আগামী পাঁচ বছরে চীনের চলচ্চিত্রের প্রবণতা
2021-04-29 15:53:28

আগামী পাঁচ বছরে চীনের চলচ্চিত্রের প্রবণতা_fororder_趋势

চলতি বছর হলো চীনের চতুর্দশ পাঁচশালা পরিকল্পনার প্রথম বছর। চীনের চলচ্চিত্র অঙ্গন এ বছরের বসন্তকালে সার্বিকভাবে পুনরুদ্ধার হয়েছে ও সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

বিগত ১০ বছরে চলচ্চিত্র খাতে চীনের অগ্রগতি হলো চীনের মুলভূভাগের উল্লেখযোগ্য একটি খাত।

 

তবে অন্যান্য খাতের তুলনায় চীনের চলচ্চিত্র খাতের ভিত্তি সবেমাত্র প্রস্তুত হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন প্রাথমিক পর্যায়ের রয়ে গেছে। আমাদের আরো অনেক কাজ করার আছে। আগামী ৫ বছরে দেশের জাতীয় অর্থনীতি এবং চতুর্দশ পাঁচশালা পরিকল্পনার সমন্বয়ে আরো অনেক কাজ করতে হবে। বর্তমানে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে চলচ্চিত্রের মর্যাদা ও প্রভাব জোরদার হচ্ছে। চলচ্চিত্র খাতে আরো পুঁজি ও দৃষ্টি দেওয়া হচ্ছে। চলচ্চিত্র চীনা সংস্কৃতির আরেকটি নেমকার্ড হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। আগামী ৫ বছরে চীনা চলচ্চিত্রের উন্নয়নের প্রবণতা কেমন হবে? চলুন, অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জানার চেষ্টা করি।

 

আগামী ৫ বছরে চীনে স্ক্রিনের সংখ্যা হবে এক লাখ এবং প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যাও ১৬ হাজার ছাড়িয়ে যাবে।

২০১৬ সালে চীনের মুলভূভাগে স্ক্রিনের সংখ্যা ছিল মাত্র ৪৩,৬১৯টি। পাশাপাশি প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা ছিল মাত্র ৭৯২৫টি। গত বছরের শেষ দিকে মহামারীসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব সত্ত্বেও মুলভূভাগে স্ক্রিনের সংখ্যা ৭৫ হাজার ছাড়িয়ে যায় এবং প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যাও ১৩,৩৬২টিতে উন্নীত হয়। প্রবৃদ্ধি বজায় রাখার ক্ষেত্রে আগামী ৫ বছরে মুলভূভাগে স্ক্রিনের সংখ্যা এবং প্রেক্ষাগৃহ নবায়নের গতি স্থির থাকবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। দশ বছরের মধ্যে এ ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ একটি ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। তবে, এই ব্যবস্থা একটি উঁচু মানের শিল্প; যা প্রাণবন্তভাবে উন্নত হচ্ছে। ফিল্ম ইনভেস্টমেন্ট সংস্থা ও কিছু ব্যক্তিগত পুঁজি বিনিয়োগকারীদের জন্য আগের কয়েক বছরের তুলনায় বিনিয়োগের ঝুঁকি বেড়ে যাবে। তবে, অন্য শিল্পের তুলনায় প্রেক্ষাগৃহের ঝুঁকি খুব বেশি নয়, খুব কমও নয়। আগামী পাঁচ বছরে প্রেক্ষাগৃহ খাতে বিনিয়োগ এবং রিটার্নের ভারসাম্য একটি বাস্তবসম্মত অবস্থায় ফিরে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

 

২০১৩ সালে চীনের মুলভূভাগে চেইন থিয়েটারের সংখ্যা ছিল ৩৭টি এবং মাত্র ১০ বছরের মধ্যে এই সংখ্যা ৫০টিতে উন্নীত হয়। তবে, লাইসেন্স পাওয়ার শর্ত বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মুলভূভাগে চেইন থিয়েটারের সংখ্যা বৃদ্ধির গতি কমেছে।

