সুপ্রিয় শ্রোতা, আপনারা শুনছেন চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান। এখন আপনাদের জন্য রয়েছে সাপ্তাহিক আয়োজন-'হপ্তানামা'। আপনাদের সঙ্গে আছি আমি ওয়াং তান হোং রুবি এবং আমি মোঃ এনামুল হাসান।
গত ১২ মে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং হ্য নান প্রদেশের নান ইয়াংয়ে চিকিত্সক গুরুর স্মৃতি হলে গিয়ে চীনা চিকিত্সাবিদ্যার উন্নয়ন পরিদর্শন করেন।
নান ইয়াং চীনের একটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক শহর। যার রয়েছে ২৭শ’ বছরের প্রচীন ইতিহাস । চীনের বিখ্যাত ভেষজ চিকিত্সক গুরু চাং চোং চিং এখানে জন্মগ্রহণ করেন। চাং ছোং চিং ১৫০ সালে জন্ম নেন।
নান ইয়াং শহরের পূর্বাঞ্চলে চিকিত্সক গুরুর স্মৃতি হলে তাঁর অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সি চিন পিং। এ হলে বর্তমানে ১০০টিরও বেশি পুরাকীর্তি রয়েছে এবং প্রাচীন পুস্তকের সংখ্যা ১০ হাজারটিরও বেশি। এর মধ্যে গুরুর লেখা একটি গুরুত্বপূর্ণ বইও এতে সংরক্ষিত রয়েছে। এটি চীনের চিকিত্সা ইতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী বইগুলোর অন্যতম।
মহামারি মোকাবিলার সময় নির্দিষ্ট ওষুধ না থাকায় চীন এ বই থেকে তিনটি ওষুধ গ্রহণ করেছে। এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, চীনে মহামারি আক্রান্ত রোগীদের ৯০ শতাংশেরও বেশিকে এ তিনটি ওষুধ দিয়ে সারিয়ে তুলা হয়। এসব ওষুধ সবাইকে হালকা ও সাধারণ রোগের অবস্থা থেকে গুরুতর রোগীতে পরিণত হওয়া থেকে রক্ষা করেছে।
চিকিত্সক গুরুরর জন্মস্থান নান ইয়াং চীনের ঐতিহ্যবাহী মেডিসিনের উত্পাদনের অন্যতম স্থান। এখানে বিশেষ প্রজাতির ভেষজের চাষাবাদ হয়, যাকে সুখী ঘাস হিসেবে ডাকা হয়।
গত বুধবার বিকেলে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং শহরটির ইয়াও ই পাও বিশেষ প্রজাতির ভেষজ পণ্য কোম্পানি লিমিটেড পরিদর্শন করেন। সেখানে বিশেষ প্রজাতির পণ্য শিল্প এবং স্থানীয় কর্মসংস্থানে এ শিল্পের ভূমিকা সম্পর্কে খোঁজখবর নেন।
জানা গেছে, এ কোম্পানি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ২০০ জনেরও বেশি নিম্ন আয়ের মানুষকে এবং প্রতিবন্ধী ও কর্মচ্যুতিসহ নানা কারণে কর্মহীন লোকদের চাকরি দিয়েছে। এর কল্যাণে সে এলাকার ৩ হাজার মানুষ বাড়ীর কাছে চাকরি করতে পারছেন। তারা প্রতি মাসে চার থেকে নয় হাজার ইউয়ান আয় করেন।
এ দিন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং নান ইয়াং শহরের ‘চায়না গোলাপ’ বাগানও পরিদর্শন করেন।
স্থানীয়রা এ ফুলের সুবিধা কাজে লাগিয়ে বৈশিষ্ট্যময় শিল্প উন্নয়ন করে বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে।
বাগানে ১০টির বেশি রঙের ২,০০০টিরও বেশি প্রজাতির চায়না গোলাপ রয়েছে। এর বার্ষিক উত্পাদন পরিমাণ ২৫০ কোটি ইউয়ান ছাড়িয়েছে।
সি চিন পিং যে বাগানে গিয়েছেন, তার আয়তন ৮৭ হেক্টর। ২০১০ সালের অক্টোবরে প্রতিষ্ঠার পর থেকে সে বাগানে দেশি-বিদেশি ৩০ লাখেরও বেশি পর্যটক ভির করেছেন। চায়না গোলাপের কারণে স্থানীয়রা সুখী ও সমৃদ্ধ জীবন পেয়েছেন।
চীনে বিভিন্ন স্থান পরিদর্শনের সময় সি চিন পিং স্থানীয় বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিল্পের ওপর গুরুত্বারোপ করে থাকেন।
সম্প্রতি তিনি ফু চিয়াং ও কুয়াং সি পরিদর্শন করেছেন। সে সময় তিনি স্থানীয় স্ন্যাক্স ও নুডলসজাত পণ্যের কারখানা পরিদর্শন করেন।
এ ধরণের শিল্পের ওপর গুরুত্বারোপের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সি চিন পিং বলেন, গ্রামাঞ্চলের পুনরুত্থান করতে চাইলে স্থানীয়দের ধনী করার শিল্প খুব গুরুত্বপূর্ণ। বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিল্প উন্নয়ন করলে স্থানীয় অর্থনীতি শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ হবে।
গত ১৩ মে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং চীনের হ্যনান প্রদেশের নানইয়াং শহর পরিদর্শনের সময় দক্ষিণ চীনের পানি উত্তর চীনে আনার প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ এবং সংশ্লিষ্ট প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে খোঁজখবর নেন।
