করোনা মহামারি: ত্রিমুখী সংকটে বাংলাদেশ
2021-05-16 19:23:01

করোনা মহামারি নিয়ে এখন ত্রিমুখী সংকটে বাংলাদেশ। প্রথমত: বেপরোয়া ঈদযাত্রা ও ফেরায় ব্যাপক সংক্রমণে আশঙ্কা। দ্বিতীয়ত: ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা। আর তৃতীয়ত: টিকার অনিশ্চয়তা।

লকডাউনে দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও ঈদযাত্রা থেকে বিরত রাখা যায়নি মানুষজনকে। ছোট ছোট যানবাহনে গাদাগাদি করে মানুষ ফিরেছে বাড়ি। ফেরি পারাপরে মানুষের মরিয়া চেষ্টার খবর গত কদিন ধরেই সংবাদের শিরোনাম হয়েছে। ঈদ শেষে কর্মজীবী মানুষ আবার ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে। ফেরি-সড়ক-মহাসড়কে এখন শহরমুখী জনস্রোত। এতে করে ঈদের পর করোনা সংক্রমণ ব্যাপকভাবে বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।

দৃশ্যত দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ রেখে হিতে-বিপরীত হয়েছে। তাই শহরমুখী মানুষ জনের যাতায়াতে দূরপাল্লার বাস চালুর বিষয়টি ভাবতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন করোনা বিষয়ক জাতীয় কারিগরি কমিটির প্রধান অধ্যাপক মোহাম্মদ সহীদুল্লাহ। যদিও এ বিষয়ে সরকারের তরফে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। ফলে বাড়িযাত্রার মতোই ঝুঁকি নিয়ে শহরে ফিরছে কর্মজীবী মানুষ।

ঈদকে কেন্দ্র করে শপিংমলে কেনাকাটা, ঈদযাত্রা ও ফেরায় ব্যাপক গণচলাচলে করোনা সংক্রমণ বাড়ার লক্ষ্মণ এরই মধ্যে দেখা গেছে। ঈদের একদিন পরই ১৬ মে সংক্রমণ ও মৃত্যু দুইই বেড়েছে আগের দিনের তুলনায়। এ ক্ষেত্রে এখন আরেকটি বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট। অতি সংক্রামক এ ভ্যারিয়েন্ট ব্যাপকভাবে

ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে। আর তা হলে পরিস্থিতি খুবই নাজুক হবে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এবিএম খুরশীদ আলম।

ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ঠেকাতে সীমান্ত বন্ধ রয়েছে। কিন্তু সীমান্তে অবৈধ চলাচল সম্পূর্ণভাবে রোধ করা অসম্ভব প্রায়। এ পরস্থিতিতে সীমান্ত এলাকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গণটিকাদান কর্মসূচির পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। সীমান্তে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মতো নজরদারির কথা বলেছেন তারা। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সীমান্ত এলাকায় বেশি বেশি করে করোনা পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু যেখানে টিকার অভাবে টিকাদান কর্মসূচিই বন্ধ হবার মতো অবস্থায়, সেখানে সীমান্ত এলাকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকাদান কর্মসূচি চালানো আদৌসম্ভব কিনা সে প্রশ্ন রয়েছে। ভারত থেকে আসা করোনা রোগীদের হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাবার মতো ঘটনা ঘটেছে। এমন একটা পরিস্থিতিতে প্রশ্ন-আদৌ ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট থেকে রেহাই মিলবে কি-না বাংলাদেশের।

এদিকে হাতে অক্সফোর্ডের টিকার যে মজুদ রয়েছে তাতে বড়জোর আর দুচারদিন চলবে। ১৪ লাখ মানুষের দ্বিতীয় ডোজ টিকা পাওয়া অনিশ্চিত। অর্থাৎ গণটিকাদান কর্মসূচিই বন্ধ হয়ে যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঈদ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে ভাষণে বলেছেন সবাইকে টিকার আওতায় আনা হবে। বিভিন্ন উৎস থেকে শিগগির এক কোটি টিকা কেনা হচ্ছে বলে জানান তিনি। চীন ও রাশিয়ার টিকা পেতে আলোচনা অনেকদূর এগিয়েছে- সরকারের তরফে একথা বলা হলেও এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি কখন সে টিকা পাওয়া যাবে।

এমন এক পরিস্থিতিত কিছুটা স্বস্তির খবর চীনের উপহারের ৫ লাখ টিকা দেশে এসে পৌঁছেছে নির্ধারিত সময় ১২ মেতে। ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল

মোমেন ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের কাছে উপহারের টিকা তুলে দেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী টিকা উপহারের জন্য বন্ধুরাষ্ট্র চীনকে ধন্যবাদ জানান। বাংলাদেশকে চীন আরও টিকা দেবে আশা প্রকাশ করে তিনি টিকা তৈরিতে বেইজিংয়ের সহায়তা চান। আর প্রতিমাসে বাংলাদেশকে টিকা সরবরাহের আহ্বান জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

করোনা মহামারি প্রতিরোধে চীন বাংলাদেশের পাশে রয়েছে বলে জানান চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। তবে টিকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে অনেক বিলম্ব করায় টিকা প্রাপ্তিতে বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে বলে জানান তিনি।

অর্থাৎ বিষয়টা এই দাঁড়িয়েছে যে, চীনের কাছ থেকে বাংলাদেশ টিকা পাবে। কিন্তু বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করায় টিকা প্রাপ্তিতে বিলম্ব হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম জানান, চলতি মে মাসের শেষে কিংবা জুনের প্রথম দিকে জানা যাবে কখন পাওয়া যাবে চীনের টিকা। অর্থাৎ টিকার অনিশ্চয়তায় রয়ে গেছ বাংলাদেশ।

মাহমুদ হাশিম

ঢাকা স্টেশন, চীন আন্তর্জাতিক বেতার।