০৪২৬ ব্যবসা-বাণিজ্য
2021-04-27 11:21:39

ভোর ৫টায় যখন অধিকাংশ মানুষ ঘুমে, তখন ছোংছিং শহরের বিশান অঞ্চলের তাসিং জেলার লিয়ানশেং গ্রামের অধিবাসী ফেং শিচুন তাঁর কাজ শুরু করেন। কর্মীদের নিয়ে তিনি একের পর এক কাস্টমারদের অনলাইনে আগের দিন করা অর্ডারগুলি গণনা করেন।

 

“আজ খুবই ব্যস্ত এবং কঠিন একটি দিন যাবে। আমি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয় বলি, প্রথমত, সাবধানে গাড়ি চালাতে হবে...... ”

 

০৪২৬ ব্যবসা-বাণিজ্য_fororder___172.100.100.3_temp_9500041_1_9500041_1_1_303b4c4f-a088-4499-9b54-1512183dd27b

 

গাড়ির দল যাত্রা শুরুর আগে এভাবেই তিনি তাঁর কর্মীদের স্মরণ করিয়ে দেন।

 

ফেং শিচুনের কয়েকটি মালবাহী গাড়ি প্রতিদিনই আগের দিন আশপাশের কৃষকদের বাসা থেকে সংগৃতীত বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি এবং মাংস বহন করে আনে। এসব টাটকা কৃষিপণ্য ও আনুষঙ্গিক পণ্য তিনি প্রতিদিন সকালে ছোংছিংয়ের বিভিন্ন বড় প্রতিষ্ঠান, নির্মাণ এলাকার ক্যান্টিন, কাঁচা বাজার ও সুপারমার্কেটে পাঠান।

 

মাল পৌঁছানোর পর ফেং শিচুন দ্রুত অফিসে ফিরে যান। তিনি অনলাইনে সেদিনের অর্ডার চেক করেন। সকালেই সাধারণত কাস্টমারগণ বেশি  অর্ডার করে থাকেন।

 

চলতি বছর ফেং শিচুন ৪৯ বছর অতিক্রম করছেন। উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে স্নাতক হবার পর তিনি বিভিন্ন ধরনের কাজ করেছেন। তিনি পাচক হয়েছিলেন, রেস্তোঁরা খুলেছেন এবং ডেলিভারি কোম্পানিও খুলেছেন। ২০১৪ সালে যখন তাঁর বয়স ছিল ৪২ বছর, তখন তিনি জন্মস্থানে ফিরে পুনরায় শিল্প প্রতিষ্ঠা করেছেন। স্থিতিশীলতা খুঁজে বের করার বয়সে কেন জন্মস্থানে ফিরে এসেছেন? এর উত্তরে তিনি বলেন, জন্মস্থানের উন্নয়ন হয়েছে। এখানে সুযোগ আরো বেশি। কেন জন্মস্থানে ফিরে শিল্প প্রতিষ্ঠা করেছেন, এ সম্পর্কে ফেং শিচুন বলেন,

 

“মানুষ সব সময় নিজের জন্মস্থানের কথা ভাবে। আমাদের গ্রাম এখন আরো ভালো হয়েছে। গ্রামে সুযোগ অনেক বেশি। সেখানে আরো বেশি উন্নয়ন হচ্ছে। প্রতি বছরে নতুন পরিবর্তন হয়।”

 

জন্মস্থানে ফিরে ফেং শিচুন ভাড়া জমিতে আঙুর ও বড়ই চাষ করে ফার্ম হাউস তৈরি করেন। তাঁর নিজ গ্রামে অনেক বেশি আঙ্গুর চাষ হয়। কিন্তু সেখানের পণ্য বিক্রয় কঠিন সমস্যার সম্মুখীন। ফলে কৃষকরা সন্তুষজনক আয় করতে পারেন না। তাই তিনি সেখানে অফলাইন বিক্রয়ের পাশাপাশি অনলাইনে বিক্রির ব্যবস্থা করেন। তিনি প্রতিষ্ঠা করেন “চেরি গ্রামীণ অনলাই সুপারমার্কেট”।

 

ফেং শিচুন তাঁর আগের ডেলিভারি নেটওয়ার্ক কাজে লাগিয়ে পূর্বের কাস্টমারদের অনলাইন মার্কেটের সাথে সংযোগ করে দেন। বর্তমানে প্রায় ৩০টি বৃহদাকার প্রতিষ্ঠান তাঁর অনলাইন গ্রাহক।

 

ফেং শিচুনের সাহায্যে অনলাইনে গ্রামবাসীদের বিপুলসংখ্যক  কৃষিপণ্য বিক্রয় হয়। তাঁদের আয় ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। মাও লাই গ্রামের রেন থিংওয়েই ও উ ছুয়ানওয়ন দম্পত্তি তাঁদের মধ্যে অন্যতম। ফেং শিচুন রেন থিংওয়েই’কে বলেন,

০৪২৬ ব্যবসা-বাণিজ্য_fororder___172.100.100.3_temp_9500041_1_9500041_1_1_1ec34508-56fa-4607-a075-6ef69cd8d603

“ব্যস্ত আছেন? ম্যান্ডারিন কমলা তোলা হয়েছে? আরো তোলার বাকি আছে? চিন্তা করবেন না, আমরা আপনাদের সাহায্য করব।”

