০৫০৩ ব্যবসা-বাণিজ্য
2021-04-30 16:00:16

সম্প্রতি চীনের জাতীয় কর প্রশাসন প্রকাশিত সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছরের প্রথম কোয়ারটারে দেশটির অর্থনীতি স্থিতিশীল এবং সুষ্ঠু উন্নয়নের প্রবণতা ধরে রেখেছে।

 

কর প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তি জানান, প্রথম প্রান্তিকে বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা অনেক বেশি ছিল। তার প্রধানত দু’টো কারণ রয়েছে। এক দিকে, প্রথম প্রান্তিকে চীনের মহামারী প্রতিরোধ ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ভাল ফলাফল লাভ করেছে। এতে বেশ কিছু নীতিগত সিদ্ধান্তের প্রভাব প্রকাশ পায়। দেশি-বিদেশি বাজারের চাহিদা ফিরে আসে। এছাড়া চলতি বছরের বসন্ত উত্সব চলাকালে অনেকেই যে যেখানে থাকেন, সেখানে উতসব উদযাপন করেন। ফলে সব প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের উপস্থিতি আগের বছরগুলোর চেয়ে অনেক বেশি ছিল। তাই তখন ‌উত্পাদনও অনেক বেশি হয়। অন্য দিকে, গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে মহামারীর প্রভাবে বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রার ভিত্তি তুলনামূলকভাবে নিম্ন ছিল। ফলে চলতি বছরের প্রথম কোয়ারটারে বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রার বৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে বেশি দেখায়।

 

চলতি বছর থেকে কর বিভাগ কর সুযোগ-সুবিধার নীতি কার্যকর করার পাশাপাশি ব্যাপকভাবে উন্নতমানের ও অত্যন্ত কার্যক্ষম বুদ্ধিবৃত্তিক কর সেবা কার্যকর করছে। মূল্য সংযোজন কর চালান পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রথম প্রান্তিকে সারা দেশের প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫০.৫ শতাংশ বেড়েছে। যা ২০১৯ সালের একই সময়ের তুলনায় ২৭.২ শতাংশ বেশি। দু’বছরে গড় বৃদ্ধি ১২.৮ শতাংশ এবং গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে স্থিতিশীল ও সুষ্ঠু উন্নয়নের প্রবণতা বজায় ছিল ।

 

নির্মাণ শিল্প বস্তুনিষ্ঠ অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। চলতি বছর বেশ কিছু নির্মাণ শিল্পের সমর্থনে কর সুবিধা নীতির কার্যকারিতা ফলপ্রসূ হয়। যা নির্মাণ শিল্পের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করেছে। মূল্য সংযোজন কর চালান পরিসংখ্যানে আরো দেখা গেছে, প্রথম প্রান্তিকে চীনের নির্মাণ শিল্পে বিক্রয় আয় গত বছর এবং ২০১৯ সালের একই সময়ের তুলনায় যথাক্রমে ৪৯.৭ এবং ৯.৬ শতাংশ বেড়েছে।

 

বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত সৃজনশীল কর নীতির ফলপ্রসূ বাস্তবায়নের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলোর বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত সৃজনশীল দক্ষতা অব্যাহতভাবে বাড়ছে। মূল্য সংযোজন কর চালান পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রথম কোয়ারটারে চীনের উচ্চপ্রযুক্তি শিল্পে বিক্রয় আয় গত বছর ও ২০১৯ সালের একই সময়ের চেয়ে ৫৩ ও ৪১.৬ শতাংশ বেশি হয়। দু’বছরের গড়পড়তা বৃদ্ধি হয় ১৯ শতাংশ।

 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কর বিভাগ প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিবেশ সংরক্ষণে বরাদ্দ বাড়াতে এবং সবুজ ও নিম্ন-কার্বন নির্গমনে উত্সাহ দেয়। প্রথম প্রান্তিকে প্রাকৃতিক ও পরিবেশ সংরক্ষণ সংক্রান্ত শিল্পের দ্রুত উন্নতি হয়। প্রকৃতি রক্ষা শিল্পে বিক্রয় আয় ২০২০ ও ২০১৯ সালের চেয়ে যথাক্রমে ৮৩.৪ ও ৫৩.৬ শতাংশ বেশি হয়। এ সময়ে পরিবেশ সংরক্ষণে বরাদ্দ বাড়ানো হয়। ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোর দূষণ রোধ সরঞ্জাম ও পরিবেশ তত্ত্বাবধান মেশিন ক্রয়ের ব্যয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় যথাক্রমে ৬৩.৫ ও ৫৪.৯ শতাংশ বেড়েছে।

 

কেন্দ্রীয় সরকার থেকে বিভিন্ন স্থানীয় স্তর পর্যন্ত বেশ কিছু পণ্যভোগ ত্বরান্বিতকরণ ও অভ্যন্তরীণ চাহিদা সম্প্রসারণ কর সুযোগ-সুবিধার নীতির কার্যকর করার ফলে শক্তিশালীভাবে অধিবাসীদের ভোগ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। প্রথম প্রান্তিকে সারা দেশের খুচরা শিল্পে বিক্রয় আয় ২০২০ ও ২০১৯ সালের একই সময়ের চেয়ে যথাক্রমে ৫২.৯ ও ২৮.৭ শতাংশ বেড়েছে।

