারও কাছেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’

জাপানের প্রতিবেশী দেশগুলোর অভিযোগ, তেজস্ক্রিয়তা যেহেতু পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে, তাই জাপানের শোধন প্রক্রিয়া কতটা কার্যকর, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। তাই সমুদ্রসম্পদ দূষিত করার মাধ্যমে প্রশান্ত মহাসাগরের এক বিস্তৃত উপকূলের মানুষের জীবনযাত্রা বিপন্ন করার মতো ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে জাপানের প্রতি জোরালো আহ্বান জানিয়েছে দেশগুলো।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র চাও লি চিয়ান সম্প্রতি বলেন, বিশ্ব সামুদ্রিক পরিবেশ ও বিভিন্ন দেশের জনগণের স্বাস্থ্য উপেক্ষা করে, নিজের দায় সব মানুষের ওপর স্থানান্তর করা উচিত নয়।

চাও লি চিয়ান জোর দিয়ে বলেন, ফুকুশিমা পরমাণু বর্জ্য-পানির প্রক্রিয়াকরণ জাপানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার নয়। যদি পরমাণু বর্জ্য-পানি কোন গণবিপত্তি সৃষ্টি না-করে, তাহলে কেন জাপান এ পানি রাখবে না? যদি জাপান একতরফাভাবে বিপজ্জনক পদক্ষেপ নেয়, তাহলে জাপানের মানুষও তা মেনে নেবে না, প্রতিবেশি দেশগুলো তা মেনে নেবে না, এবং আন্তর্জাতিক  সমাজও তা মেনে নেবে না।

দক্ষিণ কোরিয়া সম্প্রতি জানিয়েছে, জাপান দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে পরামর্শ না করেই একতরফাভাবে ফুকুশিমা পারমাণবিক কেন্দ্রের দূষিত জল সমুদ্রের অপসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে; যা প্রতিবেশী দেশ ও সামুদ্রিক পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

জাপানের সিদ্ধান্তে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও অন্যান্য প্রতিবেশী দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সমাজের তীব্র উদ্বেগ এবং বিরোধিতার মুখোমুখি হয়েছে। দুঃখের বিষয় হলো, জাপান সরকার এটি পুরোপুরি উপেক্ষা করেছে এবং আন্তর্জাতিক সমাজের গুরুতর উদ্বেগের বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। জাপান শুধু নিজের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আন্তর্জাতিক সমাজ ও ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা চিন্তা করে নি।

তাই, জাপানের উচিত পারমাণবিক বর্জ্য-পানি সঠিক ও নিরাপদ পদ্ধতিতে ব্যবস্থাপনা করা।