যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সাথে চীনা বাণিজ্য বৃদ্ধির কারণ
2021-04-15 16:58:06

 

এপ্রিল ১৪: গত বছর মহামারী সত্ত্বেও ইইউ এবং চীনের মধ্যে পণ্য বাণিজ্য উভয় দিকেই বৃদ্ধি পেয়েছিল। প্রথমবারের মতো চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে ইইউর বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদারে পরিণত হয়। ইউরোস্ট্যাট এই সপ্তাহে বৈদেশিক বাণিজ্যের তথ্য প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, ২০২০ সালে ইইউ’র ২৭টি দেশ চীন থেকে ৩৮৩.৫ বিলিয়ন ইউরো মূল্যের পণ্য আমদানি করেছে, যা গত বছরের তুলনায় ৫.৬ শতাংশ বেশি। চীনে তারা রফতানি করেছে ২০২.৫বিলিয়ন ইউরো মূল্যের পণ্য, যা গত বছরের তুলনায় ২.২ শতাংশ বেশি।

 

চীন এবং ইউরোপের মধ্যে পণ্য বাণিজ্য বৃদ্ধির মূল দুটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, চীন সবার আগে কোভিড-১৯ মহামারী সফলভাবে নিয়ন্ত্রণ এবং অর্থনীতির পুনরুদ্ধার করেছে। এটি চীনকে ইউরোপীয় পণ্য আমদানি করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। একইসঙ্গে, চীনে উত্পাদিত চিকিত্সা সরবরাহ এবং ইলেকট্রনিক পণ্যগুলোও ইউরোপে অ্যান্টি-মহামারী, লকডাউন এবং হোম অফিসের জন্য জরুরি প্রয়োনজীয় পণ্য হিসেবে রপ্তানি হয়।

 

দ্বিতীয়ত, চীন-ইইউ সম্পর্ক সামষ্টিকভাবে পারস্পরিক কল্যাণের দিকে এগিয়ে চলছে। উভয়েই বহুপক্ষবাদ ও অবাধ বাণিজ্যের সমর্থক। সমতা এবং পারস্পরিক সহায়তার নীতির অধীনে চীন ও ইউরোপ গত বছরের সেপ্টেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘চীন-ইইউ ভৌগলিক সূচক চুক্তি’ স্বাক্ষর করে এবং বছরের শেষ দিকে সময় মতো এই চুক্তির আলোচনা সমাপ্ত করে।

 

এগুলো বাজারের আত্মবিশ্বাসকে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করেছে। অশান্ত বিশ্বে উদ্যোক্তা এবং বিনিয়োগকারীদের আশ্বাস প্রদান করেছে। এবং চীন ও ইউরোপের মধ্যে পারস্পরিক বিনিয়োগের জন্য বৃহত্তর বাজারের প্রবেশাধিকার, উচ্চতর ব্যবসায়িক পরিবেশ, এবং একটি শক্তিশালী ব্যবসায়ের পরিবেশ তৈরি করেছে। এই বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় ঠিক চীনা বসন্ত উত্সবের সপ্তাহে  ইউরোপীয় পণ্যগুলো চীনা জনগণের টেবিলগুলোকে সমৃদ্ধ করেছে।  

 

জার্মান বিয়ার প্রস্তুতকারি সংস্থা পাওলনার চীনা নববর্ষের বাজার দখল করেছে। স্নাইডার ইলেকট্রিকের গ্লোবাল এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ইয়িন ঝেং বলেছেন যে, ভবিষ্যতে ইলেকট্রিকের শিল্প চেইন এবং চীনের স্থানীয় সরবরাহ চেইনের পরিকল্পনাকে আরও জোরদার করতে হবে।

 

চীন-ইউরোপীয় বাণিজ্য বেড়েছে। এবং গত বছর ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২০২বিলিয়ন ইউরো মূল্যের পণ্য আমদানি করেছে, এটি গত বছরের তুলনায় ১৩.২শতাংশ কম। যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি হয়েছে ৩৫৩বিলিয়ন ইউরো মূল্যের পণ্য, যা আগের তুলনায় ৮.২শতাংশ কম।

 

ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য হ্রাসের দুটি প্রধান কারণ রয়েছে। প্রথমটি মহামারীটির বিরুদ্ধে মার্কিন লড়াইয়ে বিশৃঙ্খলা। মহামারী অর্থনীতিকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে। ২০২০ সালে মার্কিন অর্থনীতি ৩.৫ শতাংশ হ্রাস পায়। যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে সবচেয়ে বড় মন্দা। অর্থনৈতিক মন্দা বেকার মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে।

 

চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য-বিরোধ ও চীন-মার্কিন শীতল সম্পর্ক সত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের চীনা চেম্বার অব কমার্স  সম্প্রতি জানায়, ৬৩ শতাংশ মার্কিন শিল্পপ্রতিষ্ঠান চীনে তাদের পুঁজি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি, চীনের ব্যবসায়িক পরিবেশ নিয়ে সন্তোষও প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের চেম্বার অব কমার্স। তাদের অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান চীনে পুঁজি বাড়াতে আগ্রহী।

বৈদেশিক পুঁজি আকর্ষণে চীনের কী কী সুবিধা আছে? এ সম্পর্কিত আলোচনায় ডক্টর ইয়ে বলেন, এই ক্ষেত্রে চীনের কতগুলো বড় সুবিধা রয়েছে। সুবিধাগুলো হচ্ছে:

প্রথমত, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব এগিয়ে চলেছে। নতুন প্রজন্মের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার বাড়ছে এবং শ্রমের মূল্য তুলনামূলকভাবে কম চীনে।

দ্বিতীয়ত, মানবসম্পদের সুবিধা। চীনা মানবসম্পদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার সূচক বৈশ্বিক অবস্থা থেকে দেখা গেছে যে, এটি ২০০০ সালের ৩২তম স্থান থেকে উন্নীত হয়ে ২০১৮ সালের ১৩তম স্থানে ছিল। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে চীন। আর মানবসম্পদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার শক্তি ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের ৮০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

 

তৃতীয়ত, শিল্প সমন্বয়ের সুবিধা। চীন হচ্ছে জাতিসংঘ চিহ্নিত এমন একটি দেশ, যেখানে শিল্পব্যবস্থা সুসংহত। (ওয়াং হাইমান/এনাম/ছাই)