চীনের থাই হাং পর্বতাঞ্চলে দু’জন গ্রামীণ কর্মকর্তার কাহিনী
2021-04-16 16:38:07

চীনের থাই হাং পর্বতাঞ্চলে দু’জন গ্রামীণ কর্মকর্তার কাহিনী সবাই জানে। তারা সারা জীবন গ্রামের দারিদ্র্যবিমোচন এবং পুনরুদ্ধার কাজ করেছেন। তাদের একজনের নাম উ জিন ইন এবং চাও হুয়া লু। তারা গ্রামের সিপিসি’র সম্পাদকের পদে টাকা ৫৩ বছর ও ২৩ বছর ধরে কাজ করেছেন।

চীনের থাই হাং পর্বতাঞ্চলে দু’জন গ্রামীণ কর্মকর্তার কাহিনী_fororder_wu

উ জিন ইন- সবার কাছে পরিচিত। ৫৩ বছর ধরে তিনি গ্রামের সিপিসি’র সম্পাদকের পদে নিরলসভাবে কাজ করেছেন। তিনি তাঁর থাং চুয়াং গ্রামকে দারিদ্র্যমুক্ত করেছেন, ধনী হওয়া ও উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়েছেন। তাকে ‘গ্রামের সিপিসি’র সম্পাদকের দৃষ্টান্ত’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।

চীনের থাই হাং পর্বতাঞ্চলে দু’জন গ্রামীণ কর্মকর্তার কাহিনী_fororder_zhao

চাও হুয়া লু- হলেন নতুন যুগে ‘উ জিন ইনের’ মত ভালো কর্মকর্তা। ১৯৯৮ সালে তিনি জি থুন থানায় যান। তিনি ২৩ বছর ধরে এই কৃষি ঐতিহ্যকে উন্নত করে দেশের বৃহত্তম মাশরুম উত্পাদন জায়গা, দেশের দৃষ্টান্তমূলক গ্রাম, দেশের কৃষি শিল্পের শক্তিশালী থানায় পরিণত করেছেন।

 

ছোট থানায়, কেন তাদের এত স্বপ্ন? আজকের অনুষ্ঠানে আপনাদের নিয়ে এই দু’জন কর্মকর্তার গল্প তুলে ধরবো।

 

তিনি থানার কমিউনিস্ট পার্টি শাখার সম্পাদকের পদে এত বছর ধরে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি কীভাবে মনে এত জোর পান?

উ জিন ইন বলেন, আমি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছি, গ্রামে বড় হয়েছি। গ্রামের এই হলুদ জমি সঙ্গে আমার বিশেষ সম্পর্ক আছে। ১৯৮৭ সালে আমি থাং চুয়াংয়ে এসে থানার সিপিসি’র শাখা সম্পাদক হই। তখন থাং চুয়াংয়ে শুধু মরুভূমি ছিল, লোকজন বুনো শাকসবজি খেত। মাটির ঘরে থাকত। তা আমার মনে গভীর ছাপ ফেলে। আমার একটি ঘটনা মনে আছে। খুবই দরিদ্র একটি  গ্রাম হৌ গৌ। একটি পরিবারকে পাহাড়ের বাইরে স্থানান্তর করা প্রয়োজন। তারা পূর্বপুরুষের কবরে শ্রদ্ধা জানানোর পর, যখন পরিবারের সবার জিনিসপত্র গাড়িতে ওঠানো হয়, তখন তারা হঠাত্ হাউ মাউ করে কাঁদতে শুরু করেন! তারা নিজের জন্মস্থান ত্যাগ করছেন বাধ্য হয়ে। কারণ এখানে জীবনযাপন করা মুশকিল। তাদের মনে অনেক দুঃখ। সেই মুহূর্তের কথা আমি কখনও ভুলতে পারি না।

চীনের থাই হাং পর্বতাঞ্চলে দু’জন গ্রামীণ কর্মকর্তার কাহিনী_fororder_wu2

উ জিন ইন বলেন, আমাদের মত গ্রামের কর্মকর্তারা, যে খাবার খাই, তা কৃষকরা চাষ করে। যে বেতন পাই, তা কৃষকের দেওয়া কর থেকে আসে। আমরা জনগণের সঙ্গে থাকার সময় মনে সবচেয়ে বেশি শান্তি পাই। কৃষকের পালন করা মুরগি থেকে আমাদের খাবার ডিম আসে। কৃষকের পালন করা কুকুর, আমাদের বাসা রক্ষা করে। কৃষকরা কেন আমাদের যত্ন নিচ্ছেন? যদি আমরা সিপিসি’র কর্মকর্তা কৃষকের জন্য কিছুই না-করি, তাহলে আমাদেরকে পশুর সঙ্গেও তুলনা করা যায় না। কৃষকরা ধনী হতে না পারলে, আমার মনও স্থির হতে পারে না। এ কারণেই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে: আমার জীবন উত্সর্গ করে হলেও পাহাড়ি এলাকার জনগণের জীবনকে সুন্দর করতে হবে।

