শ্রমিক দিবসের ছুটিতে চীনের পর্যটন আয় ১১,৩২০ কোটি ইউয়ান
2021-05-12 13:37:47

কোভিড-১৯ মহামারির কারণে চীনে সব কিছুই থমকে দাঁড়িয়ে ছিল। গত বছর চীনারা বড় কোন ছুটি বাইরে কাটাতে পারে নি। তবে, পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। তাই তারা প্রথম বড় ছুটি হিসেবে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের পাঁচদিনের ছুটি বাইরে কাটিয়েছেন। এ সময় তারা ইচ্ছা মতো সারা চীন ভ্রমণ করেছেন। পরিসংখ্যান মতে, মোট ২৩ কোটি মানুষ এ সময় ভ্রমণ করেছেন এবং  পর্যটন ক্ষেত্রের আয় ১১৩২০ কোটি ইউয়ানে দাঁড়ায়। তার মানে প্রত্যেকে গড়ে ১,৭১৩ ইউয়ান ব্যয় করেছেন। তা ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

এ সময় সারা চীনের দর্শনীয় স্থানগুলো খুব ব্যস্ত ছিল। কয়েকজন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বলেন, তারা অনেক আগে থেকেই ভেবেছিলেন যে অনেক লোক হবে এবার, তবে, এত বেশি যে হবে, তা তারা কল্পনাও করেন নি। কেউ কেউ বলেন, কেবল দর্শনীয় স্থানের ভেতরে ঢুকতে ২ ঘন্টা সময় লেগেছে। সকাল ৫টায় সব টিকিট বিক্রি হয়ে যায়। তাদের কথায় বুঝা যায় যে, এখন চীনের পর্যটন বাজার আগের পর্যায়ে ফিরেছে।

একটি পর্যটন বিষয়ক ওয়েবসাইটের  উপাত্ত থেকে জানা গেছে, ছুটির সময়ে বিমান টিকিটের বুকিং পরিমাণ ২০১৯ সালের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি ছিল। ছুটির প্রথম দিন বিমান টিকিট ও হোটেল চেকিং পরিমাণ নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।

বেইজিং, শাংহাই, চেংতু, কুয়াং চৌ ও ছুংছিংসহ শহরে পর্যটকদের সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে ছেং তু শহরের বিমান টিকিট ও হোটেলের  মাথাপিছু ব্যয় ছিল সবচেয়ে বেশি তথা ২,৬০০ ইউয়ান।

আলিপের উপাত্ত অনুযায়ী, এবারের ছুটিতে দর্শনীয় স্থানে লেনদেনের পরিমাণ ২০২০ সালের একই সময়ের তুলনায় ২ গুণ বেশি ছিল।

পর্যটন কালে খাওয়ার খরচও কম নয়। ইউনিকমের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ছুটির প্রথম ৪ দিনে চীনের খাদ্য এবং পানীয় খরচ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি ছিল। এ সময় অনলাইন খাবার অর্ডার অনেক বৃদ্ধি পায়। এর মধ্যে বেশি মানুষ হোটেল থেকে নাস্তা অর্ডার ও গভীর রাতে খাবার অর্ডার করেন। কফি ও ভাজা খাবার এবং নানা স্থানীয় খাবার বেশি অর্ডার হয়।

অনেকে দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ শেষ করার আগে অনলাইনে খাবার অর্ডার দেন এবং হোটেলে ফিরে আসার সময় খাবারও পৌঁছে যায়। অনেক সুবিধাজনক, তাইনা? অন্য দিকে, রেস্তোঁরায় খেতে চাইলে লাইন ধরা একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। ব্যস্ত সময়ে অন্তত ৩০ মিনিটের মতো অপেক্ষা করতে হয়। কোন কোন রেস্তোঁরায় অনেক আগ থেকে সব বুকিং করা থাকে।

ভ্রমণ ও খাওয়া ছাড়া, অনেকে আবার ছুটির সময়ে কেনাকাটা করেন। হাইনান দ্বীপের শুল্কমুক্ত দোকানের ব্যবসা খুব ব্যস্ত ছিল। হাইখো  শহরের শুল্ক বিভাগের পরিসংখ্যা অনুযায়ী, গত ১-৩ মে হাইনান দ্বীপের শুল্কমুক্ত কেনাকাটার পরিমাণ ছিল ৪৮.৫ কোটি ইউয়ান। মোট ৬৫.৪ হাজার মানুষ মোট ৭ লাখ ২৯ হাজারটি পণ্য কিনেছেন। তা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় যথাক্রমে ২১৫.২৪ শতাংশ, ১৪০.২৩ শতাংশ ও ২২২.৭৯ শতাংশ বেশি। তাছাড়া, অনলাইন কেনাকাটাও অনেক বৃদ্ধি পায়। ছুটির প্রথম ৪ দিন, অনলাইন খুচরা বিক্রির পরিমাণ ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও ২০-৩০ বছর বয়সীরা অনলাইন মূল ক্রেতা, তবে ৪৬ বা তার চেয়ে বেশি বয়সীরা অনেক বেশি ক্রয় করেন।

গরম কাল ভোগ্য বাজার চাঙ্গার পেছনে ভূমিকা রাখে। এর আগে প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে চীনের অর্থনীতি উন্নয়নের প্রবণতা ভাল ছীল। মহামারিও নিয়ন্ত্রিত রয়েছে। তাই ছটির সময়ে এমন দৃশ্য বিস্ময়কর না। পাশাপাশি চীনের টিকাদান কার্যক্রম দ্রুত চলছে। চীনা বাজারের পুরুদ্ধার আরও হবে এবং মাহামারি-পূর্ববর্তী পর্যায়ে ফিরিয়ে যেতে পারবে বলে বিশ্বাস করা যায়। (শিশির/এনাম/রুবি)