সিনচিয়াংয়ের গুজা গ্রামের সুন্দর জীবন
2021-04-30 15:18:30

গুজা গ্রামটি হল চীনের সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের কাশগর এলাকার একটি গ্রাম। গ্রামের বাড়িঘরে কাজুবাদামের মাঝে মরিচের ক্ষেত দেখা যায়। সম্প্রতি যখন সিআরআই-এর সাংবাদিক গুজা গ্রামে যান, তখন দেখতে পান যে, কৃষকরা মরিচের চারা লাগাতে ব্যস্ত আছেন। তাদের চোখে, এ ছোট ছোট মরিচের চারা শুধু শরত্কালে লাল মরিচ ফসলই নয়, বরং তাদের জীবনের সমৃদ্ধির স্বপ্ন।

 

সিনচিয়াংয়ের গুজা গ্রামের সুন্দর জীবন_fororder_ইউসুপ মরিচ চাষ করছেন

 

আগে আমি ১০ মু (এক মু ৬৬৬ বর্গমিটার) জমিতে তুলা চাষ করতাম। সঙ্গে আরও ৫ মু মরিচ চাষ করতাম। প্রতি মুতে তুলা চাষ থেকে আয় হয় ১ হাজার ইউয়ানের মতো। তবে প্রতি মু জমিতে মরিচ চাষে আয় হয় ৪ হাজার ইউয়ানেরও বেশি। যা তুলা চাষের চার গুণ। তাই চলতি বছর আমি আগের ৫ মু মরিচ চাষের ভিত্তিতে আরো ৫ মু মরিচ চাষ করেছিলাম। মরিচের আয় তুলার চেয়ে বেশি, তাহলে কেন আমি মরিচ চাষ করবো না?

সিনচিয়াংয়ের গুজা গ্রামের সুন্দর জীবন_fororder_গুজা গ্রামের লোকজন মরিচ চাষে ব্যস্ত

কৃষক তোহতিগুল ইউসুপ তার মরিচ চাষের অভিজ্ঞতা সাংবাদিকের কাছে শেয়ার করেন। তার পরিবারে ১৫ মু জমি আছে। অর্থাৎ প্রায় ১ হেক্টর। গত বছর ৫ মু জমিতে  পরীক্ষামূলকভাবে মরিচ চাষ করা হয়। সেই বছর তাদের পরিবারের আয় হয় ২০ হাজার ইউয়ান। মরিচ চাষে ভালো মুনাফা পাওয়ায় চলতি বছর ইউসুপ মরিচ চাষের আয়তন  দ্বিগুণ করেছেন।

 

গুজা গ্রামে মোট ৩৮৪টি পরিবারে মোট ১৭৩৪জন মানুষ আছে। তাদের মধ্যে নিবন্ধিত দরিদ্র পরিবার ১৮১টি; এসব পরিবারে লোকসংখ্যা ৮৪২জন। গ্রামবাসীদের দারিদ্র্যমুক্ত হওয়ায় সাহায্য করতে গ্রামের কার্যালয় কৃষি সহযোগিতা কমিউনিটি স্থাপন করা হয়। স্থানীয় উত্পাদনের অবস্থা এবং বাজারের চাহিদা অনুযায়ী, মরিচসহ বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যময় সবজি চাষের মাধ্যমে আয় বাড়ানো যায়। কমিউনিটি কৃষকের জন্য প্রযুক্তিগত সমর্থন দেয়। তাদের বিক্রিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রেও সুবিধা দিয়ে থাকে। তাদের সব চিন্তাকে দূর করে। ইউসুপ বলেন,

 

প্রথমত, আমাদের গ্রামের কার্যালয় আমাদের বিনা খরচে বিভিন্ন প্রযুক্তি শেখায়। দ্বিতীয়ত, আমাদের বিনা খরচে রাসায়নিক সার দেয়। তৃতীয়ত, মরিচ চাষের সময় পানির ব্যবহারের সমস্যা সময়মত সমাধান করেছে।

 

গুজা গ্রামে মানুষ বেশি, কিন্তু জমি কম। পুরো গ্রামে কৃষিজমির আয়তন ২৯৯১ মু। মাথাপিছু জমির আয়তন মাত্র ১.৭ মু। স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের গ্রামে নিযুক্ত কর্মগ্রুপ নির্দিষ্টভাবে সাহায্য করার মাধ্যমে গ্রামের জমি নেই বা জমি কম এমন দরিদ্র পরিবারকে ব্যাপক সমর্থন দিয়েছে।

