বন্ধুরা, গত বছর কোভিড-১৯ মহামারী গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। তবে চীনের সঙ্গে ইউরোপের কোনো কোনো দেশের বাণিজ্যের বেশি ক্ষতি হয়নি। কারণ, চীন-ইউরোপ রেলপথ। চীনা মানুষ ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগসংশ্লিষ্ট দেশগুলোর গরুর মাংস ও বেলারুশের আইসক্রিম খেতে পেরেছেন এসময় এই রেলপথের কল্যাণে। অথচ কোভিড-১৯ মহামারী প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের সময় এটা সহজ ছিল না।
জার্মানির কেক খেতে ভাল। হ্যেনান প্রদেশের রাজধানী জেংচৌ শহরের নাগরিক মিস্টার থান এ কথা বলেন। তিনি সবসময় ‘চীন-ইউরোপ রেলপথ’ অফলাইন শপিং মল থেকে খাবার কেনেন। তাঁর সন্তান বিদেশি স্ন্যাক খেতে পছন্দ করে। দুধ, চিপস, চকোলেট ছাড়াও তিনি জার্মানির কেক, পিজাও কেনেন। বৈদেশিক বাণিজ্য উন্নয়নের পাশাপাশি মহামারী প্রতিরোধব্যবস্থা কখনও শিথিল হয়নি। এ পরিস্থিতিতে বিদেশি খাবার পাওয়া সহজ নয়।
কঠোরভাবে আমদানি প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করা হয় এবং খাবারের মান নিশ্চিত করা হয়। চীনের রেলপথ গোষ্ঠীর জেংচৌ ব্যুরোর ফুথিয়ান স্টেশনের উপপ্রধান লি মিং এ কথা বলেন। স্টেশনটি সংশ্লিষ্ট কর্মী, শ্রমিক ও ড্রাইভারদের শারিরীক পরীক্ষা জোরদার করেছে। সবাই বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরেছেন।
হ্যেনান প্রদেশের গুরুত্বপূর্ণ পরিবহনব্যবস্থা হিসেবে চীন-ইউরোপ রেলপথের জেংচৌ শাখা ২০১৩ সালের ১৮ জুলাই চালু হয়। এ পর্যন্ত জেংচৌ থেকে হ্যামবুর্গ, মিউনিখ, লিয়েজ, মস্কো, হেলসিঙ্কি, ক্যাটওয়াইস, হ্যানয়, তাশখন্দ ও আলমাতি পর্যন্ত নয়টি লাইন গড়ে তোলা হয়েছে। বিশেষ করে, গত বছর কোভিড-১৯ মহামারীকালে চীন-ইউরোপ রেলপথের সুবিধা ব্যাপকভাবে উন্নত হয়েছে। বিমান ও নৌপরিবহনের বিকল্প হিসেবে কাজ করেছে এটি রেলপথটি। একই বছরে এ রেলপথে চলাচলকারী ট্রেনের সংখ্যা ছিল মোট ১২৪০৬টি।
এর মধ্যে জেংচৌ স্টেশন পর্যন্ত চীন-ইউরোপ রেলপথে চলাচলকারী ট্রেনের সংখ্যা ছিল ১১২৬টি, যা ২০১৯ সালের চেয়ে ১৩ শতাংশ বেশি। পরিবহনকৃত পণ্যের মূল্য ছিল ৪.৩০৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০১৯ সালের চেয়ে ২৭ শতাংশ বেশি।
লি মিং বলেন, চীন-ইউরোপ রেলপথ ও সম্পূর্ণ আন্তর্জাতিক বন্দরব্যবস্থা স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য প্রচুর বিদেশি পণ্যের যোগান সহজতর করেছে। এ ছাড়াও স্থানীয় ছোট বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, খুচরা যন্ত্রাংশ, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং বৈশিষ্ট্যময় খাদ্য ইউরোপে রপ্তানি হয়েছে। এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য অনেক বেড়েছে।
এদিকে, নতুন বছরে জেংচৌ থেকে আরও কয়েকটি লাইন চালু হয়েছে। হ্যেনান প্রদেশের আরও বেশি বিশিষ্ট্যসম্পন্ন পণ্য ইউরোপে রপ্তানি হতে পারে।
জেংচৌ চীন-ইউরোপ রেলপথের কেন্দ্রীয় স্টেশন হিসেবে চীনের মধ্যাঞ্চল থেকে গোটা চীনের সঙ্গে, এমনকি ইউরোপের বাজারের সঙ্গে বাণিজ্যিক সেতু গড়ে তুলেছে। ‘২০২০ সালে আমাদের কোম্পানির পণ্য পরিবহন হয়েছে মোট ৪৬ হাজার টনেরও বেশি, যা ২০১৯ সালের চেয়ে ৬০ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে মাস্ক ও মহামারী-প্রতিরোধকমূলক পোষাকসহ চিকিত্সা সামগ্রী ছিল ৮ হাজার টনের বেশি।’ শাংহাই থাইহুয়া পরিবহন এজেন্সি কোম্পানির জেংচৌ শাখার মহাব্যবস্থাপক খং ওয়েই দং এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ২০২১ সালে চীন-ইউরোপ বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষরের পর দু’পক্ষের বাণিজ্য আরও বাড়বে। তখন জেংচৌ থেকে ইউরোপের আরো বেশি জায়গায় যাওয়া যাবে। দু’পক্ষের আমদানি ও রপ্তানির পরিমাণও আরো বৃদ্ধি পাবে। চীনা নাগরিকরা আরো বেশি করে ইউরোপের খাবার খেতে পারবেন।