চীনের সিনোফার্মের উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
2021-05-08 14:57:49

চীনের সিনোফার্মের উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা_fororder_499

মে ৮: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গতকাল (শুক্রবার) এক ঘোষণায় জানায়, চীনের সিনোফার্মের উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের টিকাকে আনুষ্ঠানিকভাবে জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে চীনের এই টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার  ‘জরুরি ব্যবহারের’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলো। এটি পশ্চিমা দেশের বাইরে থেকে নেওয়া করোনাভাইরাসের একমাত্র টিকা।

 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. তেদ্রোস আধহানম এদিন এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, এর ফলে ‘কোভ্যাক্স’ পরিকল্পনার টিকা কেনার আওতা বাড়বে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন দেশে চীনের এই টিকা ব্যবহারের অনুমোদন প্রক্রিয়া দ্রুত হবে ও আস্থা বাড়বে। বিভিন্ন দেশ এই টিকা আমদানি করতে ও ব্যবহার করতে পারে।

 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশিত খবরে বলা হয়, সিনোফার্মের টিকার গুণগতমান, নিরাপত্তা, কার্যকারিতা, ঝুঁকি মোকাবিলার দক্ষতা, উপযোগীতা ও টিকা উত্পাদন যন্ত্র-সহ বিভিন্ন বিষয় যাচাই করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইমিউন কৌশল পরামর্শ বিশেষ গ্রুপের চেয়ারম্যান আলেজান্দ্রো ক্রেভিটো এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, বিশেষজ্ঞ গ্রুপ সিনোফার্মের টিকার সার্বিক যাচাই করেছে, এই টিকার নিরাপত্তা এবং কার্যকারিতার সম্পূর্ণ প্রমাণ আছে। তিনি বলেন,

কর্মগ্রুপ চীনের সিনোফার্মের সব তথ্য সার্বিকভাবে যাচাই করেছে। এই টিকা নিরাপদ। লক্ষণ থাকা রোগী এবং হাসপাতালে থাকা রোগীর চিকিত্সায় এই টিকার কার্যকারিতার হার ৭৯ শতাংশ। আমরা মনে করি, এই টিকা ১৮ বছরের বেশি এবং বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে দেওয়া যায়।

 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আরো উল্লেখ করেছে যে, সিনোফার্মের টিকা সহজেই মজুত করা যায়। এই কারণে তা সম্পদের অভাবগ্রস্ত এলাকায় ব্যবহারের জন্য বেশ উপযুক্ত। ফাইজার, মডার্নাসহ কিছু টিকা অতি-নিম্ন তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়; কিন্তু সিনোফার্মের টিকা সাধারণ নিম্ন তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যায়। এই টিকার পাত্রে একটি মনিটর আছে। টিকা বেশি গরম তাপমাত্রায় রাখলে মনিটরে রংয়ের পরিবর্তন দেখা যাবে। এর মাধ্যমে চিকিত্সকরা এই টিকার নিরাপত্তার অবস্থা জানতে পারবেন। টিকার ঝুঁকি যাচাই-এর স্বাধীন বিশেষজ্ঞ গ্রুপের প্রধান আর্নাউদ দিদিয়ের লাউরেন্ট বলেন, সিনোফার্মের টিকা মধ্য ও নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে ব্যবহারের জন্য খুব উপযোগী। তিনি বলেন,

আমাদের যাচাইয়ে মধ্য ও নিম্ন আয়ের দেশের বিশেষ চাহিদার ওপর বেশি গুরুত্বারোপ করা হয়। যেমন, তারা কীভাবে টিকাদান বাড়াতে পারে ইত্যাদি। মূল কথা, সূচকের কঠোর যাচাই এবং উত্পাদনকারীর ব্যাখ্যার মাধ্যমে আমরা মনে করি, সিনোফার্মের ঝুঁকি ও মুনাফার যাচাই খুব ইতিবাচক।

 

শুধুমাত্র বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘জরুরি ব্যবহারের তালিকায়’ অন্তর্ভুক্ত টিকা ‘কোভ্যাক্স পরিকল্পনার’ আওতায় সরবরাহ করা যায়। এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য হল, চলতি বছরের শেষ নাগাদ সারা বিশ্ব, বিশেষ করে মধ্য ও নিম্ন আয়ের দেশগুলোকে দুই বিলিয়ন ডোজ টিকা দেওয়া। তবে টিকা সরবরাহের অভাবসহ বিভিন্ন কারণে, বর্তমানে কোভ্যাক্স পরিকল্পনার আলোকে মাত্র ৫.৪ কোটি ডোজ টিকা বিতরণ করা হয়েছে। সম্প্রতি  ভারতের মহামারির পরিস্থিতি খুব নাজুক হয়ে পড়েছে; দেশটির উত্পাদিত ফাইজার টিকা রপ্তানি বন্ধ করেছে; তাই ‘কোভ্যাক্স পরিকল্পনায়’ টিকা সংগ্রহের জন্য নতুন উত্স অনুসন্ধান খুব জরুরি হয়ে পড়েছে।

 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালকের উচ্চপদস্থ উপদেষ্টা ব্রুস আয়ওয়ার্ড বলেন, সিনোফার্ম বিশ্বের মহামারি প্রতিরোধের জন্য যথেষ্ট টিকা সরবরাহের চেষ্টা করবে। তিনি বলেন,

সিনোফার্ম কত টিকা দেবে, তা টিকা উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীল। উত্পাদনকারী বিপুল পরিমাণ টিকা সরবরাহের জন্য চেষ্টা করছে। অবশ্য, তা চীনা জনগণকে আগে সেবা দেবে। চীনের বিপুল জনসংখ্যার জন্য অনেক টিকা প্রয়োজন। তবে, যখন আমরা সিনোফার্মের সঙ্গে আলোচনা করেছি, তখন তারা বৈশ্বিক মহামারি প্রতিরোধে সাহায্য করতে আগ্রহ দেখিয়েছে; যা খুবই উত্সাহব্যঞ্জক।

 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আরো জানায়, এই টিকা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সের সীমারেখা রাখা উচিত নয়। কারণ, প্রাথমিক পরীক্ষার পরিসংখ্যান এবং ইমিউন সূচক প্রমাণ করেছে যে, এই টিকা বয়স্কদের জীবন বাঁচাতে পারে। আর বয়স্ক ও তরুণদের মধ্যে ভিন্ন নিরাপত্তা ঝুঁকির কোনো যুক্তি পাওয়া যায় নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইমিউন কৌশল পরামর্শ বিশেষজ্ঞ গ্রুপের প্রধান ক্রাভিটো বলেছেন, আসলে অনেক দেশ ৬০ বছরেরও বেশি বয়স্কদের সিনোফার্মের এই টিকা দিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অব্যাহতভাবে সংশ্লিষ্ট দেশের বয়স্কদের মধ্যে এই টিকার নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা তত্ত্বাবধান করবে।

(শুয়েই/তৌহিদ/জিনিয়া)