সংবাদ পর্যালোচনা: ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগে আফ্রিকার দেশগুলোর যোগদান পরিকল্পনা ‘এজেন্ডা-২০৬৩’ নতুন চালিকাশক্তি যুগিয়েছে
2021-04-16 14:03:35

এপ্রিল ১৬: ‘এজেন্ডা-২০৬৩’কে আফ্রিকার দেশগুলোর গ্র্যান্ড ব্লুপ্রিন্ট বলা হয়। এটা হলো ভবিষ্যতের উন্নয়ন প্রসঙ্গে আফ্রিকান জনগণের পরিকল্পনা ও আশা-আকাঙ্ক্ষা। ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি ও সমাজের উন্নয়ন এবং জাতিসংঘের এজেন্ডা-২০৩০ বাস্তবায়নের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে। ২০২০ সালের শেষ দিকে চীন ও আফ্রিকান ইউনিয়ন ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ এগিয়ে নিতে সহযোগিতা প্রকল্পে স্বাক্ষর করে। ফলে যৌথভাবে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের নির্মাণ কাজ এবং আফ্রিকান ইউনিয়নের এজেন্ডা-২০৬৩’র গভীর সংযোগ এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।

গত ৭ জানুয়ারি চীনের রাষ্ট্রীয় কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বোজওয়ানায় সফরকালে দেশটির সঙ্গে যৌথভাবে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ নির্মাণে সহযোগিতা স্মারক স্বাক্ষর করেন। ফলে চীনের সঙ্গে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগে আফ্রিকার ৪৬তম অংশীদার দেশে পরিণত হয় বোজওয়ানা।

আফ্রিকা হলো ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ সহযোগিতার অপরিহার্য অংশ। বর্তমানে আফ্রিকার ৪০টিরও বেশি দেশ এবং আফ্রিকান ইউনিয়ন কমিটি চীনের সঙ্গে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ সহযোগিতা দলিল স্বাক্ষর করেছে।

‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের আওতায় আফ্রিকায় সড়ক, রেলপথ, বিমান, নৌবন্দর ও বিদ্যুত্ কেন্দ্রসহ একগুচ্ছ প্রকল্প সফলভাবে চালু হয়েছে। যা আফ্রিকার অর্থনীতি ও সমাজ উন্নয়নে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে।

চীন টানা ১১ বছর ধরে আফ্রিকার বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার দেশ এবং আফ্রিকায় বিনিয়োগকারী প্রধান দেশ। টানা কয়েক বছর ধরে আফ্রিকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে চীনের অবদান ২০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।

জাতিসংঘের উপ মহাসচিব ও জাতিসংঘে আফ্রিকার অর্থনৈতিক কমিশনের নির্বাহী সচিব ভেরা সোংউই মনে করেন, আফ্রিকা ও চীনের আন্তঃযোগাযোগের মান অব্যাহতভাবে বৃদ্ধির ফলে ভবিষ্যতে আরো বেশি আফ্রিকান কৃষিজাত পণ্য চীনের ই-বাণিজ্যিক প্ল্যাটফর্মে দেখা যাবে। এর মাধ্যমে আরো বেশি আফ্রিকান কৃষক দারিদ্র্যমুক্ত হবে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন,

 ‘রুয়ান্ডার কফি ও মরিচ ইতোমধ্যে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে হাজির হয়েছে। আমরা আশা করি, আফ্রিকার দেশগুলোর আরও বেশি পণ্য ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে পাওয়া যাবে। যেমন, মালির সাদা মরিচ, মাদাগাস্কারের জাফরান, কুমোরিয়ান ভ্যানিলা ইত্যাদি। মহামারীর কারণে বিশ্ব বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এই বিশেষ সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এভাবে চীন ও বিশ্বের সাথে যৌথভাবে সমৃদ্ধ হবে আফ্রিকা।’

চলতি বছর চীনের চতুর্দশ পাঁচশালা পরিকল্পনার প্রথম বর্ষ।  আফ্রিকান দেশগুলো গত পহেলা জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে আফ্রিকা মহাদেশে ফ্রি ট্রেড জোন নির্মাণের কাজ শুরু করে। পাশাপাশি আফ্রিকান ইউনিয়ন এজেন্ডা-২০৬৩’র প্রথম দশ বছরের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছে। মিশরের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এসাম শারাফ বলেন, ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ আফ্রিকান দেশগুলো তথা আন্তর্জাতিক সমাজের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে। তিনি বলেন,

 “‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ মিশরসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর সমাজ ও অর্থনীতি উন্নয়ন এবং জীবিকা উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। এই উদ্যোগ একচেটিয়ার ধরনের বিশ্বায়ন নয়। বরং, অনেক দেশ- বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর বহুপক্ষবাদ ও ন্যায়সঙ্গত পরিচালনার কাঠামোতে নিজ নিজ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি বাস্তবায়নের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ পদক্ষেপ। গোটা বিশ্বে এখন আস্থার সংকট রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ আন্তর্জাতিক সমাজের ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে এবং বিরাট সাফল্য লাভ করেছে।’

(লিলি/তৌহিদ/শুয়েই)