নির্মাণাধীন চীনা মহাকাশ স্টেশনের প্রধান মডিউলের উতক্ষেপণ
2021-04-30 16:29:02

গত ২৯ এপ্রিল চীন তার নির্মাণাধীন মহাকাশ স্টেশনের প্রধান মডিউল থিয়েন হ্য সফলভাবে উতক্ষেপণ করেছে। এটি ইতোমধ্যে সঠিকভাবে পূর্বনির্ধারিত কক্ষপথে প্রবেশ করেছে।

নির্মাণাধীন চীনা মহাকাশ স্টেশনের প্রধান মডিউলের উতক্ষেপণ_fororder_photo%2F0001%2F2021-04-30%2FG8R08PSR56NT0001NOS

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এক অভিনন্দন বাণীতে এই অভিযানের সাথে জড়িত সকল ইউনিট ও কমরেডকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান।

 

অভিনন্দন বাণীতে সি বলেন, স্পেস স্টেশন এবং জাতীয় স্পেস ল্যাবরেটরি নির্মাণ হলো চীনের স্পেস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ‘তিনটি ধাপের’ কৌশলের গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য।

 

থিয়েন হ্য’র সফল উতক্ষেপণ চীনের স্পেস স্টেশনের সির্মাণ সম্পন্নকরণ পর্যায়ে প্রবেশের প্রতীক, যা পরবর্তী কর্তব্য পালনের দৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করেছে।

 

চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছি য়াং এবং চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর সম্পাদক ওয়াং হু নিং বেইজিং এরোস্পেস ফ্লাইট কন্ট্রোল সেন্টারে থিয়েন হ্য’র উতক্ষেপণ সরাসরি পর্যবেক্ষণ করেন।

 

উল্লেখ্য, চীনের স্পেস স্টেশন হলো চীনের নিজস্ব প্রযুক্তিতে নির্মিত ও পরিচালিত মনুষ্যবাহী স্পেস স্টেশন। থিয়েন হ্য যথাক্রমে ওয়েন থিয়েন এবং মোং থিয়েন পরীক্ষা কেবিন নিয়ে গঠিত হয়।

 

থিয়েন হ্য হলো স্পেস স্টেশনের পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র। পরিকল্পনা অনুযায়ি, স্পেস স্টেশনের কক্ষপথ নির্মাণ কাজ ২০২২ সালে শেষ হবে। তখন স্টেশনটি মানুষের অংশগ্রহণে বিজ্ঞানসম্মত, প্রযুক্তিগত পরীক্ষা চালানো এবং সার্বিকভাবে স্পেস সম্পদ ব্যবহার করার দক্ষতা অর্জন করবে।

 

আজকের এ ভিডিও অনুষ্ঠানের প্রথমে আমরা থিয়ান হ্য সম্পর্কে কিছু তথ্য আপনাদের সাথে শেয়ার করব।

 

চীনের স্পেস স্টেশনের তিনটি অংশ রয়েছে। থিয়ান হ্য কেন্দ্রীয় কেবিন, ওয়েন থিয়ান পরীক্ষাগার কেবিন এবং মেং থিয়ান পরীক্ষাগার কেবিন। বাকি দুটি পরীক্ষাগার কেবিন আগামি বছরে উত্ক্ষেপন করা হবে। তিনটি কেবিন নিয়ে ইংরেজি ‘টি’অক্ষরের আকারে স্পেস স্টেশন নির্মিত হবে।

 

কেন্দ্রীয় কেবিনের দৈঘ্য ১৬.৬ মিটার। ওজন ২২.৫ টন। তাতে তিনজন নভোচারী দীর্ঘকাল ধরে থাকতে পারবেন। এটি চীনের বৃহত্তম মহাকাশ যান। এ কেবিন স্পেস স্টেশনের ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র। পাশাপাশি, নভোচারীদের নানা কর্মকাণ্ডের প্রধান স্থান এটি। তা ছাড়া অল্প কিছু বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাও এখানে করা হবে।

 

প্রিয় দর্শক, এখন থিয়ান হ্য নামের কেন্দ্রীয় কেবিন সম্পর্কে জানলেন।

 

থিয়ান হ্য নামের কেন্দ্রীয় কেবিন উত্ক্ষেপন খুব তাত্পর্যপূণ। ঠিক যেমন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং তাঁর অভিনন্দন বার্তায় বলেছেন, স্পেস স্টেশন এবং জাতীয় মহাকাশ পরীক্ষাগার প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে চীনের মানববাহী মহাকাশ যান প্রকল্পের তিন পদক্ষেপের অন্যতম। এটি বিজ্ঞান-প্রযুক্তি শক্তিশালী দেশ এবং মহাকাশ খাতে শক্তিশালী দেশ হওয়ার প্রতীক। থিয়ান হ্য নামের কেন্দ্রীয় কবিন সাফল্যের সঙ্গে উত্ক্ষেপণ করা মানে চীনের স্পেস স্টেশনের নির্মাণকাজ সার্বিক বাস্তবায়নের পর্যায়ে এসেছে, যা পরবর্তী কর্তব্য বাস্তবায়নের জন্য দৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করেছে।

 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন মহাকাশ ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করেছে। ১৯৯৯ সাল থেকে চীন ১১টি শেন চৌ মহাকাশযান উত্ক্ষেপণ করেছে। ২০১৬ সালের ১৭ অক্টোবর থেকে শেন চৌ-১১ মানববাহী মহাকাশ যান ৩৩ দিন ধরে উড়েছে। চলতি মাসে শেন চৌ-১২ মহাকাশ যান উত্ক্ষেপণের পরীক্ষামূলক কাজ চলছে।

 

 চন্দ্র অনুসন্ধানে চীন গত ২০০৭ সাল থেকে ছাং এ নামের চারটি যান উতক্ষেপণ করেছে। চীনের মঙ্গল সন্ধানের কাজ এগিয়ে চলছে। গত ২০২০ সালের ২৩ জুলাই চীনের প্রথম মঙ্গল যান ‘থিয়ান ওয়েন-১’ সাফল্যের সঙ্গে উত্ক্ষেপণ করা হয়েছে।

 

অনেকে হয়ত প্রশ্ন করতে পারেন যে, মহাকাশ সন্ধানের তাত্পর্য কী? আসলে মহাকাশ সম্পর্কে জানা মানব জাতির স্বার্থের জন্য অনুকূল। যেমন, বায়ু উপগ্রহ কৃষি কাজে সাহায্য করে। নেভিগেশন ব্যবস্থার কারণে আমাদের জীবন-যাপন অনেক সুবিধাজনক হয়ে উঠেছে। "স্পেসের বাবা" নামে খ্যাত তিসিওকোভস্কি বলেছিলেন যে, পৃথিবী মানব জাতির প্যাঁচা, কিন্তু মানবজাতি চিরদিনের জন্য প্যাঁচাকে বেঁধে রাখতে পারবে না।  

 

রুবি/এনাম