ওষুধ ছাড়াই নিয়ন্ত্রণে রাখুন থাইরয়েড সমস্যা
2021-05-07 19:04:57

থাইরয়েড সমস্যা একটি ব্যাপক-বিস্তৃত একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অনুমান, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ৫ কোটি মানুষ থাইরয়েডজনিত সমস্যায় আক্রান্ত। এর মধ্যে ৩ কোটি মানুষ জানেন না তারা এ সমস্যায় আক্রান্ত। থাইরয়েড গ্রন্হির অবস্থান গলায়। এখান থেকে বেশ কয়েকটি হরমোন তৈরি হয়। যখন এ গ্রন্হি থেকে হরমোনের উত্পাদন অস্বাভাবিক হয়, তখনই সমস্যার সৃষ্টি হয়। থাইরয়েড গ্রন্হি থেকে অতিরিক্ত হরমোন তৈরি হলে সেটি হাইপারথাইরয়েডিজম আর অপর্যাপ্ত হরমোন তৈরি হলে সেটি হাইপোথাইরয়েডিজম।

ওষুধ ছাড়াই নিয়ন্ত্রণে রাখুন থাইরয়েড সমস্যা_fororder_sheng3

থাইরয়েড সমস্যা হলে অনেকগুলো শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। যেমন ঘুম ঘুম ভাব আর সেই সাথে আলস্য আসে শরীরে। এছাড়া ধীরে ধীরে রক্তচাপ বাড়তে থাকে, ত্বকের কোমলতা কমে গিয়ে খসখসে হয়ে যায়, খাবারে অরুচি আসে, হঠাৎ ওজন বেড়ে বা কমে যায়, স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়, পা ফুলে যায়, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, চুল পড়তে শুরু করে, কোষ্ঠকাঠিন্যের দেখা দেয়, এবং মহিলাদের পিরিয়ডে সমস্যা হয়। হৃদযন্ত্রের সমস্যা ও অস্থিসন্ধিতে ব্যথাও দেখা  দেয় থাইরয়েড সমস্যার কারণে। তবে কতগুলো ঘরোয়া উপায় অনুসরণ করলে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় এই সমস্যা। জানিয়ে দিচ্ছি উপায়গুলো:

অ্যান্টিঅক্সিডেন্টযুক্ত ফল ও শাক-সবজি খান: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাইরয়েড সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করে। সেকারণে প্রতিদিনের খাবার তালিকায় একটু বেশি পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টযুক্ত ফল ও শাক-সবজি রাখুন। লাল আঙ্গুর, নাসপতি, স্ট্রবেরি, ডুমুর, পিচ, পেয়ার, কমলা, আম, তরমুজ, পেপে ও টমেটোতে ভাল পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে।

বেশি প্রোটিন গ্রহণ করুন: থাইরয়েডক নিয়ন্ত্রণ করতে প্রোটিনের মাত্রা বেশি থাকা প্রয়োজন। সেজন্য পাতে নিয়মিত মুরগির মাংস, ডিম ও দুগ্ধজাত খাবার রাখুন। উচ্চমানের টাইরোসিন আমিষযুক্ত খাবারও থাইরয়েডিজম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য খুব দরকারি। টাইরোসিন পেতে খান মাংস, মাছ, ডিম, কলা ও মিষ্টি কুমড়ার বিচি। এছাড়া গম, শস্যদানা, যব ও বার্লির মতো গ্লুটেন প্রোটিনযুক্ত খাবারও খেতে হবে নিয়মিত। এটা রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা রাখে।

ভিটামিন-বি১২যুক্ত খাবার খান: থাইরয়েড গ্রন্হিকে সঠিকভাবে কাজ করতে সহায়তা করে ভিটামিন-বি ১২যুক্ত খাবার। পনির, দুধ, দই ও ডিম ভিটামিন-বি১২’র ভাল উৎস। তাই নিয়মিত এ ধরনের খাবার খান।

আয়োডিনযুক্ত খাবার খান নিয়মিত: দেহে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়োডিন না থাকলে থাইরয়েড হরমোন তৈরি বাধাগ্রস্ত হয়, যা থেকে হাইপোথাইরয়েডিজম হয়। তাই নিয়মিত আয়োডিন যুক্ত খাবার খান।

পরযাপ্ত পরিমাণে ঘুমান: থাইরয়েড সমস্যা মোকাবিলা করতে হলে ঘুমের খুবই প্রয়োজন। ঘুমের ঘাটতি হলে এ সমস্যা বাড়ে। সেকারণে চেষ্টা করুন রাত না জাগতে। তবে যাদের রাতে কাজ করতে হয়, তারা দিনের বেলায় ঘুমিয়ে পর্যাপ্ত ঘুমের ঘাটতি মেটাতে পারেন।

পরযাপ্ত পরিমাণে আয়রন গ্রহণ করুন: শরীরে আয়রন বা লৌহের পরিমাণ কমে গেলে থাইরয়েডের সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেজন্য প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় আয়রনযুক্ত খাবার খান। গাজর, দুধ, সামুদ্রিক মাছ, শাকসবজি ও মৌসুমি ফলগুলোতেও প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে।

ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত খাবার খান: থাইরয়েড ঠিকভাবে কাজ করছে, এটা নিশ্চিত করাতে লিভারের সুস্থতা প্রয়োজন। ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত খাবার লিভারকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। তাই যেসব খাবারে ফ্যাটি অ্যাসিড আছে -- যেমন তেলযুক্ত মাছ, কাঁচা বাদাম, অলিভ অয়েল – সেগুলো বেশি খান।

শরীরচর্চা করুন: মানসিক চাপ থাইরয়েড সমস্যা বাড়ায়। তাই মানসিক চাপ কমাতে নিয়মিত শরীরচর্চা করুন।

চিনি এড়িয়ে চলুন: অতিরিক্ত চিনি গ্রহণ পরিহার করুন। অতিরিক্ত চিনি গ্রহণের ফলে টি-থ্রি ও টি-ফোর নামের দুটি হরমোন উত্পন্ন হয়, যা স্বাস্থ্যের পক্ষে খুব খারাপ। থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে খাদ্যতালিকা থেকে চিনি বাদ দিন।

কীটনাশক ও ভারী ধাতু থেকে দূরে থাকুন: কীটনাশক ও ভারী যেমন পারদ, ক্যাডমিয়াম ও দস্তা থাইরয়েড গ্রন্হির স্বাভাবিক কাজকে বাধাগ্রস্ত করে। সেকারণে এগুলো ব্যবহারের ব্যাপারে অতিরিক্ত সতর্ক হোন।

গয়ট্রোজেনাস খাবার কমান: থাইরয়েডে সমস্যা বাড়ায় গয়ট্রোজেনাস খাবার যেমন বাঁধাকপি, ফুলকপি, শিম, চিনাবাদাম, সয়াসস, ইত্যাদি। সেকারণে থাইরয়েডে সমস্যা থাকলে বেশি পরিমাণে এসব খাওয়া যাবে না; যখন খাবেন, রান্না করে খাবেন, কাঁচা নয়।