চিনাবাদাম অসাধারণ স্বাদের একটি খাবার। তবে শুধু স্বাদের জন্য নয়, বিশ্বজুড়ে এটি জনপ্রিয় এর পুষ্টিগুণের কারণেও। নানা পুষ্টিগুণে ভরপুর বলে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিকারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চিনাবাদাম। স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের অন্যতম উৎস এই বাদাম। প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়ামও মেলে চিনাবাদামে। শরীরে ম্যাগনেসিয়ামের পরিমাণ ঠিক থাকলে ইনসুলিনের সঠিক কার্যক্রম বজায় থাকে। এছাড়া চিনাবাদামে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। ফাইবারযুক্ত খাবার খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য সারে। আবার আর্জিনাইন ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের সঙ্গে মিলে এই ফাইবার হৃদরোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে। চিনবাদামে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-ই ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বা বিষাক্ত চাপ থেকে কোষকে রক্ষা করে। তাই ক্যানসারের ঝুঁকি কমে। বিপাকের হার বাড়িয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে চিনাবাদাম।
জানিয়ে দিচ্ছি চিনাবাদাম খাওয়ার উপকারিতা:
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: বাদামে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ফলে নানা রকম সংক্রমণের হাত শরীর পায়। এছাড়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বা বিষাক্ত চাপ-সংক্রান্ত ক্ষতি থেকে কোষে রক্ষা করে। সেই সঙ্গে ত্বকের ও শরীরের বয়স কমাতেও সাহায্য করে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
খারাপ কোলেস্টেরল কমায়: শরীরের মাত্রাধিক কোলেস্টেরল হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ওজন বৃদ্ধি ও ডায়াবেটিসের মতো কঠিন রোগ সৃষ্টি করে। বাদামের অসাধারণ কার্যকরী ফ্যাট শরীর থেকে খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। এটি শরীরের চর্বি কমাতেও সাহায্য করে। সেই সঙ্গে কমায় হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও। আমেরিকান জার্নাল অব নিউট্রিশন বলছে, নিম্নঘনত্বের লিপোপ্রোটিন বা খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে নিয়মিত চিনাবাদাম খেলে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে: বাদামে উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, শরীরে এই খনিজটির ঘাটতি দেখা দিলে অল্প সময়ের মধ্যেই রক্তচাপ মারাত্মকভাবে বেড়ে যেতে পারে। আর বেশি দিন যদি রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে, তাহলে হঠাৎ করে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ও কিডনির সমস্যা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকে।
ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে: বাদামে থাকা ম্যাগনেসিয়াম রক্তে উপস্থিত শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ফলে ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণার ফলে দেখা গেছে, নিয়মিত বাদাম খেলে টাইপ-২ ডায়াবিটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় ২৫-৩৮ শতাংশ কমে যায়।
হাড়ের স্বাস্থ্য ভাল করে: বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, বাদামে থাকা ফসফরাস শরীরে প্রবেশ করার পর এমন কিছু কাজ করে যার প্রভাবে হাড়ের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। তাই প্রতিদিন বাদাম খেলে হাড়ের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।
মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ায়: আমেরিকার অ্যান্ড্রস ইউনিভার্সিটির গবেষকদের দ্বারা পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাদামে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা কগনিটিভ অ্যাবিলিটি বা মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
পুষ্টি-ঘাটতি দূর করে: বাদামে থাকা প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন ই, ফসফরাস ও ম্যাগনেসিয়াম শরীরের পুষ্টিঘাটতি কমাতে সাহায্য করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে একাধিক জটিল রোগকে দূরে রাখতেও এই উপাদানগুলো সাহায্য করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে: বাদাম খাওয়ার পর খিদে একেবারে কমে যায়। ফলে মাত্রাতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা হ্রাস পায়। সেই সঙ্গে শরীরে প্রয়োজন অতিরিক্ত ক্যালোরি জমে ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনাও কমে।
কোষের ক্ষমতা বাড়ায়: বাদামে থাকা ভিটামিন ই শরীরের প্রতিটি কোণায় ছড়িয়ে থাকা কোষের কর্মক্ষমতার বাড়ায়। এর ফলে বয়স বাড়লেও শরীরের উপর তার তেমন প্রভাব পড়ে না।
পিত্তথলির পাথর সমস্যা দূর করে: যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ডায়াবিটিস অ্যান্ড ডাইজেসটিভ অ্যান্ড কিডনি ডিজিজের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পিত্তথলির পাথরের সমস্যাও ২৫ শতাংশ কমে রোজ অন্তত একটি কাঁচা চিনাবাদাম ভিজিয়ে খেলে।
(রহমান / আনন্দী)