আজকের টপিক: সুইজারল্যান্ডের ‘চীন কৌশল’ শীর্ষক শ্বেতপত্রকে যেভাবে দেখতে হবে
2021-05-06 19:00:29

 

মে ৬: কিছু দিন আগে, সুইজারল্যান্ডের ফেডারেল সরকার ‘চীন কৌশল’ শীর্ষক শ্বেতপত্র প্রকাশ করে। এতে ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত  সুইস সরকারের চীননীতির লক্ষ্য এবং পদক্ষেপ নির্ধারণ করা হয়। এই পাবলিক স্ট্র্যাটেজি ডকুমেন্টে সুইজারল্যান্ড চীনকে তার বিদেশনীতিতে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত দেশ হিসেবে বিবেচনা করেছে। পাশাপাশি, বিগত ৭০ বছরে  চীন-সুইস সম্পর্কের বিকাশের ইতিবাচক মূল্যায়নও করা হয়েছে এতে।

প্রতিক্রিয়ায়, চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন,  এই নথিটি অর্থনৈতিক উন্নয়নে চীনের দুর্দান্ত সাফল্যকে স্বীকৃতি দিয়েছে, সাধারণভাবে চীন-সুইজারল্যান্ড সহযোগিতার বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করেছে, এবং চীনকে অন্যতম মূল কূটনৈতিক দেশ হিসাবে বিবেচনা করেছে। এটি চীন ও সুইজারল্যান্ডের জনগণের অভিন্ন স্বার্থ ও যৌথ প্রত্যাশার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ।

চীন প্রজাতন্ত্রের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনকারী ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে সুইজারল্যান্ড প্রথম দেশ। বিগত ৭০ বছরে চীন ও সুইজারল্যান্ড পারস্পরিক কল্যাণকর সহযোগিতার দিকে মনোনিবেশ করেছে। কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের শুরুতে চীন-সুইজারল্যান্ড দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ৬০ লাখ মার্কিন ডলার ছিল। পরে ২০১৯ সালে সেটা বেড়ে দাঁড়ায় ৩১.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। ২০১৩ সালে চীন ও সুইজারল্যান্ড একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করে, যা দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতায় নতুন গতিবেগ সঞ্চার করে। অনুমান অনুসারে, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি দুই দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য প্রতিবছর ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার শুল্ক সাশ্রয় করবে। চীনে সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত বার্নার্ডিনো রেজাজজনি বলেছেন, সুইজারল্যান্ড ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ দশ বছরে দ্বিগুণ হয়েছে এবং মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি কার্যকর হওয়ার পরেই এই বৃদ্ধির ঘটনা বেশি ঘটেছে।

২০১৯ সালে চীন ও সুইজারল্যান্ড ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ সহযোগিতা-স্মারক স্বাক্ষর করে। সুইজারল্যান্ড হচ্ছে ইতালি ও লুক্সেমবার্গের পরে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’  উদ্যোগে যোগদানকারী তৃতীয় ইউরোপীয় দেশ। সুইস কনফেডারেশনের সভাপতি এবং অর্থমন্ত্রী ইউলি মুরার একবার বলেছিলেন, “‘এক অঞ্চল, এক পথ’ প্রকল্পটি এই শতাব্দীর বৃহত্তম বিনিয়োগ প্রকল্প। আপনি যদি নিজের অর্থনীতি বিকাশ করতে চান তবে আপনার এ জাতীয় বিনিয়োগ দরকার।"

সুইজারল্যান্ডের ‘চীন কৌশল’ নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনা অর্থনীতির দ্রুত বিকাশ ঘটেছে এবং অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দিক থেকে চীন গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক খেলোয়াড় হয়ে উঠেছে। চীন সুইজারল্যান্ডের তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি, উদ্ভাবনী কৌশলগত অংশীদারিত্ব এবং কয়েক ডজন সংলাপের কৌশল উভয় দেশের সম্পর্কের উপর গভীর ও ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। পরিসংখ্যান অনুসারে, চীনে এক হাজারেরও বেশি সুইস বিনিয়োগ প্রকল্প রয়েছে; মোট ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি বিনিয়োগ রয়েছে। চীনা সংস্থাগুলো সুইজারল্যান্ডে  প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ করেছে ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। চীনের বিশাল বাজার বিভিন্ন সুইস সংস্থাসহ বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে চলেছে।

এদিকে, চীন-সুইস সম্পর্কের ইতিবাচক বিকাশের মূল্যায়ন করার সময় সুইস ‘চীন কৌশল’ দলিলেও কিছু ভুল তথ্য রয়েছে। নথিতে চীনের রাজনৈতিক ব্যবস্থা, জাতিগত সংখ্যালঘু নীতি এবং মানবাধিকার বিকাশের উপর ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হয়েছে। অথচ এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের  একজন মুখপাত্র ইঙ্গিত করেছেন যে, চীন ‘মাইক্রোফোন কূটনীতি’-র বিরোধিতা করে এবং তথাকথিত ‘মানবাধিকার শিক্ষকদের’ স্বীকার করে না। এই দিকগুলো নিয়ে ঝগড়া করা চীন-সুইস সম্পর্কের সুস্থ বিকাশের জন্য সহায়ক হবে না।

চীন ও ও সুইজারল্যান্ডের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পরের ইতিহাস প্রমাণ করে যে, একে অপরের উন্নয়ন, পারস্পরিক শ্রদ্ধা, পারস্পরিক বিশ্বাস এবং সমান আচরণের একটি উদ্দেশ্যমূলক ও ন্যায্য দৃষ্টিভঙ্গি দু’দেশের জনগণ্যের স্বার্থের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)