সিনচিয়াংয়ে বাধ্যতামূলক শ্রমের মাধ্যমে তুলা চাষের অভিযোগ ও বাস্তবতা
2021-04-16 16:36:24

চীনের সিনচিয়াং নিয়ে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা জগতের একটার পর একটা অভিযোগ দেখা যায়। বরাবরের মতো এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে কোনো প্রমাণ দেখায় না পশ্চিমারা। চীন বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে। কিন্তু এসব অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্বের কিছু প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্র চীনা কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয় যা বৈশ্বিক আর্থ-বাণিজ্যিক-রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করে। বাস্তবতা হলো, গবেষণা ও বিশ্লেষণের পর দেখা যায়, এসব অভিযোগ একেবারেই ভিত্তিহীন। যেসব প্রতিষ্ঠান এসব অভিযোগ করছে, তারা মূলত যুক্তরাস্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর অর্থায়নে পরিচালিত ষড়যন্ত্রকারী সংস্থা। বিস্তারিত শুনুন আজকের সংবাদ পর্যালোচনায়।

গত ডিসেম্বরে মার্কিন গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর গ্লোবাল পলিসি’র এক রিপোর্টে দাবি করা হয়, চীনের সিনচিয়াং প্রদেশের উইঘুর মুসলিমদের বলপূর্বক দাসে পরিণত করা হয়েছে। ৭০ হাজার উইঘুর মানুষকে জোর করে তুলা চাষে বাধ্য করা হয়েছে। হাস্যকর বিষয় হলো- এই অভিযোগের কোনো প্রমাণ দেখানো হয়নি। তবে তুলা ক্ষেত বা কারখানায় কাজ করা শ্রমিকদের ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। 

চীনের সিনচিয়াং প্রদেশে গোটা বিশ্বের ২০ শতাংশ তুলা উৎপাদন করা হয়। চীনের এই তুলা নিজের চাহিদা পূরণ করা এবং বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হয়। বিখ্যাত বিদেশি ব্র্যান্ড যেমন- অ্যাডিডাস, নাইকো, গ্যাপের মতো সংস্থা সিনচিয়াংয়ের তুলা কিনে থাকে। মার্কিন এই অভিযোগের পর এসব প্রতিষ্ঠান বাধ্য হয়ে চীন থেকে তুলা কেনার ব্যাপারে সতর্ক হয়েছে ও নানা নেতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া ছুন ইং এ বিষয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, এটা যুক্তরাষ্ট্রের একটা পুরানো ছবি, যেখানে তুলা চাষে কৃষ্ণাঙ্গদের বাধ্যকরা হতো। আমি সিনচিয়াংয়ে  তুলা চাষের ছবি দেখেছি। সেখানে ৪০ শতাংশের বেশি তুলা স্বয়ংক্রিয় মেশিনে তোলা হয়। তথাকথিত শ্রমিকদের জোর করার মতো কোনো ঘটনা সেখানে নেই। কিছু প্রতিষ্ঠান এ গুজব বিশ্বাস করেছে। যা তাদের নিজস্ব বিবেচনা। তবে আমি বিশ্বাস করি চীনা নাগরিকদের তাদের অনুভূতি ও মতপ্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা আছে।'

এদিকে, সম্প্রতি সিনচিয়াংয়ের খাশি স্থানীয় আদালত একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় আসামী করা হয় জার্মানির চীন-বিরোধী তথাকথিত গবেষক অ্যাড্রিয়ান জেন্সকে। সিনচিয়াংয়ের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো তাঁর বিরুদ্ধে সিনচিয়াং নিয়ে মিথ্যাচারের অভিযোগে এ মামলা দায়ের করে।

তদন্তের পর দেখা গেছে জার্মান ওই ব্যক্তি বহু বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার অর্থায়নে পরিচালিত একটি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত। তিনি চীনের বিরুদ্ধে মনগড়া নানা অভিযোগ করে আসছেন। আর তার সেসব অভিযোগকে ভিত্তি করে চীনের বিরুদ্ধে আর্থ-রাজনৈতিক নানা পদক্ষেপ নিয়েছে পশ্চিমা গোষ্ঠী।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই’র সাবেক অনুবাদক সিবেল এডমোন্ডজের ২০১৫ সালের একটি সাক্ষাত্কার প্রকাশিত হয়েছে। এতে সিনচিয়াং নিয়ে গুজব তৈরি করে চীনকে চাপিয়ে রাখার যে মার্কিন অপকৌশলে লিপ্ত রয়েছে, তা প্রমাণিত হয়।

সাক্ষাত্কারে এডমোন্ডজ বলেন, “আমরা বলেছি, সিনচিয়াংয়ের সংখ্যালঘু জাতির নিজের ভূমি নেই, চীন সরকার তাদের হত্যা ও অত্যাচার করছে। আমরা সেখানে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করতে চাই। আমরা আসলে সেখানকার মানুষের জন্য ভাবছি না। কারণ তারা আমাদের স্বার্থের বাইরে। তাদের আমরা কাজে লাগাতে পারি, তাই তাদের ব্যবহার করছি।”

এর মধ্যেও পশ্চিমা জগতের সচেতন কোনো মানুষ চীন ইস্যুতে সত্য বক্তব্য তুলে ধরলে তাদেরকে শাস্তি পেতে হয়েছে। যেমন, সম্প্রতি ফ্রান্সের এক বিখ্যাত বিশেষজ্ঞ ও স্ট্রাসবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপককে সিনচিয়াং সম্পর্কিত সত্য বলার কারণে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার একজন সাংসদ কথিত ‘সিনচিয়াং গণহত্যা’কে মিথ্যাচার বলে অভিহিত করলে, তাঁকেও অযৌক্তিকভাবে অস্ট্রেলিয়ার নিরাপত্তা বিভাগের অনুসন্ধানের সম্মুখীণ হতে হয়।

সিনচিয়াং ইস্যুতে পশ্চিমারা ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যাচার করে ও মনগড়া গল্প বানায়। তদন্তের পর বোঝা যায় যে, এসব সাক্ষী আসলে চীন-বিরোধী শক্তিদের ভাড়া করা এজেন্ট। বাস্তবতা হলো- মিথ্যাচার ও গুজব তৈরি করা হচ্ছে পশ্চিমাদের চীনবিরোধী শক্তির প্রধান কৌশল। তারা কোনো রকম প্রমাণ ছাড়াই মিথ্যাচার তৈরি করে এবং গুজব ছড়ায়। তারপর পশ্চিমা কিছু মিডিয়া ও রাজনীতিক এসব নিয়ে রাজনীতি করে। সিনচিয়াংয়ের স্থিতিশীতা ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে এবং চীনের উন্নয়নে বাধা দিতে তারা এসব অপচেষ্টা চালায়।