চরম দারিদ্র্য দূরীকরণ একটি নতুন সূচনা
2021-04-28 15:07:24

 

এপ্রিল ২২: সম্প্রতি চীন সরকার ‘মানবজাতির দারিদ্র্যবিমোচনে চীনের অভিজ্ঞতা’ শীর্ষক শ্বেতপত্র প্রকাশ করে। এতে চীনে চরম দারিদ্র্য দূরীকরণের প্রক্রিয়া, দারিদ্র্যবিমোচনকাজে চীনের সাফল্য এবং বিশ্বে চীনের অবদান পর্যালোচনা করা হয়।

শ্বেতপত্রে চীনের গ্রামাঞ্চলে দারিদ্র্যবিমোচন কার্যক্রমের অভিজ্ঞতা ও সাফল্য এবং গ্রামের ঐতিহাসিক পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ সম্পর্কে চীনের ইয়ুননান প্রদেশের দরিদ্র অঞ্চলে ১৫ বছর ধরে কাজ করা জার্মান চিকিত্সক জিয়া আইকের বিশেষ অনুভুতি রয়েছে। তিনি বলেন, ‘সেখানকার চিকিত্সাব্যবস্থায় অসাধারণ পরিবর্তন এসেছে। বহু গ্রামীণ হাসপাতালের অবকাঠামো এমনকি জার্মানির ছোট ক্লিনিকগুলোর চেয়েও ভালো। কৃষকরা চিকিত্সাবীমাতে অংশ নিয়েছেন, চিকিত্সা পাওয়া এখন অনেক সহজ হয়েছে।’

বিগত ৮ বছরে চীনে বর্তমান মানদণ্ডে ৯ কোটি ৮৯  লাখ ৯০ হাজার গ্রামীণ দরিদ্র মানুষ হতদারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেয়েছে। এতে চীন সার্বিকভাবে হতদারিদ্র্য থেকে মুক্ত হয়েছে।

হতদারিদ্র্যমুক্তিই কিন্তু শেষ কথা নয়! এটা বরং নতুন জীবন ও নতুন সংগ্রামের সূচনা। গত বছরের শেষদিকে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় পল্লী কর্মসম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেছিলেন, দারিদ্র্যবিমোচন কার্যক্রমে সাফল্য অর্জন করতে হবে। গ্রামীণ পুনরুজ্জীবনের জন্য চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি) ও  গোটা সমাজের শক্তি ব্যবহার করতে হবে। এতে কৃষি শিল্পের উচ্চ গুণগত মানের উন্নয়ন হবে এবং গ্রামীণ বসবাসের অবস্থা উন্নত ও কৃষকের আর্থিক ক্ষমতা বাড়বে। হংকংয়ের ‘সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট’ মন্তব্য করেছে, ‘ভবিষ্যতে গ্রামীণ পুনরুজ্জীবনকে সার্বিকভাবে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে চীন সরকারের অগ্রাধিকার বিষয়’। পত্রিকার সম্পাদকীয়তে বলা হয়,  কেন্দ্রীয় সরকারের পাঠানো সংকেত থেকে স্পষ্ট যে, চীনা নেতারা গ্রামাঞ্চল এবং সেখানে বসবাসরত লক্ষ লক্ষ মানুষকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেন।

দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিজয়ের তুলনায় গ্রামীণ পুনরুজ্জীবনের কৌশল বাস্তবায়ন কঠিন কাজ। যেসব এলাকা মাত্র দারিদ্র্যসীমার উপরে উঠেছে, সেসব এলাকার উন্নয়নের ভিত্তি তুলনামূলকভাবে দুর্বল। অনেক অঞ্চলে শিল্প উন্নয়নের সামষ্টিক মান তুলনামূলকভাবে নিম্ন। এসব অঞ্চলে আকস্মিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটলে, সেগুলো আবার দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাবে। অন্যদিকে, চীনের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে ও শহর ও নগরের মধ্যে উন্নয়নের পার্থক্য সুস্পষ্ট। চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুসারে, ২০২০ সালে গ্রামীণ বাসিন্দাদের মাথাপিছু নিষ্পত্তিযোগ্য আয়ের পরিমাণ জাতীয় গড় আয়ের অর্ধেক ছিল এবং শহরাঞ্চলের আয়ের মাত্র ৪০ শতাংশ ছিল।

দারিদ্র্যবিমোচনের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে গ্রামীণ পুনরুজ্জীবনের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। সুইজারল্যান্ডের ‘নিউ জুরিখ নিউজ’ উল্লেখ করেছে যে, ইন্টারনেটের উন্নয়নের ফলে ভোক্তাদের অভ্যাস পরিবর্তনের কারণে ‘ক্লাউড ইকনোমি’ চীনা কৃষকদের ধনী হওয়ার জন্য নতুন দিগন্ত উন্মুক্ত করেছে এবং গ্রামীণ উন্নয়নের জন্য বিশাল সুযোগ এনে নিয়েছে। অনলাইনে কৃষিপণ্য বিক্রির সুযোগ গ্রামাঞ্চলের কৃষকদের ভাগ্য পরিবর্তনের হাতিয়ার হয়েছে। ব্রিটেনের ‘দা গার্ডিয়ান’ মানবতাবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে গ্রামীণ পুনরুজ্জীবনকে পর্যবেক্ষণ করছে। চীনের চ্য চিয়াং প্রদেশের সুং ইয়াং জেলার উদাহরণ দিয়ে বলা হয়েছে, চীন প্রবলভাবে প্রাকৃতিক পর্যটন ও কৃষি পর্যটন উন্নয়ন করছে। লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিকস অ্যান্ড পলিটিকেল সায়েন্সের অধ্যাপক মিলানোভিচ বিশ্বাস করেন যে,  চীনের নগর ও পল্লী অঞ্চল এবং প্রদেশগুলোর মধ্যে ব্যবধান সঙ্কুচিত হচ্ছে। এই দুটি সূচক দেখায় যে, চীন সঠিক পথে রয়েছে।

চীন ১০ বছর আগে ‘জাতিসংঘের অবিরাম উন্নয়ন এজেন্ডা--২০৩০’ কার্যক্রমের দারিদ্র্যবিমোচনের লক্ষ্যটি বাস্তবায়ন করেছে। এটি মানবজাতির দারিদ্র্যবিমোচন খাতের মূল্যবান সম্পদ।  (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)