পারিবারিক বন্ধনবিষয়ক চলচ্চিত্রের ভবিষ্যত
2021-05-06 15:24:36

পারিবারিক বন্ধনবিষয়ক চলচ্চিত্রের ভবিষ্যত_fororder_姐姐

সম্প্রতি‘Sister’নামে একটি চলচ্চিত্র ইন্টারনেটে ব্যাপক আলোচিত হয়েছে। আসলে এ চলচ্চিত্রের ট্রেইলার বের হওয়ার পর নেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে তুমুল সাড়া ফেলেছে।

 

গত মাসের সমাধি পরিষ্করণ দিবসের ছুটির প্রথম দিনে‘Sister’ চলচ্চিত্র প্রদর্শনের পর এর বক্সঅফিসের আয় ১০ কোটি ইউয়ান রেনমিনপি ছাড়িয়ে যায়। পারিবারিক স্নেহ বন্ধনের উপর ভিত্তি করে তৈরি এ চলচ্চিত্রটি সমাধি পরিষ্করণ দিবসের ছুটির সময় দৈনিক দেখার সর্বোচ্চ রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। ‘hi, mom’ চলচ্চিত্রের পর এবার ‘Sister’নামে চলচ্চিত্রটি আবার পারিবারিক বন্ধনের দৃষ্টান্ত দিয়ে সফল হয়েছে।

 

চীন একটি স্নেহশীল সমাজ। বেশিরভাগ সময় পারিবারিক মমতার বন্ধনকে গুরুত্ব দিয়ে আমাদের পারস্পরিক সম্পর্ক বজায় রাখা হয়। প্রেম ও মৈত্রীর তুলনায় মমতার বন্ধন একটু অন্য রকম। কারণ কেউ তা এড়াতে পারে না এবং সব মানুষকেই তা মেনে চলতে হয়। মমতার বন্ধন বরাবরই চীনের নানা রকমের সাংস্কৃতিক শিল্পকর্মে বিদ্যমান থাকে।

 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মুলভূভাগের চলচ্চিত্র বাজারের প্রাণবন্ত উন্নয়নের ফলে নানা বিষয়ের চলচ্চিত্রের মধ্যে বক্সঅফিসের আয় যথেষ্ট ভালো হয়েছে। তবে অধিকাংশ চলচ্চিত্রে মমতার বন্ধনের উপাদান বাদ দেওয়া যায় না। চলচ্চিত্রের প্রধান বিষয় আলাদা হওয়ায় প্রত্যেক চলচ্চিত্রে মমতার বন্ধন-সংক্রান্ত বিষয়ের অনুপাত কম বা বেশি হয়।

 

বসন্ত উত্সবের ছুটিতে এবং ছিং মিং ফেস্টিভালের ছুটিতে ‘hi, mom’ চলচ্চিত্রটি প্রদর্শিত হয়। আগামী মাসে বাবা দিবসে ‘On Your Mark’ নামে বাবা ও পুত্রের সম্পর্ক বর্ণনা করা আরেকটি চলচ্চিত্রও প্রদর্শিত হবে। দেখা যায়, চীনে পারিবারিক ও সামাজিক চলচ্চিত্রের ঢেউ শুরু হয়েছে। তাহলে এ ধরনের চলচ্চিত্রগুলো কি ভবিষ্যতে দর্শকদের মধ্যে সমাদৃত হবে?

 

বলা যায়, ১৯৯০ সালে চীনের মুলভূভাগে প্রদর্শিত ‘My Beloved’ নামে চীনের তাইওয়ানের একটি চলচ্চিত্র সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের পর দর্শকদের মনে গভীর ছাপ ফেলেছে। পারিবারিক বন্ধনবিষয়ক এ চলচ্চিত্র দেখার আগেই দর্শকেরা বুঝতে পারেন যে, মায়ের ভালবাসা তুলে ধরা হয়েছে এ চলচ্চিত্রে। বর্তমান দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে চলচ্চিত্রটি দেখলে মনে হয়- এ চলচ্চিত্রের কাহিনী আসলেই শিশুসুলভ ও হাস্যকর। চলচ্চিত্রের থিম সং ‘এই বিশ্বে মা’র ভালোবাসা দারুণ’ শিরোনামে গানটি এখনও মানুষের মুখে মুখে ফেরে।

চীনা মানুষের মনে পিতা, মাতা ও ভাই বোন নিয়ে গঠিত পারিবারিক সম্পর্ক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

