চীনের সপ্তম আদমশুমারি
2021-05-12 16:10:51

মে ১২: চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো গতকাল (মঙ্গলবার) সপ্তম জাতীয় জনসংখ্যা জরিপ বিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, বিগত দশ বছর ধরেই চীনে জনসংখ্যা অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পেয়ে আসছে। কিন্তু জন্মের হার নিম্ন। চীনা জনসংখ্যা সমিতির সভাপতি চাই চেন উ বলেন, ‘চতুর্দশ পাঁচসালা পরিকল্পনা’ বাস্তবায়নকালে চীনে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার শূন্যে নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। জন্মের হার বাড়াতে হলে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে চীনাদের সন্তান জন্মদানের ইচ্ছা বা আগ্রহ বাড়াতে হবে।

জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রকাশিত সপ্তম জাতীয় জনসংখ্যা জরিপ বিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে চীনের জনসংখ্যা ছিল ১৪১ কোটি, যা বিশ্বের জনসংখ্যার ১৮ শতাংশ। ২০১০ সালে পরিচালিত ষষ্ঠ জাতীয় জনসংখ্যা জরিপে যে জনসংখ্যার হিসেব পাওয়া গিয়েছিল, এবার তার তুলনায় জনসংখ্যা বেড়েছে ৭ কোটি ২০ লাখ ৬০ হাজার বা ৫.৩৮ শতাংশ। প্রতি বছর জনসংখ্যার গড় বৃদ্ধির হার ০.৫৩ শতাংশ। পরিসংখ্যানে আরো বলা হয়েছে, ২০২০ সালে চীনের সন্তান জন্মদানে সক্ষম নারীরা মাথাপিছু গড়ে ১.৩টি করে সন্তান জন্ম দিয়েছেন। এ হার বিশ্বের নিম্ন স্তরে রয়েছে। চাই চে উ মনে করেন, এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে চীনের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হবে শূন্য। গত ১০ বছরে চীনের জনসংখ্যা বেড়েছে মাত্র ৭ কোটি ২০ লাখ ৬০ হাজার। এর মধ্যে ০-১৪ বছর বয়সী শিশু-কিশোরের সংখ্যা বেড়েছে ৩ কোটি ৯ লাখ ২০ হাজার। বর্তমানে চীনে ১৬-৫৯ বছর বয়সী কর্মক্ষম জনসংখ্যা রয়েছে ৮৮ কোটি, যাদের গড় বয়স ৩৮.৩ বছর, যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সমান। এ সম্পর্কে তিনি বলেন,

“চীনের বিশাল জনসংখ্যার কারণে দেশের জ্বালানিসম্পদ ও পরিবেশের ওপর বিরাট চাপ পড়ে। আমাদের জনসংখ্যা শীর্ষে পৌঁছানোর পরে ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে। এটি কয়েক দশক আগে প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু বর্তমানে জন্মের হার এতো কমে গেছে যে, তা নিয়ে আমাদের গভীরভাবে ভাবতে হবে।”

চাই মনে করেন, জন্মের হার হ্রাস পেয়েছে চীনের আধুনিকায়নের অনিবার্য পরিণতি হিসেবে। গোটা বিশ্বে শিল্পায়ন ও আধুনিকায়নের পথে চলতে গিয়ে বিভিন্ন দেশ একই অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। কেউ কেউ মনে করেন, যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এ পরিস্থিতি পরিবর্তন করা যেতে পারে। এ সম্পর্কে চাই বলেন,

“আসলে এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদ্ধতির খুব সামান্য প্রভাব আছে। সেজন্য আমাদের দেশে জন্মের হার নিম্ন স্তরে ফিরে এসেছে।”

তিনি আরও বলেন, এমন পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে যাতে নারীরা কোনও ধরনের উদ্বেগ ছাড়াই সন্তান গ্রহণ করতে পারে। নিম্ন আয়, ব্যস্ততা হলো সন্তান জন্ম দেওয়ার ইচ্ছা হ্রাস পাওয়ার প্রধান কারণ। তিনি মনে করেন, সম্পূর্ণ চাইল্ড কেয়ার সার্ভিস ব্যবস্থা গড়ে তুললে এক্ষেত্রে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটতে পারে।  তিনি আরও বলেন,

 “চীন জনসংখ্যায় এখনও বিশ্বের শীর্ষ স্থানে রয়েছে।  পরিসংখ্যান অনুসারে, চীনের জনসংখ্যা জনশক্তিতে পরিণত হচ্ছে, যা চীনের উন্নয়নের ভিত্তি আরও সুসংহত করবে। আমার মনে হয়, দ্রুত ও ব্যাপকভাবে একটি সম্পূর্ণ চাইল্ড কেয়ার সার্ভিস ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। তাই চীনের জনসংখ্যা বোঝা নয়, বরং আশীর্বাদ। নানা প্রভাবে ভবিষ্যতে চীনের জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার ধীর হবে, তবে চীনের জনসংখ্যা কখনও সংকটে রূপ নেবে না।” (ছাই/আলিম/ওয়াং হাইমান)