 

বর্তমানে মুলভূভাগের প্রায় ৫০টি থিয়েটার চেইনের মধ্যে ওয়ানতা ও তাতি-সহ অন্য থিয়েটার চেইনের অনুপাত কিছুটা কম। বলা যায়, ১০টিরও বেশি বড় থিয়েটার চেইন বাজারের অর্ধেকেরও বেশি ভাগ দখল করে রেখেছে। বাকী ছোট চেইন থিয়েটারগুলো বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে আছে। বাজার সুশৃঙ্খল করে তোলা এবং গোটা শিল্পের চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি আগামী পাঁচ বছরে চেইন থিয়েটারের ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন হতে পারে। কিছু আংশিক থিয়েটার চেইন চিরদিনের মতো বাজার থেকে বিলুপ্ত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

 

চলতি বছরের বসন্ত উত্সবের সময় ফিল্মের টিকিটের দাম বাড়ানোর ব্যাপারটি হট টপিকে পরিণত হয়। তবে বসন্ত উত্সবের ছুটি শেষ হওয়ার ফলে ফিল্মের টিকিটের দাম কমতে থাকে।

সদ্যসমাপ্ত সমাধি পরিষ্করণ দিবসের তিন দিনের ছুটিতে চলচ্চিত্রের টিকিটের দাম বসন্ত উত্সবের তুলনায় অনেকটা কমে যায়। যদি মুলভূভাগের বাজার আগামী ৫ বছরের মধ্যে স্থিতিশীল হয়, তাহলে বসন্ত উত্সব ও জাতীয় দিবস- এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ ছুটির সময় বক্সঅফিসের চাপও কমে যেতো।

 

বসন্ত উত্সব ও জাতীয় দিবসসহ গুরুত্বপূর্ণ ছুটির সময় এবং সবার প্রত্যাশিত চলচ্চিত্র প্রদর্শনের সময় মুভি টিকিটের দাম বৃদ্ধির যে প্রবণতা দেখা দেয়, তার প্রধান কারণ হলো সাধারণ সময় প্রেক্ষাগৃহগুলো গুরুতর ক্ষতির মধ্যে ছিল। তা সত্ত্বেও মুলভূভাগের টিকিটের দাম অনেক বাড়ানো যায় না।  চলচ্চিত্র শিল্পের ভিত্তি বাড়ার ফলে প্রযোজকরা মুভি তৈরির সময় এর খরচ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে। গোটা শিল্পের ওপর মুভি টিকিটের নির্ভরতা কমে যায়; এতে মুভি টিকিটের দাম স্থিতিশীল গতিতে বাড়বে। এবারে চলচ্চিত্রের বিষয়ের ওপর দৃষ্টি দেবো।

 

চলিত বছরের বসন্ত উত্সবের সময় প্রদর্শিত কয়েকটি চলচ্চিত্র আগামী কয়েক বছর মুলভূভাগের ফিল্ম মার্কেট প্রযোজনায় দিক নির্দেশনা দিয়েছে। বর্তমানে যেসব চলচ্চিত্রের বক্সঅফিসের আয় ভালো, সেসব চলচ্চিত্রের বিষয় দুটি দিকের সঙ্গে সম্পর্কিত। একটি হল- সায়েন্স ফিকশন ও সামরিক বিষয়ক মুভি, আরেকটি হলো জনগণের জীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত বিষয়।

 