গুজা গ্রামের কর্মগ্রুপের আবলাত ইউনুস সাংবাদিককে জানান,

 

আমি শা চ্য চেলার জলসেচ ব্যুরোর একজন কর্মকর্তা, আমাদের ব্যুরো গুজা গ্রামের দারিদ্র্যবিমোচনের সাহায্য করেছে। শা চ্য জেলার জলসেচ ব্যুরোর ৬৯জন কর্মকর্তা এই কাজে অংশ নিয়েছেন। প্রতি মাসে সব কর্মকর্তা স্থানীয় গ্রামবাসীদের বাসায় গিয়ে একবার খোঁজ খবর নেন। তাদের মৌলিক অবস্থা, কর্মসংস্থানের অবস্থা, কৃষিকাজের অবস্থা, কৃষিজাত দ্রব্য বিক্রির অবস্থা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেন। কৃষকের যদি কোনো কঠিনতা থাকে, কোনো সমস্যা থাকে, সাহায্যকারী কর্মকর্তারা যদি সমাধান করতে পারে তাহলে তারা নিশ্চয় সমাধান করবে। যদি সমাধান করতে না পারে, তাহলে গ্রাম কার্যালয়কে অবহিত করা হয়। কার্যালয় মিটিং আয়োজন করে সমাধানের পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করে। যদি তারপরও সমাধান করা না যায়, তাহলে প্রথমে গ্রাম সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং কৃষকের সমস্যা নিশ্চয় সবার আগে সমাধান করবে।

 

গুজা গ্রামের কর্মগ্রুপের সদস্য লি জুন জানান, কর্মগ্রুপ ‘এক পরিবারের জন্য একটি নীতি’র সাহায্যমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। কারণ প্রত্যেক পরিবারের দারিদ্র্য হওয়ার কারণ ভিন্ন। তাই প্রত্যেক পরিবারের জন্য উপযোগী ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। ‘দারিদ্র্যবিমোচনের পাশাপাশি জনগণের আস্থা বৃদ্ধি করা’ হল দরিদ্র মানুষের সংগ্রামে উত্সাহ দেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। তিনি বলেন,

 

গ্রামের দারিদ্র্যবিমোচনের কাজের সাহায্যে গ্রামবাসীদের চিন্তাধারা আরো প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠেছে। তারা সক্রিয়ভাবে বিভিন্ন কাজ করতে পারছেন।

গুজা গ্রামের গ্রামের অধিবাসী তুবুহান রুজি’র পরিবারে কোনো চাষের জমি নেই। তিনি আগে গ্রামের কর্মগ্রুপের সদস্য লি জুনকে সহায়তা করতেন। সরকারি সাহায্যের পর তুবুহান রুজির পরিবার ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দারিদ্র্যমুক্ত হয়। এখন তুবুহান রুজি শা চ্য জেলার একটি হস্তশিল্প কমিউনিটিতে হাতে তৈরি সোফা তৈরির কাজ পেয়েছেন। তার প্রতি মাসের বেতন সাড়ে তিন হাজার ইউয়ানেরও বেশি। তাঁর স্বামী স্থানীয় বাজারে একটি পোশাকের দোকান খুলেছেন। প্রতি মাসে তার বেতন পাঁচ হাজারেরও বেশি ইউয়ানের মতো। লি জুন বলেন,

 

সিনচিয়াংয়ের গুজা গ্রামের সুন্দর জীবন_fororder_তুবুহান রুজি কারখানায় সোফা তৈরির কাজ করছেন

তুবুহান রুজির হাতের সৌফা তৈরির কাজটি করতে প্রযুক্তি ও বিশেষ কৌশল দরকার। এভাবে তিনি এক দিকে কাজের মাধ্যমে স্থিতিশীল উপার্জন করেন, অন্যদিকে সময়মতো কাজ শুরু করতে পারেন এবং সময়মতো কাজ শেষ করে বাসায় যেতে পারেন। তিনি দুপুর বেলা বাসায় গিয়ে শিশুদের যত্নও নিতে পারেন।