এ সময় তিনি দক্ষিণ চীনের পানি উত্তর চীনে আনার প্রকল্পের মধ্যম লাইনের নির্মাণ কাজ, পানির উতস অঞ্চলের পরিবেশের সুরক্ষা, এবং স্থানীয় অধিবাসীদের পূনর্বাসনসহ নানা বিষয়ে খুঁজখবর নিয়েছেন। উল্লেখ্য, দক্ষিণ চীনের পানি উত্তর চীনে আনার প্রকল্পের মধ্যম লাইন নির্মাণের কারণে লাইনের আশেপাশের প্রায় চার লাখেরও বেশি লোককে তাঁদের বাসস্থান থেকে সরিয়ে অন্যত্র পূনর্বাসন করা হচ্ছে। তাঁদের অনেককে সরিয়ে আনতে চে ছুয়ানের চৌ চুয়ানে একটি নতুন গ্রাম নির্মাণ করা হয়।
প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সেখানে গিয়ে সাধারণ মানুষের পূনর্বাসন, কর্মসংস্থান, ও জীবন-যাপন পদ্ধতির খুঁজখবর নিয়েছেন।
তিনি বলেন, চলতি বছর হচ্ছে সিপিসি প্রতিষ্ঠার ১০০তম বার্ষিকী। একশ’ বছর আগে সাধারণ মানুষকে সুখী করার স্বপ্ন নিয়ে সিপিসি প্রতিষ্ঠিত হয়। তার প্রতিষ্ঠা নিজদের স্বার্থে নয়।
তিনি আরো বলেন, “পার্টির ১০০ বছরের প্রচেষ্টার ইতিহাস হচ্ছে জনগণের জন্য সুখ অনুসন্ধানের ইতিহাস। জনগণ হচ্ছে আমাদের দেশ। আমাদের সিপিসি ও গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠা ও রক্ষার লক্ষ্য হচ্ছে জনগণের সুখ নিশ্চিত করা।”
প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং প্রকল্পটির নির্মাণকারী ও সংশ্লিষ্ট অভিবাসীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। দেশের প্রতি তাঁদের অবদানে তিনি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন।
তিনি জনান, “দক্ষিণ চীনের পানি উত্তর চীনে আনার প্রকল্পের নির্মাণ, পরিচালনা, ও অভিবাসীদের পূনর্বাসন কাজে আমি সব সময় গুরুত্বারোপ করে থাকি। সবার জীবন এখন কেমন, তা আমি জানতে চাই। এ প্রকল্পের আশেপাশের লোকদের পানি পান করাতে আপনারা নিজেদেরর স্বার্থ ত্যাগ করেছেন। এটি একটি মহান চেতনা। প্রকল্পটির আশেপাশের এবং সারা দেশের জনগণ আপনাদেরকে ধন্যবাদ জানায়। আমি আন্তরিকভাবে আপনাদের সুখী ও সমৃদ্ধ জীবন প্রত্যাশা করি।”
২. মানবাধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের শঠতা সম্পর্কে মুখ খুলতে শুরু করেছেন পৃথীবির অনেক মানুষ
সম্প্রতি আফ্রিকার এক ওয়েবসাইটে ‘আফ্রিকান দেশগুলো যেকারণে মানবাধিকারের বিষয়ে চীনকে সমর্থন করে এবং পশ্চিমা দেশগুলোর বিরোধিতা করে’ শীর্ষক প্রবন্ধে বলা হয়েছে, সিনচিয়াংয়ে গণহত্যার অভিযোগ ভয়ঙ্কর মিথ্যাচার, তার আসল লক্ষ্যে চীনের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা এবং চীনের উন্নয়ন ক্ষতিগ্রস্ত করা।
জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের সাবেক এক বিশেষজ্ঞ সম্প্রতি জেনেভায় সিনহুয়া বার্তা সংস্থাকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চীনের সিনচিয়াংয়ে গণহত্যার অস্তিত্ব নিয়ে যে মিথ্যা অভিযোগ করছে, তা একেবারে গুজব এবং অপপ্রচার। তা জাতিসংঘের নাগরিক অধিকার ও রাজনৈতিক অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক ইস্তেহারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘আমি অবাক হয়েছি। যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার রিপোর্টে পেশাদারিত্ব দেখার প্রত্যাশা করি। তাদের প্রকাশিত রিপোর্ট খুবই অবমাননাকর।’ তিনি আরো বলেন, গণহত্যার অপরাধ নানা আইনে নির্ধারিত রয়েছে। প্রমাণহীন ভাবে এ শব্দ ব্যবহার করা যায় না। প্রমাণ ছাড়া অন্য একটি দেশের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আনা সম্পূর্ণ দায়িত্বজ্ঞানহীন। যুক্তরাষ্ট্রের এহেন অপপ্রচার তার নিজের ভাবমর্যাদা ক্ষুন্ন করবে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া ছুন ইং সম্প্রতি বেইজিংয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, সবাই যুক্তরাষ্ট্রকে একটি আয়না দিতে পারে, যাতে আয়নার মধ্যে তারা নিজেদের ভাবমূর্তি দেখে তা ঠিক করতে পারে। তিনি বলেন, মার্কিনীরা নিজের নীতি ও আচরণের মাধ্যমে বিশ্বে জবরদস্তি কূটনীতির ক্লাসিক উদাহরণ স্থাপন করেছে। তারা সামরিক হুমিক, রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা, অর্থনৈতিক দমন, ও প্রযুক্তিগত অবরোধের মাধ্যমে নিজেদের কৌশলগত উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করছে।
সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, অস্ট্রেলিয়া একা চীনের অর্থনৈতিক জবরদস্তির মোকাবিলা করবে না।
মুখপাত্র হুয়া ছুন ইং বলেন, মার্কিনীরা জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাতে অন্য দেশের হাইটেক কোম্পানিকে দমন করে চলছে। ফ্রান্স, জাপান এবং চীনের নানা কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক জবরদস্তির শিকার হয়েছে।