 

কর্মকর্তা চাও হুয়া লু বলেন, আজকার জি থুন থানায়, উঁচু উঁচু বিল্ডিং অনেক বেশি, সড়ক অনেক সুন্দর। তবে ২৩ বছর আগে এই ঐতিহ্যিক কৃষি থানায় একটি প্রতিষ্ঠানও ছিল না। ৩৩টি গ্রামের সব পথ ছিল মাটির। লোকজন মাটিতে খাবার খুঁজতো, কেউ কেউ নিজের বাড়িও মেরামত করতে পারত না। সত্য কথা বলতে, তখন আমিও কল্পনা করতে পারিনি যে- আমি যে থানার দায়িত্ব গ্রহণ করব, তার অবস্থা এত খারাপ!

চীনের থাই হাং পর্বতাঞ্চলে দু’জন গ্রামীণ কর্মকর্তার কাহিনী_fororder_zhao2

চাও হুয়া লু বলেন, কেন আমি গ্রামে ফিরে এসেছি। কারণ, আমাদের মত কর্মকর্তারা, যারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছি, গ্রামে বড় হয়েছি, আমার কাছে গ্রামে ফিরে কাজ করা একটি স্বপ্নের মতো বিষয়। সবসময় লোকজন আমাকে জিজ্ঞেস করে: ২৩ বছর ধরে কীভাবে মনে শক্তি পান? আমার উত্তর হল: এই পদকে ক্ষমতা মনে করলে আসলে ক্লান্তি আসবে। এই পদকে প্ল্যাটফর্ম হিসেবে দেখলে কাজ করতে আরো ভালো লাগবে। ছোট থানায় বড় ফলাফল অর্জন করা যায়। এত বছর ধরে গ্রামের উন্নয়ন, লোকজনের স্বীকৃতি, আঞ্চলিক চেহারার বিরাট পরিবর্তন, এসব দেখে আমার খুব খুশি লাগে। আমি এই জায়গার জন্য আরো বেশি কাজ করতে চাই।

 

চীনে একটি কথা আছে: মানুষ আরো ভালো জায়গায় যেতে পছন্দ করে। তা স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু উ জিন ইন এবং চাও হুয়া লু’র মত সিপিসি’র তৃণমূল পর্যায়ের কর্মকর্তারা দরিদ্র গামে ফিরে যেতে চান। তারা সারা জীবন দিয়ে গ্রামের উন্নয়নের কাজ করেছেন। সব কিছুই মানুষের জন্য। শুধু জনগণের সঙ্গে থাকলে সব কার্যক্রম শক্তিশালী হতে পারে। শুধু জনগণের সুন্দর জীবন বাস্তবায়ন করলেই কেবল তাদের সংগ্রাম তাত্পর্যপূর্ণ হতে পারে।

 

তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়, গ্রামের কাজ খুব জটিল ও কঠিন, কীভাবে আপনারা সুষ্ঠুভাবে তা সম্পন্ন করেন?

 

উ জিন ইন বলেন, জনগণের সেবা করতে চাইলে ‘চারটি না’ করতে হয়। শরীর অলস হবে না, মুখ দিয়ে বেশি খাবে না, হৃদয়ে ঘুষ নেয়ার ইচ্ছা থাকতে পারে না, জনগণের পকেট থেকে কিছু নেয়া যাবে না। আমি থাং চুয়াং থানায় আছি, আমি আমাদের তরুণ কর্মকর্তাদের ‘চারটি সঙ্গে’ বাস্তবায়নের দাবিও জানাই। তা হলো- জনগণের সঙ্গে খাওয়া, মানে কর্মকর্তারা গ্রামে থাকার সময় জনগণ যা খায়, তারাও তা খায়। মদ খাওয়া একেবারে নিষিদ্ধ। জনগণের সঙ্গে থাকা, মানে কর্মকর্তারা গ্রামের কাজ করার সময় দরিদ্র মানুষের বাসায় থাকতে হয়। জনগণের সঙ্গে কাজ করা, প্রত্যেক কর্মকর্তার নিজেই ক্ষেতের কাজ করার যন্ত্র প্রস্তুত করা, প্রতি মাসে অন্তত দশ দিন কৃষকের সঙ্গে ক্ষেতে কাজ করা। জনগণের সঙ্গে পরামর্শ করা, গ্রামের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় গ্রামের সবাই একসাথে বসে আলোচনা করা।

 

শুধু জনগণের সঙ্গে জীবনযাপন করলে ভালোভাবে জনগণকে উপলব্ধি করা যেতে পারে, জনগণের চাহিদা জানা যায়, নিজেই নিজের কাজ বুঝতে পারে। উ জিন ইন বলেন, যখন আমি সি পাও থৌ গ্রামে থাকি, তখন বৃদ্ধা সুং এবং তার তিনটি ছোট নাতি একসাথে থাকে, পরিবারে আর কেউ নেই। আমি তার অর্ধেক ছেলের মত দায়িত্ব পালন করি। তার বাড়িঘর মেরামত করা, তার জন্য ওষধু কেনা এবং বড়-ছোট সব কাজ করি। থাং চুয়াং থানায় আমি ৩০ বছরেরও বেশি সময় আছি, প্রতি বছরের অর্ধেক সময় আমি জনগণের বাসায় ও ক্ষেতে কাজ করি।