তুবুহান রুজির বাসা একদম গ্রাম কার্যালয়ের পাশে অবস্থিত। ৭৯ বর্গমিটার বাড়ির সামনে একটি চওড়া ও সুন্দর উঠান আছে। সেখানে কিছু সবজি চাষ করা হয়। সাংবাদিকরা যখন তার বাসায় ঢোকেন, তখন তিনি শিশু ও বৃদ্ধার সঙ্গে উঠানে বসে ফল খেয়ে আড্ডা দিচ্ছিলেন। এই বাড়িঘর সম্বন্ধে তুবুহান রুজি বলেন,

 

সিনচিয়াংয়ের গুজা গ্রামের সুন্দর জীবন_fororder_তুবুহান রুজি পরিবারের সঙ্গে

সরকার আমাদেরকে ২৮.৫ হাজার ইউয়ান ভর্তুকি দিয়েছে। সেই সঙ্গে আমি ও আমার স্বামীর জমানো টাকা দিয়ে ২০১৮ সালে আমরা আমাদের নিজেদের এই বাড়ি নির্মাণ করেছি। এ ছাড়া আমরা ভালোভাবে স্থাপত্যের ভর্তুকি, চিকিত্সার ভর্তুকি, শিক্ষার ভর্তুকি এবং অন্যান্য আর্থিক ভর্তুকি উপভোগ করেছি।

 

তুবুহান রুজির পরিবারে মোট ৫ জন সদস্য আছে। তার বড় মেয়ে সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের রাজধানী উরুমুছিতে মাধ্যমিক স্কুলে পড়াশোনা করছে। তাঁর ছেলে স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীতে লেখাপড়া করছে। তাঁর ছোট মেয়ে এখন প্রথম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। বর্তমান জীবন সম্বন্ধে তুবুহান রুজি খুব সন্তুষ্ট। তিনি বলেন,

 

আমার কাজ এবং জীবন নিয়ে আমি খুব সন্তুষ্ট। আমি কমিউনিস্ট পার্টিকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমি প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আরো ধন্যবাদ জানাতে চাই গ্রামের সব কর্মকর্তাদেরকে।

 

২০২০ সালের নভেম্বর মাসে গুজা গ্রামের সবাই দারিদ্র্যমুক্ত হন। গ্রামের মাথাপিছু আয় হয় ১১ হাজার ইউয়ান। গ্রামের কর্মগ্রুপের সদস্য হিসেবে লি জুন খুব গর্বের সঙ্গে বলেন, এখন পুরো গ্রাম দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে, জনগণের জীবনযাপন নিশ্চিত হয়েছে। পরবর্তীতে গ্রামের সব কর্মকর্তাদের কাজ হবে- কীভাবে গ্রামবাসীদের সাংস্কৃতিক জীবনকে আরো সমৃদ্ধ করা যায়। তিনি বলেন,

 

রাতের বেলায় এখানে একটি নৈশ বাজার গড়ে উঠবে। লোকজন এখানে আনন্দ করবেন, সেই সঙ্গে লোকজনের আয় বাড়বে। গ্রামবাসীরা নিজের বাসার রান্না করা সুস্বাদু খাবার নিয়ে রাতের বাজারে বিক্রি করতে পারবেন। রাতের ব্যবসা বাণিজ্যের জীবন উপভোগ করার সঙ্গে কিছু আয়ও করতে পারবেন তারা

 

গ্রামের নতুন নির্মিত সংস্কৃতি চত্বরে দাড়িয়ে লি জুন গুজা গ্রামের সুন্দর ভবিষ্যতের কথা সাংবাদিককে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, গ্রামের কর্মকর্তারা গুজা গ্রামের বৈশিষ্ট্যময় পর্যটন শিল্প এবং গ্রামবাসীদের বাসায় পারিবারিক হোস্টেল নির্মাণ করার পরিকল্পনা করছেন। তারা খুব দ্রুত দেশ বিদেশের পর্যটকদের অভ্যর্থনা করতে পারবে। তিনি সবাইকে গুজা গ্রামে এসে স্থানীয় সংস্কৃতি ও সুন্দর গ্রামীণ জীবন উপভোগ করায় স্বাগত জানান।

(শুয়েই/তৌহিদ/লিলি)