২৪ চিয়ে ছি’র অন্যতম লি সিয়া
2021-04-30 08:48:58

চিয়ে ছি হল চীনের ঐতিহ্যগত পঞ্জিকায় প্রকৃতি ও আবহাওয়া পরিবর্তনের নিয়ম অনুযায়ী তৈরি একটি নির্দিষ্ট সময়। যা প্রায় ১৫ দিন ধরে বিস্তৃত হয়। চীনের ৪টি ঋতু আছে যথা-- বসন্ত, গ্রীষ্ম, শরত্ ও শীত্কাল। প্রতিটি ঋতুর সময়কাল তিন মাস। প্রতি মাসে দুটি চিয়ে ছি থাকে এবং প্রতিটি চিয়ে ছির বিশেষ তাত্পর্য রয়েছে। তাই চীনে প্রতি বছরে রয়েছে ৪টি ঋতু ও ২৪টি চিয়ে ছি।

প্রাচীনকালে মানুষ চিয়ে ছি অনুযায়ী কৃষি কাজ করত এবং প্রতি চিয়ে ছির নিজস্ব বিশেষ প্রথা আছে বলে চিয়ে ছিও চীনা সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। ২০১৬ সালে ২৪টি চিয়ে ছি আনুষ্ঠানিকভাবে ইউনেস্কো অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়।

চব্বিশটি চিয়ে ছির নাম মুখস্থ বলতে পারেন প্রায় সকল চীনা। কারণ এসব মুখস্ত করার সহজ পদ্ধতি রয়েছে। চীনারা ছোট একটি কবিতার মাধ্যমে ২৪টি চিয়েছির নাম মনে রাখেন। ছোট বেলা থেকে চীনারা এ কবিতা মুখস্থ করে বড় হয়। এবং চীনা অভিধানের শেষ পৃষ্ঠায় এ কবিতা লেখা থাকে। যদি আপনারা চীনের সংস্কৃতি সম্পর্কে আগ্রহী হন, তাহলে একবার ট্রাই করতে পারেন। এ কবিতাটি একটু মুখস্ত করতে চেষ্টা করুন। কবিতা টি হল: 春雨惊春清谷天,夏满芒夏暑相连。秋处露秋寒霜降,冬雪雪冬小大寒。

বর্তমান সময়ের চিয়ে সির নাম হল লি সিয়া। এটা সপ্তম চিয়ে ছি এবং গ্রীষ্মকালের প্রথম চিয়ে ছি। লি সিয়া ঋতু পরিবর্তনের একটি প্রতীক এবং গরম দিন এ চিয়ে ছিতে শুরু হয়। সাধারণত প্রতি বছরের ৫-৬ মে লি সিয়া পালিত হয়। চলতি বছর চীনারা ৫ মে লি সিয়া পালন করছে। এ দিন থেকে দক্ষিণ চীনের আবহাওয়া গরম হয়ে ওঠে,  এবং বৃষ্টির সময় ও পরিমাণ লক্ষ্যনীয় ভাবে বৃদ্ধি পায়।

লি সিয়ার সিয়া মানে বড়। লি সিয়া মানে বসন্তকালে যে ফসল চীনারা চাষ করে, তা বড় হয়েছে। চীনের লি সিয়া আবহাওয়া গরম হয়। তখন ফসল দ্রুত বাড়ে। লি সিয়া সময়ে মানুষের বিপাক দ্রুততর হয়। তখন হার্ট এবং মস্তিষ্কের রক্ত ​​সরবরাহের অভাবে মানুষের ক্লান্তি ও অস্থিরতা বাড়ে। তাই স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য এ সময় যথেষ্ট বিশ্রাম নেওয়া ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া চীনের ঐতিহ্য।

লি সিয়াতে চীনাদের অনেক ঐতিহ্য আছে। এ দিন তারা ডিম খায়। আমাদের পূর্বপুরুষরা মনে করতো যে, লি সিয়া থেকে আবহাওয়া গরম হয়ে ওঠে এবং শিশুরা এমন দিনে দুর্বল হয়। তাদের খাওয়ার ইচ্ছা কমে যায়। গোলাকার আকৃতির ডিম পূর্ণ জীবনের প্রতীক, তাই ডিম খেলে শক্তিশালি হওয়া যায় বলে চীনারা বিশ্বাস করেন। তাছাড়া, শিশুরা ডিম দিয়ে এক ধরনের খেলায় মেতে ওঠে। তার নাম ডিম প্রতিযোগিতা। পাশ্চাত্য দেশের ইস্টার উত্সব সম্পর্কে আপনারা সবাই অবগত আছেন। ডিমের ওপরে চিত্র আঁকা তার একটি নিয়ম। চীনা ডিম খেলার সাথে তার কিছুটা মিল আছে। শিশুরা সিদ্ধ ডিমের ওপরে প্রথমে চিত্র আকে। তারপর এ ডিম একটি নেটে রেখে গলায় ঝুলায়। দুজন শিশু তাদের নিজেদের ডিমকে অপরের ডিমের সাথে ধাক্ক খাওয়ায়। এতে যার  ডিম ভেঙ্গে না যায়, সে জয় লাভ করে। নিজের ডিম ভেঙ্গে গেলেও অসুবিধা নেই। কারণ শিশুরা এ ডিম খেতে পারে। যাইহোক, এদিন ডিম খেতে হয়।

 

লি সিয়ার অন্য একটি ঐতিহ্যিক খাবার হল ভাত। তবে তা সাধারণ ভাত নয়। চীনের চিয়াং সু ও চেচিয়াং প্রদেশের লোকজন এদিন ‘উ’ নামে একধরনের ভাত খায়। উ নামে এক ধরনের গাছের পাতার রস দিয়ে ভাত তৈরি করা হয় এবং স্থানীয়রা বিশ্বাস করে যে, এমন ভাত খেলে শক্তিশালি হওয়া যায়। এটি তাদের হিটস্ট্রোক ও মশার কামড় থেকে রক্ষা করে। আর নিং পো শহরের লোকজন এদিন বিশেষ এক ধরনের বাঁশের টুকরা খায় এবং এ বাঁশের টুকরা দেখতে মানুষের পায়ের মতো। চীনারা মনে করেন যে, দেহের অংশের আকারের খাবার খেলে সে অংশ আরও শক্তিশালী হয়। তাই তারা পা আকারের বাঁশ খায় পা শাক্তিশালি হবার প্রত্যাশায়। খুব মজার, তাই না?

শিশির/এনাম/রুবি