চীনের নতুন সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রক্রিয়ায় পারিবারিক সম্পর্ক ও মমতার বন্ধনের উপাদানকে ফোকাস করে তৈরি সাহিত্যিক শিল্পকর্ম গোটা সমাজে গুরুত্ব পায়। সেই পরিবর্তনশীল যুগে চীনের পারিবারিক সম্পর্কের বিশাল পরিবর্তনও এসব সাহিত্য ও শিল্পকর্মে তুলে ধরা হয়েছে।

 

স্বীকার করতেই হবে যে, চলতি বছর সুর ও সংগীতভিত্তিক চলচ্চিত্র নিঃসন্দেহে চীনের চলচ্চিত্র বাজার দখল করে রয়েছে। তবে আরো বেশি দর্শক নিজেদের দৃষ্টি আরো ছোট করে ও আরো সাধারণ পরিবারের দিকে নিবদ্ধ রেখেছেন। দর্শকদের নান্দনিকতার বৈচিত্র্য বর্তমানে নারীবিষয়ক চলচ্চিত্র তৈরিতে উত্সাহ দিয়েছে। ফলে মমতার বন্ধনবিষয়ক চলচ্চিত্রগুলো গোটা বাজারে স্থান করে নিয়েছে।

 

‘Wolf Warriors’ এবং ‘OPERATION RED SEA’ সত্যিকারার্থে মুল ধারার চলচ্চিত্র। তবে এতে প্রায় একই রকম থিম ফুটিয়ে তোলা হয় যে, বর্তমানে বা ভবিষ্যতে চীন যত উন্মুক্তই হোক না কেন, চীনা জনগণ বিভিন্ন চ্যানেলের মাধ্যমে চীনের বাইরে চলে গেলেও, অবশেষে সবার বাসায় ফিরে আসা এবং আত্মীয়স্বজনের কাছে আসা হলো সবচে গুরুত্বপূর্ণ।

‘My People,My Country’ এবং ‘My People My Homeland’ নামে চলচ্চিত্র নিয়ে কথা বলি। এ দুটি চলচ্চিত্র মাতৃভূমির গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা তুলে ধরেছে। তবে অবশেষে তা চলচ্চিত্রের পরিবারে ফিরে আসে। এ দু’টি চলচ্চিত্রে তুলে ধরা অধিকাংশ কাহিনীর দ্বন্দ্ব ও ঘটনা পারস্পরিক সম্পর্কের ওপর নির্ভর করে এগিয়ে যায়। শক্তিশালী কম্পিউটার প্রযুক্তি ও চলচ্চিত্র শিল্পের ব্যবস্থার মাধ্যমে এসব মুল সুরের চলচ্চিত্র নির্মাণ করা যায়। অন্যদিকে খাঁটি পারিবারিক বন্ধনের উপাদান ও সামাজিক চলচ্চিত্রগুলোতে শিল্পায়নের নির্ভরশীলতা কম। এসব চলচ্চিত্রে আরো প্রত্যক্ষভাবে মমতার বন্ধনের উপাদান প্রকাশ করে এবং এতে সৃষ্টির আবেদনও একই রকম।

 

২০১৭ সালে চীনের মুলভূভাগে প্রদর্শিত ‘দঙ্গল’ নামে ভারতীয় চলচ্চিত্রটি পারিবারিক চলচ্চিত্র। পিতা ও কন্যার সম্পর্ক তুলে ধরা এ চলচ্চিত্রটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে খুব বিরল একটি ক্রীড়া চলচ্চিত্রও বটে।

চীনে পিতা ও ছেলে এবং মা ও মেয়ে সংক্রান্ত বিষয়ে খুব সফল দৃষ্টান্ত রয়েছে। ভাই বোনের গল্পও শেষ হয়নি। বিশেষ করে চীনে ‘দ্বিতীয় সন্তান’ নীতি চালু হওয়ার পর আরো বেশি পরিবার দু’টি সন্তান পালনের সমস্যার সম্মুখীন হবে। এ থেকে আরো অনেক গল্প সৃষ্টি হবে।

 

এখন  সবাই মিলে ‘sister’  চলচ্চিত্রের ওপর দৃষ্টি দেবো।

চলচ্চিত্রে গল্পটি এমন। এক সড়ক দুর্ঘটনায় হঠাত্ করে বাবা মাকে হারান বড় বোন আন রান এবং ছোট ভাই।

