‘যে ভাবেই হোক ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের বাঁচাতে হবে’
2021-05-06 20:06:43

আজহার লিমন, ঢাকা:

ঈদ কেনাকাটার পরিকল্পনা নিয়ে আমার কথা হচ্ছিলো বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরীজীবী ফারজানা শ্রাবন্ত। তিনি জানান, করোনা মহমারির বাস্তবতায় অনেক কিছুর ইচ্ছা থাকলেও তা সম্ভব হচ্ছে না এবারে। নানা বাস্তবতায় এবারে ঈদে নিজেদের কেনাকাটার জন্য যে বরাদ্দ করেছিলেন অনেক ভেবে তাও বাদ দিয়েছেন। এই দম্পত্তির পরিকল্পনা নিজেদের কেনাকাটার টাকা দিয়ে তার এলাকার অসহায় দরিদ্রের পাশে দাড়াবেন।

তিনি বলেন, “আমার স্বামী একটি বেসরকারি টেলিভিশনে চাকরি করেন। আমার স্বামী ও আমি নিজেও করোনা আক্রান্ত হয়েছিলাম। আমাদের সামর্থ্য বিরাট তা বলবো না, কিন্তু প্রতি ঈদেই স্বামী, শ্বাশুড়ি বা মায়ের পরিবারের সবার জন্য কিছু কেনাকাটার একটা পরিকল্পনা থাকে। এই মহামারির সময়ে যে নানামাত্রার খরচ বেড়েছে, তাতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আগে কেনা জামাকাপড় দিয়ে এবার ঈদ কাটাবো। স্থানীয় কিছু হত দরিদ্রকে সাহায্য করারও পরিকল্পনা আছে এবার ।”

‘যে ভাবেই হোক ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের বাঁচাতে হবে’_fororder_jingji7

ফারজানা জেরিন শ্রাবন্ত

করোনার এই পরিবর্তিত সময়ে মিসেস শ্রাবন্ত মত ঈদ খরচ নিয়ে ভাবনা পরিবর্তন করেছেন বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর বড় অংশ মধ্যবিত্ত শ্রেণির অনেকেই। আর যার প্রভাব গিয়ে পড়ছে স্থানীয় বাজারগুলোতে। যেমন বাংলাদেশের একটি জেলা শহরের একটি পোশাক আউটলেটের এই কর্মকর্তা জানাচ্ছিলেন, দোকান-পাট শপিংমলে দ্বিতীয় দফা লকডাউন তুলে দেওয়ার পর বেঁচাবিক্রি কিছু বেড়েছে, কিন্তু সামগ্রিক ঈদ বাজার বিবেচনায় অন্য যে কোন বারের তুলনায় তা খুবই কম।

ঢাকা মহানগর দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান টিপু মনে করেন, রমজান আসার পর বিধিনিষেধের পর বাজার কিছু চাঙা হলেও দ্বিতীয় দফায় লকডাউনের পর স্থানীয় বাজারগুলোকে ক্রেতাদের প্রত্যাশিত সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। এই ব্যবসায়ী নেতা মনে করেন, শুধুমাত্র ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ঋণ বা প্রণোদনার ব্যবস্থা করলে ঝরে পড়েবে অনেক উদ্যোক্তা।

‘যে ভাবেই হোক ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের বাঁচাতে হবে’_fororder_jingji8

আরিফুর রহমান টিপু, সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা মহানগর দোকান মালিক সমিতি

 

তিনি বলেন, ‍“ঈদকে কেন্দ্র করে যে কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের প্রায় ৩ মাসের টাকা দিতে হয়। অথচ ঈদ ব্যবসাকে ধরতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা স্ত্রীর অলংকার বিক্রি করে কিংবা নানা জায়গা থেকে ঋণ করে যে অর্থলগ্নি করেছে তার এবার উঠবে না। আমাদের প্রণোদনা না দিলে পথে বসতে হবে। এর আগেও প্রণোদনার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানগুলো তা পায় নি। এবার আমাদের নির্দিষ্ট করে দিতে হবে।”

অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ মনে করেন, পরিবর্তিত এই সময়ে শুধু পোশাক বিপনিগুলো নয়, ঈদ বাজারকে কেন্দ্র করে সামগ্রিক ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের অনেকেই পড়েছেন বিপাকে। তিনি মনে করেন, স্থানীয় বাজার সচল রাখার বৃহৎ এই গোষ্ঠীকে ধরে রাখতে নিতে হবে বিশেষ পরিকল্পনা।

‘যে ভাবেই হোক ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের বাঁচাতে হবে’_fororder_jingji9

ড. নাজনীন আহমেদ, অর্থনীতিবিদ

 

তিনি মনে বলেন, ‍“অবশ্যই এসএমইকে গুরুত্ব দিতে হবে। দেশের অভ্যন্তরে যেসব এন্টারপ্রাইজ দেখেন তার ৯৯ শতাংশই তো এসএমই। বাদ বাকি ১ শতাংশ হলো বড়। এই এসএমইতে জড়িতে দেশের লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান। তাই এসএমই বাঁচলে অর্থনীতি বাঁচবে।”

 

দেশের আড়াই কোটি মানুষের সরাসরি কর্মসংস্থান ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে। বিভিন্ন সংস্থার হিসেবে, বাংলাদেশের জিডিপির এক চতুর্থাংশ আসে এসএমই খাত থেকে।

আজহার লিমন। চীন আন্তর্জাতিক বেতার। ঢাকা।