সংবাদ পর্যালোচনা: আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার ও বাস্তবতা
2021-04-21 12:38:05

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত বুধবার ঘোষণা করেন যে, আফগানিস্তানে মোতায়েন মার্কিন বাহিনী আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের আগে সে দেশ থেকে ফিরে যাবে। এর মাধ্যমে মার্কিন ইতিহাসের দীর্ঘতম যুদ্ধের অবসান ঘটতে যাচ্ছে। বিশ বছর আগে তালিবানকে আফগানিস্তানের ক্ষমতা থেকে উত্ক্ষাত্ করে মার্কিন বাহিনী যে আফগানিস্তান তৈরি করেছে তা একেবারেই ভিন্ন একটি দেশ। আফগানিস্তানের অনেকেই মনে করেন যে, মার্কিন এই সিদ্ধান্তে তালিবানরা উদ্দীপ্ত হবে এবং দেশজুড়ে ফের আফগান সরকার ও তালিবানের মধ্যে সংঘাত বাড়বে। বিস্তারিত শুনুন আজকের সংবাদ পর্যালোচনায়।

 

আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র ও নেটো জোটের নেতৃত্বে প্রায় ১০ হাজার বিদেশি সেনা রয়েছে। এর মধ্যে মার্কিন সৈন্যের সংখ্যাই আড়াই হাজারের বেশি। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত দুই দশকে আফগানিস্তানের নানা যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে প্রায় দুই হাজার মার্কিন সেনা এবং ১০ হাজার বেসামরিক আফগান নাগরিক। তা ছাড়া আফগানিস্তান যুদ্ধ মার্কিন ইতিহাসের দীর্ঘতম যুদ্ধ এবং এই যুদ্ধে তারা হাজার হাজার কোটি ডলার খরচ করেছে। এ সময়ে আফগানিস্তানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বাস্তবায়ন না হলেও সেখানে বিভিন্ন অস্ত্রধারী গোষ্ঠীর উদ্ভব হয়েছে দেশের মধ্যে সহিংসতার মাত্রা বেড়েছে।

সেন্য প্রত্যাহারের ব্যাপারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে টেলিফোন আলাপে আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্তকে  সম্মান ও স্বাগত জানায় কাবুল।

সম্প্রতি যে নতুন সময়সীমা উল্লেখ করা হলো- তা হচ্ছে ২০ বছর আগে অর্থাৎ ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ও পেন্টাগনের ওপর চালানো সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে মিল রেখে।

এখন প্রশ্ন হলো, সেনা প্রত্যাহারের পর দেশটি কি শান্তির পথে অগ্রসর হবে? নাকি আফগানিস্তানে ফের সহিংসতা বাড়বে। ২০ বছর আগে তালিবানকে ক্ষমতা থেকে উত্ক্ষাত করে যে অনুগত সরকারকে ক্ষমতায় বসানো হয়, তাকে মেনে নেওয়ার কোনো প্রতিশ্রুতি তালিবান দেয় নি। তা ছাড়া, তালিবানকে প্রতিহত করতে আফগান সরকার এখনও মার্কিন বিমান হামলার ওপর নির্ভরশীল। এ অবস্থায় দেশটি ফের সহিংসতায় পড়তে যাচ্ছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

কাবুল ইন্সটিটিউট অফ ওয়ার এন্ড পিস স্টাডিজের নির্বাহী সভাপতি তামিম আস গণমাধ্যমে এক সাক্ষাত্কারে বলেন, “আশা করা যায়, সেনা প্রত্যাহারের এই সময়সীমা ঘোষণার ফলে একটা রাজনৈতিক সমঝোতায় পৌঁছানোর লক্ষ্যে আফগান দলগুলোর ওপর চাপ তৈরি হতে পারে অথবা সিরিয়ার মতো রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধও শুরু হয়ে যেতে পারে।"

 

হোয়াইট হাউস অবশ্য বলেছে, সেনা ফিরিয়ে নিলেও আফগান সেনাদের প্রশিক্ষণ, নিরাপত্তা ও মানবিক সহায়তা দিতে কাবুলের পাশে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া তালিবান ও আফগান সরকারের মধ্যে চলমান শান্তি আলোচনা এগিয়ে নেওয়ারও ঘোষণা দেয় হোয়াইট হাউস।

গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে যে চুক্তি সই হয়েছিল তাতে বলা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও নেটো ১৪ মাসের মধ্যে তাদের সব সৈন্য প্রত্যাহার করে নেবে যদি তালেবান হামলা না করার ব্যাপারে তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি বজায় রাখে।

একই সাথে তালিবানের পক্ষ থেকে তাদের হাজার হাজার বন্দীকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছিল। এরপর ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দোহায় সরাসরি শান্তি আলোচনা শুরু হয়, কিন্তু এখনও কোন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি। সমঝোতার পর তালিবান বিদেশি সেনাদের ওপর হামলা বন্ধ রাখলেও তারা আফগান সরকারের ওপর আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।

 

এদিকে তালিবান কিন্তু গত মাসে হুমকি দেয় যে, ১লা মে থেকে যেসব বিদেশি সেনা আফগানিস্তানে থাকবে তাদের ওপর পুনরায় হামলা শুরু হবে। তবে, এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন ১লা মে’র মধ্যে সব সেনা প্রত্যাহার করা বেশ কঠিন হবে।

তাই আশঙ্কা করা হচ্ছে, কার্যকর কোনো সমঝোতা হওয়ার আগেই দেশটি থেকে বিদেশি সেনা প্রত্যাহার করা হলে তালিবানরা অস্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করতে পারে।

বাস্তবতা হলো মার্কিন চাপ বা আগ্রাসনের কারণে বিশ্বের অনেক দেশে নিজস্ব রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারেনি, অথবা যেসব দেশ মার্কিন প্রেস্কিপশনে পশ্চিমা ধাঁচের সরকার ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছে। এ কারণে সেসব দেশ দীর্ঘমেয়াদী সহিংসতা ও আর্থ-রাজনৈতিক জটিলতায় ভুগছে। বর্তমান আফগানিস্তান তার সর্বশেষ জলন্ত উদাহরণ।