আজহার লিমন, ঢাকা: রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাবেক কর্মী রিয়াজুল ইসলাম। করোনা সংকটের পর কর্মী ছাটাই প্রক্রিয়ায় পরে গেল ৭ মাস আসে ঐ প্রতিষ্ঠানের শতশত কর্মীর সঙ্গে চাকরি হারিয়েছেন তিনি। জানতে চেয়েছিলাম নিজ গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরায় এখন কীভাবে কাটছে এ যুবকের বেকার জীবন?
তিনি বলছিলেন, “মূলত চাকরির সুবাদেই ঢাকা ছিলাম। নিজে চলতাম। পরিবারেও কিছু পাঠাতাম। কিন্তু এখন তো আর চাকরি নাই। এখানে এসে তো বেকারই আছি। মূলত রাজধানীর মত মফস্বল শহরে তেমন চাকরি থাকে না। আর কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গেও যোগাযোগ করেছি। ভেতরে ভেতরে দুয়েকজনকে নিয়োগ হয়। কিন্তু সরাসরি নিয়োগ বন্ধ।”
রিয়াজুল ইসলাম, সাতক্ষীরা
করোনা মহামারির পর কর্মী ছাটাই করেছেন দেশের অনেক প্রতিষ্ঠান। আর এক্ষেত্রে সবচেয়ে ঝুকিতেঁ আছে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি মানের প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায় ৪০ লাখ কর্মীবাহিনী। কারণ উদ্যোক্তরা বলছেন, তারা পুজিঁ হারাচ্ছেন।
সিলেটের অ্যামব্রোসিয়া ফুড ফ্যাক্টরির মালিক মো. নাহিদুর রহমান বলছিলেন ব্যবসায়িক ক্ষতির পাশাপাশি নানা ধাপের করের বোঝা এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের ঝড়ে পড়ার ক্ষেত্রে বড় কারণ হিসেবে দেখা দিচ্ছে। এখাতে প্রণোদনা কথা ব্যাপক প্রচলিত থাকলেও প্রকৃত ক্ষুদ্র মাঝারি ক্ষতিগ্রস্থ উদ্যোক্তারা তা পান না উল্লেখ করেন তিনি। সবকিছু মিলিয়ে ঘুরে দাড়ানোর স্বপ্নে তার মত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা আসছে বাজেটের দিকেই তাকিয়ে আছেন, উল্লেখ করেন জনাব নাহিদ।
তিনি বলেন, “আমার তো ব্যবসা বাঁচাতে হবে। এমননিতেই করোনায় লোকসান। তারপর আবার দফায় দফায় কর। এর কারণেই আমাদের কর্মী ছাটাইয়ের মত সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। আর ঋণ তো তারাই পেয়েছি যাদের আগের থেকে ঋণ ছিলো। নতুন করে ক্ষতিগ্রস্থ কাউকে ঋণ দেওয়া হয় নাই।”
মো. নাহিদ রহমান, মালিক, অ্যামব্রোসিয়া ফুড ফ্যাক্টরি।
একটি বেসরকারি সংস্থার গবেষণায়ও দেখা গেছে করোনা মহামারিতে বন্ধ হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ ভাগ ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান। এ খাতের আয় সংকোচন হয়েছে প্রায় ৯৪ শতাংশ। অথচ ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে তাদের দেওয়া বরাদ্দের ১১ শতাংশের কম। কিন্তু তারপরও এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমান মনে করেন, অর্থনীতি সচল রাখতে বাজেটে এখাতের জন্য ব্যাপকভিত্তিক ঋণ প্রণোদনা নেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, “আগামী অর্থবছরের বাজেটের মধ্যে যে জিনিসিটা আমরা প্রত্যাশা করছি, উদ্যোক্তারাও প্রত্যাশা করছে যে তাদের জন্য বিশেষ কিছু সুযোগ সুবিধা। সেটা কী হতে পারে? একটা হতে পারে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য স্বল্প সুদে, একেবারেই স্বল্প সুদে আরও প্রণোদনা প্যাকেজের সম্প্রসারণ করা এবং সেটা যেন গ্রামীণ এবং প্রান্তিক পর্যায়ে হয়। দুই হতে পারে ক্রেডিট ট্রান্সফার সরাসরি। আরেকটা হতে ব্যাংক বা ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন যেটাকে বলা হয়, তারা যেন সরাসরি সহজ শর্তে কোনরকম ঝক্কি ঝামেলা ছাড়া টাকাটা পেতে পারে।”
ড. মোঃ মফিজুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এসএমই ফাউন্ডেশন
শিল্প মন্ত্রণালয়ের হিসেবে, দেশের ১০ লাখ ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা জিডিপিতে প্রায় ২৩ শতাংশ অবদান রাখছেন। আর এসব উদ্যোক্তাদের সোয়া ১ লাখ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করছেন প্রায় ৪০ লাখ মানুষ।
আজহার লিমন। চীন আন্তর্জাতিক বেতার। ঢাকা।