প্রথমে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের গত এক সপ্তাহের কর্ম তত্পরতা তুলে ধরছি...
গত ৭ মে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এবং কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট ফলিক্স আন্তোইন তিশিসেকিদি শিলোম্বোর মধ্যে এক ফোনালাপ অনুষ্ঠিত হয়।
ফোনালাপে সি চিন পিং বলেন, কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র চীনের গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী ও অংশীদার। দু’দেশ পরস্পরকে বিভিন্ন ইস্যুতে সমর্থন করে আসছে। চীন সব সময় কৌশলগত দিক থেকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে দেখে। কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ প্রকল্পে সহযোগিতা জোরদার করতে ইচ্ছুক চীন।
একই দিন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির চেয়ারম্যান থমাস বাখের সঙ্গে ফোনে আলাপ করেন।
আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফের নির্বাচিত হওয়ায় থমাস বাখকে অভিনন্দন জানান চীনা প্রেসিডেন্ট।
তিনি বলেন, মহামারী সত্ত্বেও আইওসি সারা পৃথিবীর মানুষকে সংযুক্ত করার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে। টোকিও অলিম্পিক গেমস সুষ্ঠুভাবে আয়োজনে, বিশেষ করে টিকা সরবরাহের ক্ষেত্রে আইওসি’র সঙ্গে সহযোগিতা চালাতে ইচ্ছুক চীন।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিকের জন্য প্রস্তুতিমূলক কাজ চলছে। চলতি বছরের শেষার্ধে চীন বিভিন্ন ইভেন্টের পরীক্ষামূলক প্রতিযোগিতা আয়োজন করবে।
গত ১৬ মে চীনের প্রসিডেন্ট সি চিন পিং “ওয়েন সি চে” নামক একটি সাময়িকীর সম্পাদনা বিভাগের সদস্যদের একটি চিঠির উত্তর পাঠিয়েছেন। এতে সুষ্ঠুভাবে দর্শন ও সমাজ বিজ্ঞানের সাময়িকী উন্নয়নে তিনি তাঁর প্রত্যাশা ব্যক্ত করার পাশাপাশি কিছু দিক-নিদের্শনা দেন।
তিনি বলেন, “ওয়েন সি চে” সাময়িকীর জম্মের ৭০ বছর ধরে সিপিসির নেতৃত্বে কয়েক প্রজন্মের সম্পাদনা সদস্যরা উদ্ভাবনের চেতনা অনুসারে চীনা সভ্যতা প্রচার ও অ্যাকাডেমিক গবেষণা সমৃদ্ধ করার খাতে অনেক ইতিবাচক কাজ করে আসছেন। তাঁরা দেশ ও বিদেশে অনেক সুনাম পেয়েছেন। তাঁদের প্রচেষ্টা প্রসংশনীয়।
তিনি আরো বলেন, উচ্চ গুণগত মানের সাময়িকীর উচিত উদ্ভাবনের চেতনা ধারন করা, উচ্চ মানের গবেষণার সুফলাফল প্রদর্শন করা এবং চীন ও বিদেশের শিক্ষাবিদদের আদানপ্রদান ত্বরানিত্ব করা।
তিনি বলেন, “আশা করি, আপনারা আরো প্রচেষ্টা চালিয়ে সাময়িকীর মান আরো উন্নত করবেন।”
২. চীনের সপ্তম জাতীয় জনগণনা ফলাফল প্রকাশিত; চীনের জনসংখ্যার সংকট নিয়ে অপপ্রচারের খণ্ডন
গত ১১ মে চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের তথ্য কার্যালয় এক সাংবাদিক সম্মেলনে সপ্তম জাতীয় জনগণনা ফলাফল প্রকাশ করেছে। ২০২০ সালে চীনের জনসংখ্যা ছিল ১৪১ কোটি, যা বিশ্বের জনসংখ্যার ১৮ শতাংশ। চীন জনসংখ্যায় এখনো বিশ্বের শীর্ষ স্থানে রয়েছে।
এবারের জনগণনা ফলাফল অনুযায়ী, চীনে ১৬-৫৯ বছর বয়সী কর্মক্ষম লোকসংখ্যা রয়েছে ৮৮ কোটি। ২০২০ সালে ১৪১ কোটি চীনা জনসংখ্যার মধ্যে শহরে বাস করেন ৯০ কোটির বেশি। যা মোট জনসংখ্যার ৬৩.৮৯ শতাংশ। তবে, ১৯৮২ সালে চীনের শহরবাসীর সংখ্যা দেশের মোট জনসংখ্যার ২০.৯ শতাংশ ছিল। গত ৪০ বছরে চীন নগরায়নের প্রক্রিয়া দ্রত অগ্রগতি লাভ করেছে।