 

কর্মকর্তা চাও হুয়া লু বলেন, গ্রামের কাজ ভালোভাবে করতে চাইলে কর্মকর্তাদের পরিচালনা করতে হয়। এজন্য আমরা ‘জনগণের জন্য ডায়রি’, ‘জনগণের জন্য যা করা যায়’ ‘দারিদ্র্যবিমোচনের কাজ’ তিনটি নতুন কাঠামো উদ্ভাবন করেছি।

 

চাও হুয়া লু বলেন, ২০১৪ সালের সময় আমি শাং কুয়ান চুয়াং গ্রামের কৃষক কাও উ চিয়ে-এর বাসায় গিয়ে খোঁজ-খবর নেই। তখন আমি দেখি যে, জনগণের জীবন এত কষ্টকর হতে পারে। কাও উ চিয়ে-এর স্বামী বাইরে চাকরি করার সময় দুর্ঘটনায় অচল হয়ে পড়েন। স্বামীর চিকিত্সার জন্য এই গরিব পরিবারে আর কিছুই ছিল না। এমন সময় তার ছেলের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় হয়। কিন্তু লেখাপড়ার ফি দেওয়ার কোনো ক্ষমতা ছিল না। তখন আমি থানার কর্মকর্তাদের নিয়ে তার পরিবারের জন্য ১০ হাজার ইউয়ান প্রদান করি, আর কাও উ চিয়ে-এর জন্য স্থানীয় প্রতিষ্ঠানে একটি চাকরির ব্যবস্থা করি। এই পরিদর্শন থেকে আমি আরও জানতে পেরেছি যে, থানার কর্মকর্তাদের অবশ্যই জনগণের মধ্যে থাকতে হবে। ভালোভাবে জনগণের চাহিদা সম্পর্কে জানতে হবে।

 

চাও হুয়া লু বলেন, সিপিসি’র কর্মকর্তারা সামনে এগিয়ে গেলে সব কিছুই সহজ হতে পারে। তিনি যেটা সবচেয়ে বেশি গর্ব বোধ করেন, তা হল- তার কর্মকর্তা দলের সবাই জনগণকে মনের শীর্ষ অবস্থানে রেখেছে। যখন যেখানে প্রয়োজন হয়, সেখানে গিয়ে তারা জনগণকে সাহায্য করেন।

 

গ্রামের কাজ কঠিন কি না? হ্যাঁ, কঠিন। গ্রামের কর্মকর্তাদের ক্ষমতা কম, কিন্তু কাজ অনেক বেশি, দায়িত্বও বড়। তারা সরাসরি জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। সমস্যা সমাধানে ভুল হলে কর্মকর্তা ও জনগণের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হতে পারে।

 

গ্রামের কাজ কঠোর কি না? আসলে ততটা কঠোর নয়। যখন কর্মকর্তারা সত্যি জনসাধারণের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে মিশে যান, তখন জনগণ যেটা চান, জনগণের জন্য যেটা সবচেয়ে জরুরি, সেটা তারা সবার আগে সমাধান করেন। জনগণের আস্থা পেলে কঠোর অনুভূতি চলে যায়।

 

উ জিন ইন বলেন, যদি বলি, আমি সত্যি কিছু করতে পেরেছি, তাহলে এর ৯৯ শতাংশ গৌরব জনগণের। আমি শুধু ১ শতাংশ করেছি। সিপিসি’র চেতনা হল- জনগণের সেবা করা, সিপিসি’র সদস্য হওয়ার সময় আমি কিন্তু প্রতিশ্রুতি দিয়েছি: জনগণের সেবা করব। নিরলসভাবে চেষ্টা করব।  

 

উ জিন ইন বলেন, আমি আদর্শ নই, আমি শুধু একজন সিপিসি’র সদস্য। যদি জনগণের সেবা করতে চান, তাহলে নিশ্চয়ই জনগণের সঙ্গে থাকতে হবে।

 

চাও হুয়া লু বলেন, সত্যি কথা বলতে, গ্রামে ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আছি। আমিও চলে যাওয়ার কথা ভেবেছিলাম। আমার তিন বার পদোন্নতি হয়েছিল। তবে বিভিন্ন কারণে আমি চলে যাই নি। কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করে, এত বছর শুধু গ্রামে থাকো, তোমার কি আরো বেশি চাও না? আমি বলি, অন্যের সঙ্গে তুলনা করার দরকার নেই, আমি গ্রামে কাজ করার মাধ্যমে অনেক কিছু অর্জন করেছি।