ভবিষ্যতে কম্পিউটার প্রযুক্তিও উন্নত হবে। চলতি বছর ‘অ্যাভাটার’ নামের পুরানো চলচ্চিত্র প্রদর্শনে অনেক দর্শক বেশ অবাক হয়েছেন। লেজার আইম্যাক্স ও সিনিটি প্রেক্ষাগৃহসহ উন্নত প্রেক্ষাগৃহ প্রযুক্তি মুলভূভাগে অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে আকর্ষণীয় চলচ্চিত্রের অভাবে এসব উন্নত প্রযুক্তি উপস্থাপন ভালোভাবে প্রদর্শন করা যায় নি। ফলে মুলভূভাগে উচ্চ-প্রযুক্তির সিনেমা হলের নির্মাণ কাজ ধীর গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আগামী পাঁচ বছরে নতুন প্রযুক্তির নেতৃত্বে ‘অ্যাভাটার-২’ প্রদর্শিত হবে। এতে ‘খালি চোখ থ্রি-ডি’সহ বেশ কয়েকটি প্রযুক্তির ব্যবহার করা যাবে কিনা, তা নতুন করে নির্মাণের ক্ষেত্রে মুলভূভাগে চলচ্চিত্র অঙ্গনে প্রভাব ফেলবে। বলতে চাই যে, দশ বছর আগের অ্যাভাটার চলচ্চিত্র প্রদর্শনের পর মুলভূভাগে থ্রি-ডি প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণ কাজ দ্রুত হয়েছে।

 

চলতি বছরের জাতীয় দিবসের আগে শানসি ফেন ইয়াং শহরে প্রতিষ্ঠিত হবে শানসি ফিল্ম একাডেমি। এটি হলো মুলভূভাগে আরেকটি পেশাগত বিশ্ববিদ্যালয়। একেডেমির নির্মাণ কাজ চলতি বছর চলচ্চিত্র শিল্পের খুব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হয়ে উঠবে। বর্তমানে চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িতদের ধীশক্তির অভাব রয়েছে। আগামী কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি অঞ্চলে নতুন করে পেশাগত চলচ্চিত্র ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠার ফলে ধীশক্তির অভাব কিছুটা দূর হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

 

ভবিষ্যতে চলচ্চিত্র পরিচালকদের মধ্যে যারা পেশাগত চলচ্চিত্র পরিচালক নয়, তাদের সংখ্যা বাড়বে।

‘হাই, মাম’ নামক চলচ্চিত্রের পরিচালক চিয়া লিং একজন কমেডিয়ান। তিনি এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সারা বিশ্বের বক্সঅফিসে সবচে বেশি আয় করেছেন। এই ফল আগামী কয়েক বছরে চীনের চলচ্চিত্র বাজারের ওপর বিশাল প্রভাব ফেলতে পারে। পেশাগত পরিচালকের উদ্যোগে একটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করা আর তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়, সবচে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পরিচালিত চলচ্চিত্র আকর্ষণীয় কিনা। হান হান নামে একজন লেখক পরিচালক চলচ্চিত্র পরিচালনার ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তা ছাড়া, কমেডিয়ান হিসেবে হুয়াং বো ও সু চেংয়ের সফল অভিজ্ঞতা আছে। পেশাগত দিক থেকে বলা যায়, পেশাগত পরিচালকের তুলনায় এসব অপেশাদার পরিচালকের চলচ্চিত্রে কিছু পার্থক্য রয়েছে। তবে দর্শকরা যে কোনো ভালো চলচ্চিত্রের প্রতিই সমর্থন জানিয়ে থাকেন।

 

২০২৬ সালে ‘চীনের চলচ্চিত্র শিল্প বেগবান আইন’ জারির দশম বার্ষিকী। চীনা চলচ্চিত্রের শ্রেণিবিন্যাস নিয়ে টানা ৩০ বছর ধরে আলোচনা চলেছে। তবে এর অগ্রগতি খুব একটা সুস্পষ্ট নয়। চলচ্চিত্রের পাশাপাশি খেলাধুলা, প্রকাশনা খাত, রেডিও, টিভি ও মঞ্চ পরিবেশনাতেও শ্রেণীবিন্যাস প্রয়োজন। আগামী পাঁচ বছরে শ্রেণীবিন্যাস সিস্টেমও বের হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

(লিলি/তৌহিদ/শুয়ে)