চীনের ৫৫টি সংখ্যালঘু জাতির জনসংখ্যা গত বছর ১২ কোটি ৫০ লাখ ছাড়িয়েছে। অথচ ১৯৮২ সালে এ সংখ্যা ছিল মাত্র ৬ কোটি ৭২ লাখ ৯০ হাজার। পরিসংখ্যান মতে, মোট ৫ কোটি ৮০ লাখ লোক বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ৩৮ বছরে বৃদ্ধির হার ছিল ৮৬ শতাংশ। গত বছর চীনে ১৫ ও এর বেশি বছর বয়সী জনসংখ্যার নিরক্ষরতার পরিমাণ ছিল মাত্র ৫ কোটি ৪৬ লাখ ৬০ হাজার। অথচ ১৯৮২ সালে এ সংখ্যা ছিল ২২ কোটি ৯০ লাখ।
পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, চীনের জনসংখ্যা জনশক্তিতে পরিণত হচ্ছে, যা চীনের উন্নয়নের ভিত্তি আরো সুসংহত করবে।
চীনের জনসংখ্যার প্রবণতা নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোতে উত্তপ্ত আলোচনা হচ্ছে। এর মধ্যে একটি বিষয় হচ্ছে, চীন নিম্ন জন্ম হার এবং বয়স্ক জনসংখ্যার দৈত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন, যা চীনের অর্থনীতিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। তবে সর্বশেষ জরিপ থেকে দেখা যাচ্ছে যে, অবস্থা আশঙ্কাজনক নয়।
গত ১০ বছরে চীনের জনসংখ্যা বেড়েছে মাত্র ৭ কোটি ২০ লাখ ৬০ হাজার। এর মধ্যে ০-১৪ বছর বয়সী শিশু বেড়েছে ৩ কোটি ৯ লাখ ২০ হাজার। বর্তমানে চীনে ১৬-৫৯ বছর বয়সী কর্মযোগ্য জনসংখ্যা রয়েছে ৮৮ কোটি। তাদের গড় বয়স ৩৮.৩ বছর, যা যুক্তরাষ্ট্রের সমান।
তাই চীনের জনসংখ্যা বুঝা নয় বরং আশীর্বাদ। নানা প্রভাবে ভবিষ্যতে চীনের জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার ধীর হবে। তবে চীনের জনসংখ্যা কখনো সংকটে রূপ নেবে না।
এ প্রসঙ্গে আপনার মতামত কী? এনাম।
৩. সম্প্রতি মার্কিন সরকার করোনা টিকার মেধাস্বত্ব অধিকার সংরক্ষণ ব্যবস্থা তুলে নেওয়ার উপর সমর্থন ব্যক্ত করেছে। ওয়াশিংটন পোস্ট মন্তব্য করেছে যে, এটি বর্তমান মহামারি লাঘবের কার্যকর প্রস্তাব নয়। তবে এটি দেখতে আকষর্ণীয় এবং দ্রুত ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণা উচ্চকণ্ঠে হলেও তাতে বাস্তব তত্পরতার অভাব রয়েছে। এটি তাদের একটি রাজনৈতিক প্রচারণা।
করোনা টিকার মেধাস্বত্ব অধিকার সংরক্ষণ ব্যবস্থা তুলে নিতে ১৬৪টি ডবলিউটিও সদস্যের মতৈক্য দরকার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডবলিউটিও’র এ নিয়ে বৈঠক অনেক সময় লাগবে। এতো সময় লাগা বৈঠক কোনভাবেই মহামারির জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারবে না। সম্প্রতি ইউরোপীয় কমিশনের চেয়ারম্যান ইরসুলা ভনদের লেয়েন বলেন, বিশ্বের জন্য বিদ্যমান সবচেয়ে জরুরি হল টিকার পর্যাপ্ত সরবরাহ এবং সমতাসম্পন্ন বিতরণ। মেধাস্বত্ব অধিকার এখন তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়।
বিশ্বজুড়ে টিকা সংকট পেটেন্টের কারণে তৈরি হয় নি। টিকার অসম বিতরণের কারণে হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের টিকা শত শতাংশ সেদেশে প্রদান করা হয়, যার ফলে ধনী দেশে টিকার অতিরিক্ত মুজদ তৈরি হয় এবং গরিব দেশে টিকার অভাব দেখা দেয়।
এ প্রসঙ্গে আপনার মতামত কী? এনাম।