চোখ নিয়ে ভুল ধারণা অনেক
2021-05-21 18:59:09

মানুষের ৫টি ইন্দ্রিয়ের মধ্যে চোখ সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। চারপাশের পরিবেশ থেকে মানুষের মস্তিষ্কে যত তথ্য পৌঁছায়, তার ৮০ শতাংশই আসে শুধু চোখের মাধ্যমে। অন্যভাবে বললে, মস্তিষ্কের চার-পঞ্চমাংশ জায়গায় সংরক্ষিত থাকে শুধু চোখের জন্য আর বাকি এক-পঞ্চমাংশ বাকি ৪টি ইন্দ্রিয়ের জন্য। তবে এই চোখ নিয়ে মানুষের মধ্যে আছে নানা ভুল ধারণা। চলুন জেনে নেই চোখ নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারণাগুলো সম্পর্কে:

লক্ষ্মী ট্যারা কি সৌভাগ্যের লক্ষণ?

সাধারণের মধ্যে, বিশেষ করে অনগ্রসর জনগোষ্ঠির মধ্যে বহুকাল ধরে এমন ধারণা রয়েছে যে, চোখ সামান্য ট্যারা বা বাঁকা হওয়া ভাল; এটা সৌভাগ্যের লক্ষণ। সেকারণে সামান্য ট্যারা চোখকে তারা লক্ষ্মী ট্যারা বলে ডাকেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি একটি ভুল ধারণা। আর এমন ভুল ধারণার কারণে যথাসময়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা না করায় অনেক শিশু অন্ধ হয়ে যায়। সাধারণত কোনও কিছুর দিকে তাকালে দুই চোখের মণি একই সঙ্গে একইভাবে নড়ে। তাই স্বাভাবিক চোখে মণি দুটো একই রেখায় থাকে। কিন্তু ট্যারা চোখে একসঙ্গে দুই চোখের মণি একইভাবে নড়াচড়া করে না। এ কারণে দৃষ্টি একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে মেলে না। যে চোখটি ট্যারা হয়, মস্তিষ্ক নিজে থেকে ওই চোখের দেখার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাতে ওই চোখটি নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় এবং দৃষ্টিশক্তি হারাতে থাকে। আবার অন্যদিকে একটি চোখ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়লে বাকি চোখের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। দীর্ঘদিন এমন চাপ থাকলে ভালো চোখটিরও জ্যোতি কমে যেতে থাকে।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চোখের জ্যোতি কমা কি অনিবার্য?

চোখ নিয়ে ভুল ধারণা অনেক_fororder_d6

এটা মানুষের মধ্যে একটা ব্যাপকবিস্তৃত ধারণা যে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চোখের জ্যোতি কমবেই। এটা বেশিভাগ ক্ষেত্রে ঠিক হলেও, সব ক্ষেত্রে নয়। হ্যাঁ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চোখের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেমন প্রেসবায়োপিয়া, ছানি ও গ্লুকোমা, যেগুলো দৃষ্টিশক্তি কমায়। তবে নিয়মিত চোখের পরীক্ষা ও চিকিৎসা দৃষ্টিশক্তি হ্রাস রোধ করতে বা গতি ধীর করে দিতে পারে।

ছানি কি কেবল সম্পূর্ণ গঠিত হলেই দূর করা যায়?

না অস্ত্রপচারের মাধ্যমে ছানি দূর করতে এটার পূর্ণ গঠন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় না। ছানি অপারেশনের আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে এখন এটা দূর করা যায় একেবারে প্রাথমিক  স্তরে, অর্থাৎ যখন দৃষ্টি ঘোলাটে হতে শুরু করে তখনই। 

কম্পিউটারের দিকে দীর্ঘসময় তাকিয়ে থাকলে কি দৃষ্টিশক্তি কমে?

প্রতিদিন দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটার বা অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখ ক্লান্ত হয়ে পড়ে, তবে দৃষ্টিশক্তি কমে না। তাই চোখের আরামের জন্য দুই-তিন ঘণ্টা পর পর ১০-১৫ মিনিট বিরতি নেওয়া উচিৎ। এতে চোখ ক্লান্ত হবে না।

চোখ কি প্রতিস্থাপন করা যায়?

অনেকে মনে করেন, পুরো চোখ প্রতিস্থাপন করা যায়। কিন্তু বাস্তবতা হলো এটা এখনও করা যায় না। চোখ একটি অতি জটিল অঙ্গ, যেটি অপটিক স্নায়ুর মাধ্যমে মস্কিষ্কের সঙ্গে যুক্ত থাকে। অপটিক স্নায়ু ১০ লাখ অতিক্ষুদ্র স্নায়ু দ্বারা গঠিত। অপটিক স্নায়ু যদি কেটে যায়, তাহলে আর সেটাকে জোড়া দেওয়া যায় না। তবে হ্যাঁ কর্নিয়া প্রতিস্থাপন সম্ভব এবং এর মাধ্যমে অনেককে  অন্ধত্বের হাত থেকে বাচাঁনো যায়।

অল্প আলোতে পড়লে কি চোখের জ্যোতি কমে?

এটা অনেকেই বিশ্বাস করেন, অল্প আলোয় পড়লে চোখের জ্যোতি কমে যায়। এমন বিশ্বাসের কোনও ভিত্তি নেই। তবে এটা ঠিক অল্প আলোতে পড়লে চোখ খুব দ্রুত ক্লান্ত হয়ে যায়। তাই চোখের আরামের জন্য পর্যাপ্ত আলোতে পড়া উচিত। খেয়াল রাখতে হবে পড়ার সময় বইয়ের পাতায় যেন পর্যাপ্ত আলো পড়ে।

জন্মের আগেই কি শিশুদের চোখ সম্পূর্ণ গঠিত হয়ে যায়?

সাধারণত একটি শিশু যখন জন্মগ্রহণ করে, তখন তার চোখের আকার থাকে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের চোখের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ। চোখের আকার জন্মের পরেও বাড়তে থাকে দুটি পর্যায়ে -- জীবনের প্রথম কয়েক বছরে এবং বয়ঃসন্ধিকালে।

গাজর খেলে কি চোখের জ্যোতি  বাড়ে?

গাজর খাওয়া চোখের জন্য ভালো, কারণ এতে প্রচুর ভিটামিন এ আছে। তবে বাস্তবতা হলো চোখের জ্যোতির জন্য অতি সামান্য পরিমাণ ভিটামিন এ লাগে, যা সবুজ ও অন্যান্য উজ্জ্বল রঙের শাক-সবজি, দুগ্ধজাত খাবার ও মাছ থেকে পাওয়া যায়। ভিটামিন এ-সমৃদ্ধ খাবার চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে বটে, তবে জ্যোতি বাড়ায় না।

চোখের ব্যায়াম কি জ্যোতি বাড়ায়?

অনেকে মনে করেন, চোখের ব্যায়াম দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়। এমন ধারণার কোনও বিজ্ঞানসম্মত ভিত্তি নেই। চোখের জ্যোতি যেসব বিষয়ের ওপর নির্ভর করে, তার কোনওটির তেমন পরিবর্তন ঘটানো যায় না ব্যায়ামের মাধ্যমে। তবে দৃষ্টির এককেন্দ্রাভিমুখতার (convergence) সমস্যা কিছুটা দূর করা যায় ব্যায়ামের মাধ্যমে, যার ফলে পড়া বা খুব কাছের কিছু দেখার সমস্যা খানিকটা দূর হতে পারে। - রহমান