আজ চৌঠা মে। চীনের যুব দিবস। ১৯১৯ সালের এ দিনের আন্দোলন স্মরণে ১৯৩৯ সাল থেকে আমরা এ দিনটিকে যুব দিবস হিসেবে পালন করে আসছি। ‘চৌঠা মে’ একটি দেশপ্রেমের আন্দোলন, সাম্রাজ্যবাদ ও সামন্তবাদের বিরুদ্ধে লড়াই এবং চীনের নতুন গণতান্ত্রিক বিপ্লবের সূচনা।
১৯১৯ সালের জানুয়ারিতে প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের ২৭টি জয়ী দেশ ফ্রান্সের প্যারিসে একটি শান্তি সম্মেলনে মিলিত হয়। চীনও ২৭টি দেশের অন্যতম। তবে জয়ী দেশ হলেও চীনের কোন কথা বলার অধিকার নেই। চীনের শান তুং প্রদেশ দখল করেছিল জার্মানি এবং যুদ্ধ শেষে অন্য দেশ চীনের শান তুং প্রদেশকে জার্মানির হাত থেকে জাপানের কাছে হস্থান্তর করতে চেয়েছিল। চীন নিজের ভূভণ্ড রক্ষা করতে সম্মেলনে দাবি জানায়, তবে ব্যর্থ হয়। তত্কালীন সরকার অপমানজনক এ চুক্তি স্বাক্ষর করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ তথ্য শুনে শান তুং প্রদেশের জনগণ তীব্র অসন্তুষ্ট প্রকাশ করে এবং দুজন প্রতিনিধি নির্বাচন করে। দুজন প্রতিনিধি সরাসরি প্যারিসে গিয়ে চীনের কূটনৈতিক প্রতিনিধি ও সম্মেলনের কাছে চুক্তি স্বাক্ষর না করার দাবি জানায়। তবে আলাপ–আলোচনা সফল হয়নি। ১৯১৯ সালের চৌঠা মে বেইজিং বিশ্ববিদালয়, বেইজিং উচ্চতর সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়সহ ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারের বেশি শিক্ষক ও শিক্ষার্থী প্রতিবাদ সভা আয়োজন করে এবং চুক্তিতে স্বাক্ষর না করার দাবি পুনর্ব্যক্ত করে। বেইজিংয়ের দেশপ্রেম আন্দোলন দ্রুত সারা চীনের তরুণ ও তথ্যমাধ্যমের সমর্থন পায়। তারপর ১৯ মে, তেসরা জুন, পাঁচই জুন যথাক্রমে বেইজিংসহ সারা চীনের স্কুল ও কারখানায় ধর্মঘট পালিত হয়।
২৩ জুন তত্কালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী শান তুং প্রদেশের প্রতিনিধিরদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তাঁরা ভার্সাই শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর স্থগিতের ঘোষণা দেন। ২৮ জুন চীন ভার্সাই শান্তি চুক্তির স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নেয় নি এবং চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানায়। তারপর আন্দোলনে গ্রেফতারকৃত শিক্ষার্থীরাও মুক্তি পায়।
আধুনিক চিন্তাবিদ লিয়াং ছি চাওয়ের কথার বরাত দিয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেছেন, তরুণরা বুদ্ধিমান, ধনী ও শক্তিশালি হলে চীন দেশ বুদ্ধিমান, সমৃদ্ধ ও শক্তিশালি হবে। ১৯০০ সালে লিয়াং ছি চাও ‘চীনা তরুণ’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। ওই সময় সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো চীন আক্রমণ করেছিল। সেই সময় বৃটেন ও ফ্রান্সের নেতৃত্বে আট দেশের মিত্র বাহিনী চীনকে ‘পূর্ব এশিয়ার অসুস্থ মানুষ’ বলে ডাকে। তারা বলেছিল চীন স্বনির্ভর হতে পারবেনা। কেবল অন্য শক্তিশালি দেশের নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারবে।
১০০ বছর চলে গেছে, তারা কখনো ভাবে না চীন আজ সমৃদ্ধ ও শক্তিশালি একটি দেশে পরিণত হয়েছে। আমরা চৌঠা মে দিবস পালন করি। কেবল ওই ইতিহাসকে স্মরণ করি না, বরং ভবিষ্যতের তরুণদের দেশের নির্মাতা, ও অগ্রগামী হতে সমর্থন জানাই।
আমি একজন শাংনতুং এলাকার মানুষ। তাই অন্যদর চেয়ে আমি আরও গভীরভাবে এ ইতিহাসের গুরত্ব অনুভব করি। চৌঠা মে আন্দোলনের মাধ্যমে মার্কসবাদ শানতুংয়ে ব্যাপক ভাবে প্রচারিত হয়। ১৯২১ সালে চীনে প্রতিষ্ঠিত হয় সিপিসি। শানতুংয়ে চীনের প্রথম ৬টি অঞ্চলের মতো সবার আগে সিপিসি সংগঠন প্রতিষ্ঠা পায়। ১৯২১ সালে ২৩ জুলাই সিপিসির প্রথম কংগ্রেস শাংহাইয়ে অনুষ্ঠিত হয়। তখন সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী এবং সিপিসির প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম দুজন শাংনতুং থেকে এসেছেন।
চীনা জাতির রক্তে প্রবাহিত দেশপ্রেম কখনো ভেঙে যাবে না, দূরে যাবে না। নিপীড়নের বিরুদ্ধে আমাদের পূর্বপুরুষগণ যা করেছেন, তা সব সময় আমাদেরকে উত্সাহ দিচ্ছে। চীন আর দুর্বল দেশ নয়, আমাদের কর্তব্যও শেষ হয়নি। ১৯১৯ সালের চৌঠা মে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে তরুণরা সবার সামনে দাঁড়িয়েছে। আর আজ চীনা জাতির পুরুদ্ধারে আরও বেশি তরুণ এগিয়েছে। তা একটি দেশের শাক্তিশালি হবার আসল শক্তি।(শিশির/এনাম/রুবি)