আগে বাবা মা একজন ছেলে সন্তানকে পাওয়ার ইচ্ছায় বড় বোনের পঙ্গু হওয়ার মিথ্যা কথা বলেছিলেন। কারণ, গত শতাব্দীর ৮০’দশকে চীনের পরিবার নীতি জারি করা সময় যদি এক পরিবারের একমাত্র সন্তান প্রতিবন্ধী হতো, তাহলে দ্বিতীয় সন্তানের অনুমতি পাওয়া যেতো। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সময় বাবা মা বড় বোনের স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে জন্মস্থানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম লিখেন। কারণ তাদের মতামত ছিল, মেয়েদের দূরদূরান্তের শহরে যাওয়া উচিত্ নয়।

 

তাই স্নাতকোত্তর ভর্তি পরীক্ষায় পাশ করে বেইজিংয়ে চলে যাওয়া হলো বড় বোনের বড় স্বপ্ন। তবে দুর্ভাগ্যক্রমে বাবা মা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান এবং তাকে মাত্র ৬ বছর বয়সী ছোট ভাইকে দেখাশোনার দায়িত্ব নিতে হয়। এবার বড় বোন কোন পথ বাছাই করবে?

 

বিদেশি গণমাধ্যম এ চলচ্চিত্রটির মূল্যায়ন করেছে। এতে বলা হয়, ‘sister’ চলচ্চিত্রটিতে চীনের ঐতিহ্যবাহী পারিবারিক মূল্যবোধ নিয়ে আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে। এ চলচ্চিত্রটিতে ইন্টারনেটে ব্যক্তিগত মূল্যবোধ এবং ঐতিহ্যবাহী পারিবারিক মূল্যবোধ নিয়ে আলোচনা সৃষ্টি হয়।

 

‘sister’ চলচ্চিত্রে চীনের ঐতিহ্যবাহী পারিবারিক কাঠামোতে নারীদের সম্মুখীন নানা প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরা হয়। তারা বাবা, মা, সন্তান, ভাই বোন এবং স্বামীর জন্য ত্যাগ স্বীকার করেন। এ চলচ্চিত্রটি চীনের ইন্টারনেটে ব্যাপক আলোচিত হয়।  ঐতিহ্যবাহী পারিবারিক ধারণা অনুযায়ী বড় বোন হিসেবে অবশ্যই ছোট ভাইকে গুরুত্ব দিতে হবে। তাই তার ব্যক্তিগত জীবনের চাওয়া পাওয়া দ্বিতীয় স্থানে রাখতে বাধ্য হয় সে। তবে বড় বোন আধুনিক চীনের তরুণী। নারীদের আরো বেশি অধিকার সম্পর্কে সে সচেতন ও স্বাধীন। সে কেন নিজের ব্যক্তিগত জীবন ছেড়ে নিজের ছোট ভাইকে লালন-পালন করবে?


চলচ্চিত্রের আরেকটি সামাজিক টপিক হলো সমাজের গভীরে বিস্তৃত পিতৃতান্ত্রিক চিন্তাধারা। পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ছেলের বড় হওয়াকে মেয়ের সুখের উপরে গুরুত্ব দেওয়া হয়। বড় বোন হিসেবে আন রানের ক্রোধ এবং তার প্রতিরোধ থেকে প্রমাণিত হয় যে, ঐতিহ্যগত ভাবেই পুরুষের গুরুত্ব নারীর চেয়ে বেশি। এই চিন্তাধারা এবং আধুনিক চীনা সমাজের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে।

 

‘sister’ চলচ্চিত্রে পরিচালক বড় বোনের সিদ্ধান্ত বাছাইয়ের কথা সরাসরি বলেন নি। তিনি এই প্রশ্ন দর্শকদের জন্য রেখে দিয়েছেন। যদি আপনি বড় বোন হতেন, তাহলে আপনি কী করতেন? বিভিন্ন বাছাইয়ের পিছনে প্রত্যেক মানুষের অভিজ্ঞতা ও মূল্যবোধ জড়িত। আমাদের বাছাই করার শক্তি নৈতিক প্রয়োজনীয়তা পূরণ করা নয়, ভালোবাসার সঙ্গে সমঝোতা ও তাকে সম্মান করা।

(লিলি/তৌহিদ/শুয়েই)