মে ১৩: চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো ১১ মে জাতীয় তথ্য-কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে সপ্তম জাতীয় আদমশুমারির মূল তথ্য ঘোষণা করে। পরিসংখ্যানে বলা হয়, চীনে মোট লোকসংখ্যা ১৪১ কোটি ১৭ লাখ ৮০ হাজার। ফলে চীন বিশ্বে লোকসংখ্যার দিক থেকে শীর্ষ স্থানেই রয়ে গেছে। বিগত ১০ বছরে চীনের জনসংখ্যা কম গতির প্রবৃদ্ধির প্রবণতা বজায় রেখেছে। ‘আজকের টপিক’ আসরে আমরা এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।
সপ্তম জাতীয় আদমশুমারির তথ্য অনুসারে, দেশের মোট জনসংখ্যা ১৪১ কোটি ১৭ লাখ ৮০ হাজার, যা ২০১০ সালে ষষ্ঠ জাতীয় আদমশুমারির তুলনায় ৫.৩৮ শতাংশ বেশি। ২০১০ সালে এই সংখ্যা ছিল ১৩৩ কোটি ৯৭ লাখ ২০ হাজার। এটি ২০০০ থেকে ২০২০ সালের বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধির হারের চেয়ে ০.০৪ শতাংশ পয়েন্ট কম।
চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর পরিচালক নিং চে মনে করেন, এবারের জনগণনার ফলাফল থেকে বোঝা যায় যে, বর্তমান বিশ্বে চীনের জনসংখ্যা সবচেয়ে বেশি। বিগত দশ বছরে জনসংখ্যা ধারাবাহিকভাবে প্রবৃদ্ধির প্রবণতা বজায় রেখেছে। এই ক্ষেত্রে তিনটি প্রধান ফ্যাক্টর আছে। এই সম্পর্কে তিনি বলেন, “প্রথমত, আমাদের দেশের জনসংখ্যা বেশি। বর্তমানে দেশে সন্তানধারণক্ষম ৩০ কোটিরও বেশি নারী রয়েছেন, যারা প্রতিবছর এক কোটিরও বেশি সন্তান জন্ম দিতে পারেন। দ্বিতীয়ত, পরিবার পরিকল্পনা নীতির ইতিবাচক ফলাফল অর্জিত হয়েছে। তৃতীয়ত, জনগণের গড় আয়ু বাড়ছে।”
পরিসংখ্যান অনুসারে, চীনে বর্তমানে ০ থেকে ১৪ বছর বয়সী জনসংখ্যা ২৫ কোটি ৩৩ লাখ ৮০ হাজার, যা মোট লোকসংখ্যার ১৭.৯৫ শতাংশ। ১৫ থেকে ৫৯ বছর বয়সী জনসংখ্যা ৮৯ কোটি ৪৩ লাখ ৮০ হাজার, যা মোট লোকসংখ্যার ৬৩.৩৫ শতাংশ। ৬০ থেকে ও তার বেশি বয়সী জনসংখ্যা ২৬ কোটি ৪০ লাখ ২০ হাজার, যা মোট লোকসংখ্যার ১৮.৭০ শতাংশ। ২০১০ সালের তুলনায় চীনে শিশুদের অনুপাত পুনরুদ্ধার হয়েছে । এটি পরিবার পরিকল্পনার নীতির সমন্বয়ের বেড়েছে।
মহাপরিচালক মনে করেন, সামগ্রিকভাবে চীনের শ্রমবাজার এখনও চাঙ্গা। এই সম্পর্কে তিনি বলেন
“আদমশুমারির ফলাফলে দেখা যায় যে, চীনে ১৬ থেকে ৫৯ বছর বয়সী মানুষের সংখ্যা ৮৮ কোটি। এর মানে দেশে শ্রমশক্তির অভাব নেই। এবারের আদমশুমারির ফলাফলের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে যে, চীনে লোকসংখ্যার গড় বয়স হচ্ছে ৩৮.৮। সামষ্টিকভাবে চীনের জনগণ এখনও তরুণ ও শক্তিশালী। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সর্বশেষ আদমশুমারির তথ্য ঘোষণা করেছে। তাদের গড় বয়স হচ্ছে ৩৮ বছর, যা আমাদের প্রায় সমান।”
আদমশুমারির তথ্য অনুসারে, চীনে ৬০ বছর ও এর বেশি বয়সী লোকসংখ্যা মোট জনসংখ্যার ১৮.৭০ শতাংশ। এর মধ্যে ৬৫ বছর বা তারচেয়ে বেশি বয়সীদের সংখ্যা ১৩.৫০ শতাংশ। মহাপরিচালক নিং মনে করেন, জনসংখ্যার বয়োবৃদ্ধি হচ্ছে সামাজিক উন্নয়নের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রবণতা। এটি ভবিষ্যতে চীনে দীর্ঘ সময় ধরে এক মৌলিক অবস্থা হিসেবে বিরাজ করবে। এটি কেবল যে চ্যালেঞ্জ তা নয়, বরং সুযোগও বটে। এই সম্পর্কে তিনি বলেন
‘উদাহরণস্বরূপ, চ্যালেঞ্জের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, জনসংখ্যার বার্ধক্য শ্রমের সরবরাহ কমিয়ে দেবে, পারিবারিক পেনশনের বোঝা বাড়িয়ে দেবে এবং বেসিক পাবলিক সার্ভিসের চাহিদা বাড়াবে। একই সাথে আমাদের অবশ্যই দেখতে হবে যে, জনসংখ্যার বয়োবৃদ্ধি অর্থনীতির বিকাশ ঘটিয়েছে। এটি প্রবীণদের পণ্য কেনাকাটা এবং সংশ্লিষ্ট সেবা ক্ষেত্র প্রসারিত করেছে। এই প্রক্রিয়ায় কিছু নতুন সুযোগও বয়ে আনবে।”
শুমারি অনুসারে, দেশের পূর্বাঞ্চলের জনসংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৩৯.৯৩ শতাংশ, মধ্যাঞ্চলে ২৫.৮৩ শতাংশ, পশ্চিমাঞ্চলে ২৭.১২ শতাংশ, এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ৬.৯৮ শতাংশ। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)