 

রেন থিংওয়েই দম্পত্তির বয়স প্রায় ৭০ বছর। তাঁদের ছেলেমেয়ে বাইরে কাজ করেন। বাড়ির জমিতে বড়ই, কমলা ও আঙুরসহ বিভিন্ন ফল তাঁরা চাষ করেন। কিন্তু তাঁরা সব সময় গ্রামে থাকেন। অনলাইন বিক্রয় সম্পর্কে তাঁরা ততটা জানেন না। ফলে তাঁদের আয়ও অস্থিতিশীল। খবর পেয়ে ফেং শিচুন দু’জনের কাছে এসে সহায়তার হাত প্রসারিত করেন। বৃদ্ধ উ ছুয়ানওয়েন বলেন, ফেং শিচুনের সাহায্য তাঁদের আর ছেলেমেয়ের আয়ের ওপর নির্ভর করতে হয় না। শুধু ফল বিক্রয় করার মাধ্যমে দম্পত্তির জীবনযাপন খুবই ভালো চলছে। উ ছুয়ানওয়েন বলেন,

 

“ফেং শিচুন আমাদের সাহায্য করেন। আমরা তাঁর সমর্থনের উপর নির্ভর করি। তিনি আমাদের জিজ্ঞাস করেছিলেন, এতো বেশি ফল আমরা বিক্রি করতে পারব কি না?”

০৪২৬ ব্যবসা-বাণিজ্য_fororder___172.100.100.3_temp_9500041_1_9500041_1_1_1017ee89-5c3f-46cf-a4e5-5bbb8004783f

অনলাইন প্ল্যাটফর্ম কাজে লাগিয়ে নিজের গ্রামবাসীদের কৃষিপণ্য ও আনুষঙ্গিক পণ্য বিক্রয় চ্যানেল সম্প্রসারণ করার পাশাপাশি তিনি আশপাশে ৩টি দরিদ্র গ্রামকে ডাইনিং চেম্বার অফ কমার্স ও ডাইনিং সমিতির সঙ্গে সংযুক্ত করেন। তিনি এসব দরিদ্র্য গ্রাম ও বাজারের মধ্যে “সংযোগকারী” হিসেবে কাজ করেন। বিক্রির প্রক্রিয়ায় তিনি বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়ে সর্বাধিক মাত্রায় দরিদ্র মানুষদের আয় রক্ষা করেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দরিদ্র গ্রাম ও দরিদ্র পরিবারের ৩১২.২৬ টনের ৮২.৯৮ লাখ ইউয়ানের কৃষি পণ্য বিক্রয় হয়। ফলে ৩০টিরও বেশি দরিদ্র পরিবার সাহায্য পায়।

 

প্রতিদিন ভোরে ডেলিভারি দেন। সকালে অর্ডারগুলি সংগ্রহ করেন এবং বিকেলে বিভিন্ন গ্রামে কৃষকদের কৃষি পণ্য সংগ্রহ করেন। সময় পেলে বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে কৃষকদের পরিস্থিতির খোঁজ খবর নেন। সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত মাল বিতরণ করতে থাকেন। এটাই ফেং শিচুনের প্রতিদিনের ব্যস্ত জীবন।

 

সূর্যাস্তের সময় প্রত্যেক পরিবারে রান্না শুরু হয়। কোম্পানিতে ফিরে যাবার পথে ফেং শিচুন বৃদ্ধ ইয়াংয়ের সাথে কথাবার্তা শুরু করেন। কয়েকটি ছোট ছাগল দেখে ফেং শিচুন বৃদ্ধ ইয়াং’কে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, চলতি বছরের শরত্কালে তিনি ছাগল কিনতে আসবেন।

 

“ভাই, আজকে শুধু ৪টি ছাগল? হ্যাঁ, জেলা থেকে কিনেছি। খুব ভালো প্রজাতির ছাগল। চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে বড় হবে, এখন একটু ছোট রয়েগেছে।” এটা ছিলো বৃদ্ধ ইয়াং এবং ফেং শিচুনের মধ্যকার কথাবার্তা।

০৪২৬ ব্যবসা-বাণিজ্য_fororder___172.100.100.3_temp_9500041_1_9500041_1_1_2a38ab27-9c71-42ac-aefc-5c4607cb3abb

অনলাইন বাণিজ্যের মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচন করে ফেং শিচুন শুধু নিজের জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করেছেন, তা নয়, বরং আশপাশে দরিদ্র্য কৃষকদের জীবনও পরিবর্তন করেছেন তিনি। একটি কম্পিউটার এবং কয়েকটি ছোট মালবাহী ট্রাক গ্রামীণ কৃষকদের বাইরের বাজারের সাথে সংযুক্ত করেছে। গ্রামের স্থানীয় পণ্য আরো জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে। কৃষকরা আরো ব্যস্ত হয়ে ওঠছেন। ফেং শিচুনের মতো আরো বেশি মানুষ “বাইরে গিয়ে উন্নয়ন করা” থেকে “জন্মস্থানে ফিরে এসে মালিক হওয়ার” পথ বেছে নিয়েছেন। তাঁরা গ্রাম পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ শক্তিতে পরিণত হচ্ছেন।

 

প্রেমা/এনাম