 

মহামারীর পর থেকে অনলাইন শিক্ষা, ইন্টারনেট চিকিত্সা ও দূর অফিসসহ বিভিন্ন নতুন রূপ পণ্যভোগের সুপ্তশক্তি চাঙ্গা করার নতুন চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়। প্রথম প্রান্তিকে ডিজিটাল সাংস্কৃতিক সেবা ও অধিবাসীদের ইন্টারনেট সেবার ক্ষেত্রে বিক্রয় আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে যথাক্রমে ৬০.৩ ও ৬৫.৪ বেড়েছে।

 

বৈদেশিক চাহিদার পুনরুদ্ধার অব্যাহতভাবে চীনের রপ্তানীর দ্রুত বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে। প্রথম প্রান্তিকে চীনের রপ্তানী প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ ক্রয়ের পরিমাণ গত বছর ও ২০১৯ সালের চেয়ে যথাক্রমে ৪৬.৫ ও ৩৪.৫ শতাংশ বেড়েছে।

 

রপ্তানী বাজার থেকে আঞ্চলিক সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব আরসিইপি’র সদস্য দেশ, “এক অঞ্চল এক পথ” উদ্যোগের আওতায় দেশ বা অঞ্চল, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইইউ’কে প্রধান রপ্তানী বাজার হিসেবে প্রতিষ্ঠানের ক্রয়ের পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় যথাক্রমে ৫০.৭, ৪৯.৪ ও ৪৮.৮ শতাংশ বেড়েছে। রপ্তানী খাত থেকে বৈদ্যুতিক যান্ত্রিক সরঞ্জাম, ডেডিকেটেড ডিভাইস ও সাধারণ সরঞ্জাম উত্পাদনসহ বিভিন্ন রপ্তানী প্রতিষ্ঠানের ক্রয়ের সক্ষমতা বেশি হয়। ফলে তাদের ক্রয়ের পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫০ শতাংশেরও বেশি। তার মানে যন্ত্রপাতি ও বৈদ্যুতিক সামগ্রী ও উচ্চ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পণ্য রপ্তানীর পরিস্থিতি ভালো ছিল। সেজন্য সংশ্লিষ্ট খাত উত্পাদন সম্প্রসারণের অভিষ্ট লক্ষ্য বাড়িয়েছে।

 

এসব কর পরিসংখ্যান থেকে বুঝা যায় যে, প্রথম প্রান্তিকে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীলতা বজায় রেখে অগ্রগতি লাভ করছে।

 

প্রিয় বন্ধুরা, আগামি ৭ থেকে ১০ মে পর্যন্ত চীনের প্রথম আন্তর্জাতিক গ্রাহক পণ্য মেলা হাইনান প্রদেশের হাইখৌ শহরে অনুষ্ঠিত হবে। জানা গেছে, এবারের মেলায় আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর আয়তন হবে ৬০ হাজার বর্গমিটার। ফ্যাশন লাইফ, গহনা ও হীরা, খাদ্য ও স্বাস্থ্য পণ্য, এবং বহুমুখী সেবা-এ পাঁচটি পণ্যের প্রদর্শনীর জন্য নির্দিষ্ট এলাকা থাকবে। এতে ৬৯টি দেশ ও অঞ্চলের অংশগ্রহণকারীরা ১ হাজার ৩শ’রও বেশি ব্র্যান্ডের প্রদর্শন করবে। সুইজারল্যান্ড এবারের প্রধান অতিথি দেশ। 

 

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছর চীনের ভোগ্যপণ্যের বাজার সাধারণত গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে উন্নতির প্রবণতা ধরে রেখেছে। পাশাপাশি আরো স্থিতিশীল ও চাঙ্গা হচ্ছে। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে চীনের সামাজিক ভোগ্য পণ্যের মোট খুচরা বিক্রির পরিমাণ ছিল ১০.৫২ ট্রিলিয়ন ইউয়ান। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৩.৯ শতাংশ বেশি।

 

প্রথম আন্তর্জাতিক গ্রাহক পণ্য মেলা ছাড়া ২০২১ সালের চীনের পণ্যভোগ ত্বরান্বিতকরণ গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে আরো বেশি কিছু ধারাবাহিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, তৃতীয় অনলাইন কেনাকাটা উত্সব অনুষ্ঠিত হবে। চলতি বছর অংশগ্রহণকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা গত বছরের দ্বিগুণের হবে। কিছু সংখ্যক “সিল্ক রোড ইলেক্ট্রনিক বাণিজ্য”-এর অংশীদারি দেশগুলোর বিখ্যাত পণ্যগুলি গ্রাহকদের সামনে আসবে। ফলে চীনের অভ্যন্তরীণ পণ্যভোগ সরবরাহ সমৃদ্ধ হবার পাশাপাশি দেশি-বিদেশি দ্বৈত প্রচলনের জন্য সহায়ক হবে। এছাড়া, চীনে নিযুক্ত অংশীদারি দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতগণ ভিডিও রেকর্ড করে, নিজেদের দেশের বৈশিষ্ট্যময় পণ্য ও পর্যটন সম্পদ তুলে ধরবেন। খুব প্রত্যাশিত হবে, তাইনা?

 

প্রেমা/এনাম