২০২২ সালে চীনা মহাকাশ স্টেশন নির্মাণ সম্পন্ন হবে
2021-04-30 15:40:00

এপ্রিল ৩০: গতকাল (বৃহস্পতিবার) হাইনান প্রদেশের ওয়েন ছাং উতক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে চীন তার মহাকাশ স্টেশনের প্রধান মডিউল “থিয়েন হ্য” সফলভাবে উতক্ষেপণ করেছে। এর মাধ্যমে চীনের মনুষ্যবাহী মহাকাশ যান প্রকল্প নতুন যাত্রার সূচনা করেছে। চীনের এ প্রকল্পের কার্যালয়ের পরিচালকের সহকারী চি ছি মিং জানান, এ বছরে দুবার “থিয়ান চৌ” মালবাহী মহাকাশযান ও দুবার “সেন চৌ” মনুষ্যবাহী মহাকাশযান উতক্ষেপণ করা হবে। আর ২০২২ সালে চীন কক্ষপথে স্পেস স্টেশনের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করবে। 

বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা ২৩ মিনিটে হাইনান প্রদেশের ওয়েন ছাং থেকে মহাকাশ স্টেশনের প্রধান মডিউলকে বহণকারী লংমার্চ-৫ বি রকেট উতক্ষেপণ করা হয়। প্রায় ৪৯৪ সেকেন্ড পর মহাকাশ স্টেশনের প্রধান মডিউল সাফল্যের সাথে রকেট থেকে পৃথক হয়ে পূর্বনির্ধারিত কক্ষপথে প্রবেশ করে। সেদিন সময় ১২টা ৩৬ মিনিটে তার  দুটি পাখা সাফল্যের সাথে উন্মুক্ত হয় এবং স্বাভাবিক কাজ শুরু করে। ফলে উতক্ষেপণ মিশনটি সাফল্যের সাথে সম্পন্ন হয়। 

প্রধান মডিউলটি উতক্ষেপণের সময় তার ওজন ছিল ২২.৫ টন। এটি ভবিষ্যত স্পেস স্টেশনের ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র। এতে মোট ৩ জন মহাকাশচারী দীর্ঘমেয়াদে থাকতে পারবেন। মডিউলে বা তার বাইরে বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত পরীক্ষা  চালাতে পারবেন। প্রধান মডিউল মহাকাশচারীদেরকে কী কী সুবিধা দিতে পারবে? এমন প্রশ্নের জবাবে স্পেস স্টেশন ব্যবস্থার উপ প্রধান নকশাকার চু কুয়াং ছেন জানান, প্রধান মডিউলে মোট তিনটি বেডরুম ও একটি ওয়াশরুম রয়েছে। তাতে মহাকাশচারীদের দৈনন্দিন জীবন যাপন সহজ ও নিশ্চিত হবে। 

তিনি বলেন, “খাবারের এলাকাতে খাবার গরম করা ও ফ্রিজে রাখার ব্যবস্থা আছে। তা ছাড়া, সেখানে সুপেয় পানির যন্ত্র ও সঙ্কোচনীয় খাবার টেবিলও রয়েছে। শরীর চর্চা এলাকায় ট্রেডমিল ও বাইক রয়েছে। পাশাপাশি নভোচারীদের কাজকর্ম ও জীবনকে সহজ ও আরামদায়ক করতে প্রধান মডিউলে ওয়াইফাই প্রযুক্তি রয়েছে। এর সাহায্যে তাঁরা পৃথিবীর সাথে ভিডিও সংলাপ ও ই-মেইল যোগাযোগ করতে পারবেন।”

উল্লেখ্য, এবারের  প্রধান মডিউলকে বহনের দায়িত্ব পালন করেছে ‘লংমার্চ-৫ বি’। এ রকেট ব্যবস্থার সর্বাধিনায়ক ওয়াং ইউ জানান, এবারের উতক্ষেপণ মিশনের মাধ্যমে রকেট উড়ানোর প্রক্রিয়ায় গুরুতর ত্রুটিসমূহ মোকাবিলার সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি মহাকাশ স্টেশন প্রকল্পে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে রকেটের নির্ভরযোগ্যতাও উন্নত হয়েছে।

তিনি বলেন, “আগের কিছু নির্ভরযোগ্য সুফলের প্রয়োগ করে এবারের রকেটে মোট ৪৭টি উন্নত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”

চীনের মহাকাশ স্টেশন নির্মাণের অগ্রগতির বিষয়ে চীনের মনুষ্যবাহী প্রকল্প কার্যালয়ের পরিচালকের সহাকারী চি ছি মিং জানান, নির্মাণ কাজে মৌলিক প্রযুক্তিগত পরীক্ষা ও নির্মাণ--এ দুটি পর্যায় রয়েছে। পরিকল্পনা অনুসারে, মোট ১২টি উতক্ষেপণ মিশন আছে। ২০২২ সালে তা বাস্তবায়ন করা যাবে। এর মধ্যে মৌলিক প্রযুক্তিগত পরীক্ষা পর্যায়ে মোট ৬টি মিশন রয়েছে। বর্তমানে প্রধান মডিউলের উতক্ষেপণ সাফল্যের সাথে সম্পন্ন করা হয়। এ বছরে আরো দু’বার “ থিয়ান চৌ” মালবাহী মহাকাশযান ও “সেন চৌ” মনুষ্যবাহী মহাকাশযান উতক্ষেপণ করা হবে। 

তিনি জানান, নির্মাণ পর্যায়েও ৬টি মিশন থাকবে। তাতে “ওয়েন থিয়ান” ও “মেং থিয়ান” পরীক্ষণ মডিউল, দুবার মালবাহী মহাকাশযান, এবং দুবার মনুষ্যবাহী মহাকাশযান উতক্ষেপণ করা হবে। 

তিনি বলেন, “এ পর্যায়ের মৌলিক লক্ষ্য হচ্ছে, সার্বিকভাবে কক্ষপথে মহাকাশ স্টেশনের নির্মাণকাজ শেষ করা। যাতে জাতীয় মহাকাশ ল্যাব প্রতিষ্ঠিত হয়। এ ধারাবাহিক মিশনসমূহে প্রতিবার মনুষ্যবাহী যান উতক্ষেপণের আগে প্রথমে একটি মালবাহী যান উতক্ষেপণ করা হবে। তাতে নভোচারীদের কক্ষপথে জীবনের প্রয়োজীয় সামগ্রী থাকবে। প্রতিবার মনুষ্যবাহী মিশনে মোট তিন জন নভোচারী থাকবেন। তাঁরা তিন থেকে ছয় মাস পর্যন্ত কক্ষপথে থাকবেন। নভোচারীরা প্রযুক্তিগত পরীক্ষাসহ নানা দায়িত্ব পালন করবেন।”

তিনি আরো জানান, বর্তমানে মনুষ্যবাহী প্রকল্পের অন্য সব মিশনসমূহ পরিকল্পনা অনুসারে সুষ্ঠুভাবে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। 

এপ্রিল ৩০ , ২০২১
চায়না মিডিয়া গ্রুপ(সিএমজি) থেকে আকাশ