যুক্তরাষ্ট্রের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর জন্য এখনও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়নি: সিএমজি সম্পাদকীয়
2021-04-22 15:34:42

যুক্তরাষ্ট্রের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর জন্য এখনও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়নি: সিএমজি সম্পাদকীয়_fororder_0422yang1

এপ্রিল ২২: তিন সপ্তাহ ধরে বিচারকার্য চলার পর, যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা রাজ্যের মিনিয়াপোলিস শহরের আদালতে গত মঙ্গলবার সাবেক মার্কিন পুলিশ ডেরেক চভিনের বিরুদ্ধে আনা আফ্রিকান-আমেরিকান জর্জ ফ্লয়েডকে হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে; চভিন দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।

এর পরপরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এক ভাষণে বলেন, এ রায় যুক্তরাষ্ট্রে রীতিবদ্ধ বর্ণবাদ দমনের পথে একটি ‘বড় অগ্রগতি’। কিন্তু অনেকের মতে, এ রায়ের মাধ্যমে চভিন নিজের অপরাধের দায় গ্রহণে বাধ্য হয়েছেন মাত্র, কিন্তু ফ্লয়েড ন্যায়বিচার পাননি। মার্কিন রাজনীতিবিদের নেতিবাচক কথাবার্তা, সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বর্ণবাদী আচরণ, ও পুলিশের সহিংসতা বন্ধ হলেই কেবল আসল ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।

বস্তুত কয়েক শতাব্দীর দমনমূলক ব্যবস্থার কারণে বর্ণবাদ ইতোমধ্যে মার্কিন সংস্কৃতির মধ্যে ঢুকে গেছে। এটা একটি-দুটি সঠিক বিচারের মাধ্যমে দূর করা যাবে না। নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে প্রকাশ, গত ৩ সপ্তাহে সারা যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ প্রতিদিন গড়ে ৩ জনকে হত্যা করে। তাদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি আফ্রিকান-আমেরিকান বা ল্যাটিনো। আরও দুঃখের বিষয়, চভিনকে দোষী সাব্যস্ত করার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ওহাইও রাজ্যে একজন ১৫ বছর বয়স্ক আফ্রিকান-আমেরিকান মেয়ে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান।

ফ্লয়েডের ঘটনা সারা বিশ্বে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে ঢেউ সৃষ্টি করেছে। কিন্তু, তা মার্কিন পুলিশের মধ্যে যেন কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি।

বস্তুত, যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনার ঘটনা বিরল। আর দোষী সাব্যস্ত হওয়ার ঘটনা তো আরও কম। মার্কিন বোলিং গ্রিন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞানী ফিল স্টিনসনের তৈরী পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৫ সাল থেকে কয়েক হাজার পুলিশি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মাত্র ১৪০ জন পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে এবং মাত্র ৭ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে ফ্লয়েডের বিচারকে কি ‘বিজয়’ বলা যায়?

যুক্তরাষ্ট্রের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর জন্য এখনও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়নি: সিএমজি সম্পাদকীয়_fororder_0422yang1-2

ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে, মার্কিন ব্যবস্থা ও সংস্কৃতির একটি অংশ হিসেবে ‘শ্বেতাঙ্গরা সেরা’—এই  মনোভাব বর্ণবাদের মূল উত্স। মার্কিন স্কলার মারি ব্রাউন তার রচনা ‘ইমার্জেন্ট স্ট্র্যাটাজি’তে বলেছেন, ‘আমরা একটি কল্পিত যুদ্ধের মধ্যে আছি। অনেক কালো মানুষ মারা যায়, কারণ শ্বেতাঙ্গ মানুষের কল্পনায় তারা খুব বিপজ্জনক।’

চভিনের আইনজীবীর কথা থেকে একটি ভয়ংকর বাস্তবতা প্রতিফলিত হয়েছে। ৪০০ বছর ধরে আফ্রিকান-আমেরিকানদের কলঙ্কিত করে আসা হচ্ছে। তাদের গায়ে ‘শক্তিশালী’, ‘রাগী’, ‘অপরাধী’ ইত্যাদি লেবল লাগানো হয়েছে। এটা যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদের অন্যতম মূল কারণ।

ফ্লয়েডের পরিবারের আইনজীবী স্টুয়ার্ট বলেন, ‘আফ্রিকান-আমেরিকানদের সাধারণত বর্শা ও তরবারি দেওয়া হয়। আসলে আমাদের বেশি ঢাল দেওয়া উচিত।’ এ অর্থে ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডের বিচার মার্কিন বর্ণবাদের আচ্ছাদন নয়, বরং  একটি ‘সোবার’ ওষুধ হওয়া উচিত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘রীতিবদ্ধ বর্ণবাদ হলো মার্কিন চেতনার জন্য কলঙ্কস্বরূপ।’ একবারের ন্যায়বিচার দিয়ে তাকে পরিষ্কার করা যাবে না। মার্কিন সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর প্রত্যাশিত ন্যায়বিচার এখনও প্রতিষ্ঠিত হওয়া বাকি। (ইয়াং/আলিম/ছাই)