সাবধান, করোনার ভারতীয় ধরন বাংলাদেশে!
2021-05-09 19:32:40

করোনার অতিসংক্রমণশীল ভারতীয় ধরন বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা ছিল সংশ্লিষ্ট মহলে। এ জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তও বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল- যা এখনো বলবৎ রয়েছে। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। ভারত-ফেরত ৬ যাত্রীর দেহে করোনার ভারতীয় ধরন শনাক্ত হয়েছে। খোদ সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআর এ তথ্য জানিয়েছে। 
করোনা দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভারত বিপর্যস্ত হয়েছে অতি সংক্রমণশীল এ ধরনে। এটি কতটা সংক্রামক তা বোঝা যায় ভারতে গত কয়েকদিনের সংক্রমণ ও মৃত্যুর দিকে তাকালে। গত টানা চারদিন ধরে ভারতে চার হাজারের ওপরে মানুষের মৃত্যু হয়েছে, আর শনাক্ত হয়েছে ৪ লাখের ওপরে। করোনা মহামারি শুরুর পর একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ডও এখন ভারতের। 
করোনা এ ধরন নিয়ে উদ্বেগে গোটা বিশ্ব। নিকটতম প্রতিবেশি হিসেবে বাংলাদেশের উদ্বেগটা ছিল বেশি। সীমান্ত বন্ধ করা হলেও আশঙ্কা করা হচ্ছিল আগেই ভারতীয় ধরন বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। শেষ পর্যন্ত তাই সত্য হলো। আইইডিসিআর ৮ মার্চ সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশে এ ভাইরাস শনাক্তের ঘোষণা দেয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, যশোরের বেনাপোল দিয়ে দেশে ফিরে আসা ৬ জনের দেহে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। 
এতে উদ্বেগ প্রকাশ করে অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বলেন, এখনই সতর্ক না হলে পরিণতি খুব খারাপ হতে পারে। সবশেষ ৯ মে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট খুবই বিপজ্জনক। তাই পরিবারের সদস্যদের ঝুঁকিমুক্ত রাখতে বাড়ি না গিয়ে যে যেখানে আছেন সেখানেই ঈদ করার আহ্বান জানান সরকার প্রধান। 
কিন্তু চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে দেশে লকডাউন চলছে। আন্তঃজেলা যাতায়াত ও বাড়ি যাওয়া ঠেকাতে দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে ১৬ মে অর্থাৎ ঈদের পর পর্যন্ত। কিন্তু কোনো কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। লোকজন পড়িমরি করে রাজধানী ছাড়ছে বিকল্প উপায়ে, এমনক পায়ে হেটেও। রাজধানীর শপিংমল ও বিপনীবিতানগুলোর ছবি দেখলে আৎকে উঠতে হয়। গাদাগাদি ভিড়ে মানুষ ঈদ কেনাকাটা করছে। এর ফলে ঈদের পরে আবার করোনা সংক্রমণ চক্রাকারে বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর এর সঙ্গে যদি ভারতীয় ধরন ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে তবে আর শেষ রক্ষা থাকবে না। 
এদিকে করোনা টিকার সংকট এখনো কাটাতে পারেনি বাংলাদেশ। চুক্তি ও উপহার মিলিয়ে বাংলাদেশ এ পর্যন্ত টিকা পেয়েছে ১ কোটি ২ লাখ ডোজ। ৮ মে পর্যন্ত প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলিয়ে টিকা নিয়েছেন ৯২ লাখের বেশি মানুষ। এর মধ্যে প্রথম ডোজ পেয়েছেন ৫৮ লাখ আর দ্বিতীয় ডোজ ৩৪ লাখের বেশি মানুষ। টিকা সংকটে ২৭ এপ্রিল থেকে প্রথম ডোজ দেওয় বন্ধ রয়েছে। হাতে যে টিকা মজুদ আছে তা দিয়ে দ্বিতীয় ডোজ দিলে সর্বমোট ৪৩ লাখ মানুষ দ্বিতীয় ডোজ পাবেন। অর্থাৎ প্রায় ১৪ লাখ মানুষ টিকার দ্বিতীয় ডোজ পাবেন না। কারণ আগামী দুমাসে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে কোনো টিকা পাওয়া যাবে না- এটা প্রায় নিশ্চিত। 
আশার কথা টিকা পেতে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা অনেকদূর এগিয়েছে। ১২ মের মধ্যে চীনের উপহারের ৫ লাখ ডোজ টিকা আসছে বলে নিশ্চিত করেছে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অক্সফোর্ডের ২ কোটি ডোজ টিকা চেয়েছে ঢাকা। আর জরুরি ভিত্তিতে ৪০ লাখ ডোজের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে।  কিন্তু ওয়াশিংটনের কাছ থেকে আদৌ টিকা পাওয়া যাবে কিনা তার কোনো নিশ্চয়তা মেলেনি এখনো। 
এর মধ্যে আরেকটি ভালো খবর- চীনের সিনোফার্মের টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। এর ফলে চীনের টিকার কার্যকারিতা নিয়ে জনমনে যে প্রশ্ন রয়েছে তার একটা সুরাহা হলো। এখন যতদ্রুত সম্ভব চীনের সঙ্গে টিকা আনা কিংবা দেশে উৎপাদনের চুক্তি হয় ততোই মঙ্গল। 
মাহমুদ হাশিম
ঢাকা স্টেশন, চীন আন্তর্জতিক বেতার।