ভারতে বিভিন্ন জায়গায় চিকিত্সাসম্পদের তীব্র অভাব প্রসঙ্গ
2021-05-05 16:50:38

ভারতে বিভিন্ন জায়গায় চিকিত্সাসম্পদের তীব্র অভাব প্রসঙ্গ_fororder___172.100.100.3_temp_9500033_1_9500033_1_1_ea5fefe4-792a-4c1f-a330-68f86e4d0fcf

মে ৫: গতকাল (মঙ্গলবার) ভোর পর্যন্ত ভারতে কোভিড-১৯ মহামারী আক্রান্তের সংখ্যা ২ কোটি ছাড়িয়ে যায় এবং মহামারীতে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় ২ লাখ ২০ হাজার। বিপুলসংখ্যক লোক ভাইরাসে আক্রান্ত হবার কারণে দেশটির চিকিত্সাব্যবস্থার ওপর যেমন মারাত্মক চাপ পড়ছে, তেমনি প্রতিদিনের অসংখ্য মৃত্যুর ঘটনায় শ্মশানঘাটগুলোতেও চাপ ক্রমাগত বাড়ছে।  বর্তমানে ভারত সরকার সংশ্লিষ্ট খাতগুলোতে সম্পদ বরাদ্দ করার চেষ্টা করছে এবং অবৈধভাবে চিকিত্সাসামগ্রী বিক্রয়ের অপরাধ দমনের চেষ্টা করে যাচ্ছে।

ভারতে বিভিন্ন জায়গায় চিকিত্সাসম্পদের তীব্র অভাব প্রসঙ্গ_fororder___172.100.100.3_temp_9500033_1_9500033_1_1_e6aca745-4892-40a5-8996-0c6a65fb67a3

নয়াদিল্লীর আম্বেদকর সরকারি হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা ৩০০। নয়াদিল্লি মহামারীতে সবচেয়ে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হয়েছে। প্রতিদিন অনেক রোগীর স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবরা হাসপাতালে খালি শয্যা আছে কি না, জানতে চান। নয়াদিল্লীর বাসিন্দা সোনিয়া তাঁর কোভিডে আক্রান্ত তিন ভাইয়ের জন্য তিন দিন ধরে হাসপাতালের শয্যার জন্য ঘুরছেন। কিন্তু এখনও সফল হননি। তিনি বলেন,

‘সরকারকে কিছু করার জন্য অনুরোধ জানাই আমি। আমার তিন ভাইকে বাঁচান। কেন এতো লোক একসঙ্গে সংক্রমিত হচ্ছেন!?’

যেসব রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, তাদের জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেন নেই। প্রায়ামের পিতা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিত্সা গ্রহণ করছেন। প্রায়াম বলেন,

‘রোগীদের জন্য যথেষ্ট অক্সিজেনের সরবরাহ নেই। হাসপাতালে রোগীদেরকে কম চাপের অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে, যা যথেষ্ট নয়।’

ভারতে বিভিন্ন জায়গায় চিকিত্সাসম্পদের তীব্র অভাব প্রসঙ্গ_fororder___172.100.100.3_temp_9500033_1_9500033_1_1_9d77ba57-79a2-4582-8e07-5ae7a7d4d7f8

এ সম্পর্কে আম্বেদকর হাসপাতালের প্রধান চিকিত্সক ডঃ পি কে মালিক বলেন, হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহের পরিমাণ যথেষ্ট না। অসংখ্য রোগীর কারণে হাসপাতালের ওপর চাপও বিরাট। মালিক আরও বলেন,

‘আমাদের হাসপাতালে বিছানা প্রায় ৩০০টি। আমাদের হাসপাতালে চাপও বেশি। আরও বেশি রোগী গ্রহণের সামর্থ্য আমাদের নেই। এর প্রধান কারণ হলো অক্সিজেনের অভাব।’

মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত নয়াদিল্লীতে বিগত ২৪ ঘন্টায় নতুন মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৪৪৮ জন। নয়াদিল্লীতে টানা তিন দিনে নতুন মৃত্যুর সংখ্যা ৪০০ জন ছাড়িয়েছে। সেজন্য নয়াদিল্লীর শ্মশানঘাটগুলোর ওপরও বিরাট চাপ পড়েছে। বর্তমানে হাসপাতাল থেকে রোগীর মরদেহ সংগ্রহ করা এবং তা হাসপাতাল থেকে শ্মশানঘাটে পাঠানো পরিবারের সদস্যদের জন্য খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ভিকি বলেন,

‘আমার বন্ধুর পরিবারের তিন সদস্য মহামারীতে আক্রান্ত হয়েছেন। আমার বন্ধু আইসিইউতে চিকিত্সা গ্রহণ করেছেন। চার দিন পর মঙ্গলবার ভোর তিনটায় তিনি মারা গেছেন। তাঁর দেহ শ্মশানঘাটে নিতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। পরিবহনের খরচও খুবই বেশি।’

ভারতে বিভিন্ন জায়গায় চিকিত্সাসম্পদের তীব্র অভাব প্রসঙ্গ_fororder___172.100.100.3_temp_9500033_1_9500033_1_1_66fbb232-23c5-4c46-9ad9-a41e77e86715

অশোক কুমারের পরিবারের একজন সদস্য কয়েক দিন আগে মহামারীতে মারা যান। তিনি শ্মশানঘাটের দুরবস্থা তুলে ধরেছেন সাংবাদিকদের কাছে। তিনি বলেন, ‘আমি দেখেছি একই সঙ্গে কয়েক ডজন মরদেহ শ্মশানঘাটে পরে আছে। মরদেহ পোড়ানোর জন্য জ্বালানির সংকট প্রকট। শ্মশানঘাটের ওপর তাই চাপও বেশি।’

চিকিত্সাসম্পদের অভাব মেটাতে ও অন্যান্য সমস্যা সমাধান করার জন্য ভারত সরকার সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থা নিচ্ছে। ভারত সরকার চিকিত্সাসামগ্রীর আমদানিও বাড়িয়েছে। বিভিন্ন দেশ থেকে সামগ্রী আমদানি করছে দেশটি। অক্সিজেনের অভাব মেটাতে  ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্প্রতি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সভা ডাকেন। সভায় অক্সিজেনের উত্পাদন বাড়ানো ও সরবরাহ নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় গোটা ভারতে নতুন ১৫০০টি অক্সিজেন উত্পাদন কারখানা নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এখন দেখার বিষয়, সরকারের এসব সিদ্ধান্ত চলমান সমস্যা সমাধানে কতোটা কার্যকর প্রমাণিত হয়। (ছাই/আলিম/স্বর্ণা)