টানা লকডাউনে পথে বসার শঙ্কায় ক্ষুদ্র মাঝারি উদ্যোক্তরা
2021-04-23 16:06:42

আজহার লিমন
ঢাকা, এপ্রিল: সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে দ্বিতীয় দফা লকডাউন ঘোষণার পরই ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশের প্রায় সবগুলো বড় নগরীর ব্যবসায়ীদের এর প্রতিবাদ করতে দেখা যায়। কোথাও কোথাও শপিংমল, শো-রুমসহ দোকানপাট খোলা রাখার দাবিতে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন ব্যবসায়ীরা। আর এসব বিক্ষোভে মালিক ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সমানভাবে অংশ নেয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাজ করা কর্মীরাও।
এরপর সরকারি সিদ্ধান্তে শর্তসাপেক্ষে নির্ধারিত সময়ের জন্য শপিংমল, মার্কেট খোলা থাকে কয়েকদিন। কিন্তু দেশব্যাপী সরকারঘোষিত চলমান লকডাউনে আবার বন্ধ আছে জরুরি প্রয়োজন বাদে সবধরনের দোকানপাট। 
সর্বাত্নক এ লকডাউন বাধ্য হয়ে মেনে নিলেও ব্যবসায়ীরা বলছেন উৎসবকেন্দ্রিক ব্যবসা হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার ভয়ে প্রতিটি দিন কাটছে তাদের শঙ্কায়। দেশের বাজারে মাঝারি মানের তৈরি পোশাক বিপণন প্রতিষ্ঠান মিরর আউটফিটার্সের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মোহাম্মদ মাইনুল ইসলাম বলছিলেন, এই লকডাউনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও নতুন উদ্যোক্তরা।

টানা লকডাউনে পথে বসার শঙ্কায় ক্ষুদ্র মাঝারি উদ্যোক্তরা_fororder_j2

মো. মাইনুল ইসলাম,সদস্য, বোর্ড অব ডিরেক্টর মিরর আউটফিটারস প্রাইভেট লিমিটেড

তিনি বলেন, “২০০১ সালে আমরা ১টা শো রুম দিয়ে পোশাক বিপণন সেবা শুরু করেছিলাম। কিন্তু এখন আমাদের শোরুমে সংখ্যা ৬টি। যদি জানতে চান তাহলে বলবো এই অগ্রগতির একটা বড় অংশ জুড়ে আছে আমাদের ঈদের বিক্রি। আসলে তৈরি পোশাকে ব্যবসাটা এমন যে সারাবছর ব্রেক ইভেনে থাকে। এই ঈদের বিক্রিটার মাধ্যমেই আমরা লাভের মুখ দেখি। তাই এবার যদি আমরা ঈদটা না করতে পারি আমরা পথে বসে যাবো। আমরা গত ঈদটা করতে পারি নাই। গত ঈদে আমাদের টোটাল ইনভেস্ট ছিলো, তাতে লোনের টাকা ছিলো। লোনের ইন্টারেস্ট আমরা এখনও টেনে যাচ্ছি। এমন কি নতুন করে এবার আবার ইনভেস্টও করেছি। কিন্তু কোন আউটকাম নেই”

তরুণ এ ব্যবসায়ী বলছিলেন, এর ক্ষতির প্রভাবটা শুধু মালিক বা ব্যবসায়ীদের ওপর পড়ছে না। এর প্রভাব পড়ছে তাদের কর্মীবাহিনীর ওপরও।বাধ্য হয়েও অমানবিক হলেও তাদের শ্রমিক ছাটাইযের মত সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।

মাইনুল ইসলামের মত এমন শঙ্কা দেশের মাঝারি থেকে ক্ষুদ্র প্রায় সবধরনের বিপণন প্রতিষ্ঠানে। ব্যবসায়ীদের অভিজ্ঞতা,বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে উৎসবকেন্দ্রিক বেতন বোনাসকে নির্ভর করে ঈদকেন্দ্রিক বাজারেই ক্রেতাদের চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। আর এতে চক্রাকারে সম্পর্কিত বিক্রেতার রুটি রুজিও।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার সুব্রত সরকার বলেন, “ এই লকডাউন শোরুম বেইজ যারা ব্যবসা করে, তাদের সবাইকে নাড়া দিয়েছে। আমাদের প্রতিটি কর্মীকে বেতন দিতে হয়, বোনাস দিতে হয়। নিজেদের যখন এ অবস্থা সেটা দিবো কী করে”।

আর এলিফ্যান্ট রোডের আমজাল টেইলার্স এর  কর্ণধার মো. আমজাদ হোসেন বলেন, “প্রতিমাসে ঋণগ্রস্থ হয়েই যাচ্ছি আর কি। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের বসে যেতে হবে, গ্রামে চলে যেতে হবে।”

যদিও মহামারি পরিস্থিতিতে যাতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলো টিকে থাকতে পারে সে লক্ষ্যে গেল সরকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণ করে তার একটি ছিলো ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য। এ প্যাকেজের ২০ হাজার কোটি টাকা ৪ শতাংশ হারে ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য রাখা হয়। কিন্তু দেশের লাখ লাখ ক্ষুদ্র মাঝারি প্রতিষ্ঠানের তুলনায় এ প্রণোদনা যারপরনাই অপ্রতুল। তৈরি পোশাক বিপণনের তরুণ উদ্যোক্তা লিবাজের চেয়ারম্যান মো. ফাইজুল হক বলছেন,ঘোষণা থাকলেও এসব প্রণোদনা প্রাপ্তি মোটেও সহজ না মাঝারি ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য।

তিনি বলেন, “প্রণোদনা তো একধরনের ঋণ। আমরা ব্যবসাই শুরু করেছি ১ বছর হয় নি। সরকারি এ সুবিধা পেতে কোথায় যেতে হবে, কীভাবে আবদেন করতে হবে, মোটকথা আমাদের মত ছোট ব্যবসায়ীদের এসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করা কিংবা শেষমেষ পাওয়া এটা খুবই দুরুহ।”

 

টানা লকডাউনে পথে বসার শঙ্কায় ক্ষুদ্র মাঝারি উদ্যোক্তরা_fororder_j3

ফাইজুল হক, চেয়ারম্যান, লিবাজ


সবমিলিয়ে বাংলাদেশের ঈদকেন্দ্রিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর পুঁজি হারানোর শঙ্কা এবং এর সঙ্গে জড়িত বিরাট এক জনগোষ্ঠীর জীবিকা আর অপরদিকে মহামারির ভাইরাসের কবল থেকে জীবন বাঁচানোর চ্যালেঞ্জে সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে যে সামনের দিনগুলোতেও বেগ পেতে হবে তা বলাই যায়।
আজহার লিমন। চীন আন্তর্জাতিক বেতার। ঢাকা।